দেশের বিদ্যমান শিক্ষাকাঠামো মুখস্থধর্মী রোবটিক মানুষ তৈরি করে। নাগরিকদের মধ্যপ্রাচ্য উপযোগী শ্রমিক বানায়। অন্যদিকে দেশের পাচার হওয়া টাকায় ক্ষমতাসীন, প্রভাবশালীদের ছেলেমেয়েরা বিদেশে পড়ে এবং সেখানে জীবনযাপন করে। এ ছাড়াও শিক্ষাব্যবস্থায় নানা বিভাজন এবং অসমান সুযোগ-সুবিধা বিদ্যমান। এভাবে শিক্ষাব্যবস্থায় ব্যাপক বৈষম্য পরিলক্ষিত হয়। শিক্ষাব্যবস্থাকে সবার জন্য অবারিত এবং সমান সুযোগ সুবিধাসম্পন্ন করতে হবে।

বুধবার দুপুর ১২টায় রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট ঢাকা মহানগর শাখার আয়োজনে ঢাকার বিভিন্ন কলেজের নবীন শিক্ষার্থীদের নিয়ে আয়োজিত 'নবীনবরণ উৎসব' অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথা বলেন।

সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট মহাগর শাখার সভাপতি অনিক কুমার দাসের সভাপতিত্বে সভায় দৈনিক সমকাল পত্রিকার উপদেষ্টা সম্পাদক আবু সাঈদ খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজীম উদ্দিন খান, বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য নিখিল দাস এবং সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি মুক্তা বাড়ৈ বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন কলেজের ছাত্রছাত্রীরা উপস্থিত ছিলেন।

আবু সাঈদ খান বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে এই ভুখণ্ডের স্বাধীনতা অর্জিত হলেও অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও শিক্ষার স্বাধীনতা আমাদের মেলেনি। শিক্ষাব্যবস্থায় ব্যাপক বৈষম্য পরিলক্ষিত হয়। শহরের তুলনায় মফস্বলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পর্যাপ্ত শিক্ষক, সুযোগসুবিধা নেই। সাত কলেজ ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সমান সুযোগসুবিধা পায় না। শিক্ষায় রয়েছে আলিয়া মাদ্রাসা, কিন্ডারগার্টেনসহ নানা বিভাজন। শিক্ষাব্যবস্থাকে সবার জন্য অবারিত এবং সমান সুযোগ সুবিধাসম্পন্ন করতে হবে। কলেজগুলোকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করতে হবে যাতে কলেজের শিক্ষার্থীরাও ভালো শিক্ষকের পাঠদানের গ্রহণের,গবেষণার সুযোগ পান।

তিনি আরও বলেন, মাধ্যমিক পর্যন্ত অভিন্ন শিক্ষাব্যবস্থা চালু করতে হবে। সমাজের সব শ্রেণির মানুষ একই জায়গায় পড়বে। এভাবে সম্মিলিতভাবে জাতি এগিয়ে যাবে। দেশে দুর্নীতি বন্ধ করা হলে বিদ্যমান বাজেটে এটি করা সম্ভব বলে তিনি মন্তব্য করেন।

তানজীম উদ্দিন খান বলেন, শিক্ষাকাঠামো আমাদের সৃষ্টিশীল করে না। একটি মুখস্থ রোবট বানায়। এখন শিক্ষাব্যবস্থা এমন যেন মধ্যপ্রাচ্যের শ্রমিক হিসেবে কাজ করার জন্যই আমাদের তৈরি করা হচ্ছে। যারা ক্ষমতাসীন নেতা তাদের ছেলেমেয়েরা এ দেশে পড়েন না, তারা বিদেশে পড়াশোনা করেন। পাচার হওয়া টাকায় তারা বিদেশের মাটিতে জীবনযাপন করেন। এটাও একটি উপনিবেশবাদ। কারণ আমরা বিদেশি আত্মার শাসনাধীন। যাদের মনন ও মগজে বিদেশ। আমাদের এ সবের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে হবে।

সভা শেষে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও নাটক প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়।