লভ্যাংশ দেওয়ার নামে আত্মীয়স্বজন, পরিচিতজন ও ব্যবসায়িক অংশীদারের কাছ থেকে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেন হাসান ছালাম। সেই সঙ্গে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকেও ঋণ নেন। দুই ক্ষেত্রেই শুরুতে লভ্যাংশ ও কিস্তি দিলেও পরে টালবাহানা করেন। এক পর্যায়ে মামলা হয়। আদালত যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। কিন্তু পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন। সর্বশেষ মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে ইউরোপে পালানোর চেষ্টা করছিলেন তিনি।

এভাবে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হাসান ছালামকে গ্রেপ্তারের পর গতকাল মঙ্গলবার এসব তথ্য জানায় র‌্যাব। এর আগে সোমবার রাজধানীর মতিঝিল এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-৩। গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, যৌথ মালিকানার ভিত্তিতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতেন হাসান ছালাম। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- জেমস সুপারশপ লিমিটেড, জেমস অ্যান্ড জুয়েলার্স, মতিঝিলে মা টেলিকম, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে উজির আলী ট্রাভেলস, কুমিল্লার কান্দিরপাড়ে ডায়মন্ড গ্যালারি লিমিটেড, গুলিস্তানে জামিল কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড, মালিবাগ টুইন টাওয়ারে এশিয়ান স্কাই শপ, বারিধারায় জেমস গ্রুপ, জেমস অ্যাগ্রো ফুড লিমিটেড, জেমস গ্যালারি লিমিটেড ও জেমস রিয়েল এস্টেট লিমিটেড।

অল্প সময়ে অধিক মুনাফার আশায় হাসান একই সময়ে একাধিক প্রতিষ্ঠানে যৌথ মালিকানার ভিত্তিতে বিনিয়োগ করেন। ভালো মুনাফা পাওয়ায় বিভিন্নজন থেকে হারে মাসিক লভ্যাংশ দেওয়ার কথা বলে কোটি কোটি টাকা নেন। কিন্তু তাদের লভ্যাংশ দিতে পারেননি। তাগাদা দিলে পাওনাদারকে চেক দিতেন। কিন্তু অ্যাকাউন্টে টাকা না থাকায় তা ডিজঅনার হতো। এক পর্যায়ে পাওনাদাররা আদালতে চেক জালিয়াতির মামলা করেন।

অধিনায়ক জানান, বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় ৫ কোটি টাকা ঋণ নেন হাসান ছালাম। প্রথম দিকে কয়েকটি মাসিক কিস্তি পরিশোধ করে পরে তা বন্ধ করে দেন। নির্দিষ্ট সময় পার হওয়ার পরও ঋণ পরিশোধ না করায় প্রতিষ্ঠানগুলো মামলা করে। বিচারক টাকার বিষয়ে মীমাংসার একাধিক সুযোগ দিলেও তিনি আদালতে হাজির হননি। এমনকি চলমান মামলাগুলোর শুনানিতেও যেতেন না। কৌশলে এসব ঋণের দায় এড়ানোর জন্য হাসান বেশ কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও দোকান বিক্রি করে পাওয়া অর্থ দিয়ে কুমিল্লা এবং ময়মনসিংহে জমি কেনেন। এক ভুক্তভোগীর করা মামলায় গত বছর আদালত তাঁকে যাবজ্জীবন দেন ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।

তখন হাসান পান্থপথে তাঁর আলিশান ফ্ল্যাট বিক্রি করে ডেমরা এলাকায় বন্ধুর বাসায় গা ঢাকা দেন।