বাড়ছে জ্বালানি তেল, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে খাবারের দামও। ফলে পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে, বাংলাদেশে এক বেলার খাবারের সংস্থান করার মতো সামর্থ্য নেই অনেকের। আর পুষ্টি নিরাপত্তা পড়েছে হুমকিতে। এ অবস্থায় সব স্তরে অধিকারভিত্তিক খাদ্য ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। পুষ্টি নিরাপত্তা ও ক্ষুধা মোকাবেলায় জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে নীতিনির্ধারকদের। 

রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটশনে আজ বুধবার ‘গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স (বিশ্ব ক্ষুধা সূচক) ২০২২’-এর প্রকাশিত প্রতিবেদনের ওপর আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। আয়ারল্যান্ডভিত্তিক সংস্থা কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইড, জার্মানভিত্তিক ওয়েল্ট হাঙ্গার হিলফ, হেলভেটাস ও অ্যাক্টেড যৌথভাবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। গত বছরের অক্টোবরে অনলাইন ইভেন্টের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী এ হাঙ্গার ইনডেপ প্রকাশ করা হয়। ওই সময় গণমাধ্যমে ক্ষুধা সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান উঠে আসে। এবারই প্রথমবারের মতো ঢাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষুধা সূচক প্রকাশ করা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ক্ষুধা মেটানোর সক্ষমতার দিক থেকে ১২১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৮৪তম। বাংলাদেশ বর্তমানে ‘মাঝারি মাত্রার’ ক্ষুধায় আক্রান্ত দেশ। চলতি বছরের ক্ষুধা সূচকে ১০০ স্কোরের মধ্যে বাংলাদেশ পেয়েছে ১৯ দশমিক ৬। দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দুই দেশ ভারত ও পাকিস্তান ক্ষুধা মেটানোর সক্ষমতায় বাংলাদেশের চেয়ে পিছিয়ে।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি কামরুল ইসলাম বলেন, ‘দেশে কৃষিজমি কমেছে। এরপরও দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে। খাদ্যনিরাপত্তাকে গুরুত্ব দিয়ে উৎপাদন বাড়াতে জোর দেওয়া হয়েছে। তবে এখনও সবার জন্য পুষ্টি নিশ্চিত করা যায়নি। এখন দরকার পুষ্টি নিশ্চিত করা।’

কনসার্ন ওয়ার্ল্ড ওয়াইডের এ দেশীয় পরিচালক মনীশ কুমার আগরওয়াল বলেন, ‘বাংলাদেশ খাদ্যনিরাপত্তাসহ বেশ কিছু ক্ষেত্রে যথেষ্ট উন্নতি করেছে। কিন্তু কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েই গেছে। ক্রমবর্ধমান মূল্যবৃদ্ধির কারণে মৌলিক খাবারের সংস্থানও অনেক দরিদ্র পরিবারের নাগালের বাইরে চলে গেছে।’

ওয়েলথ হাঙ্গার হিলথে বাংলাদেশ এর হেড অব মিশন ফাতিমা আজিজোভা বলেন, ‘সাম্প্রতিক যুদ্ধ, মহামারি ও জলবায়ু পরিবর্তন লাখ লাখ মানুষের আর্থসামাজিক অবনতির মূল কারণ। বাংলাদেশের ক্ষুধা সূচক অতীতের তুলনায় ভালো, উদ্বেগজনক মাত্রা থেকে মাঝারি মাত্রা হয়েছে। তবে এটি খাদ্য ব্যবস্থা, দারিদ্র ও ক্ষুধা দূর করার জন্য যথেষ্ট নয়। সব স্তরে অধিকারভিত্তিক খাদ্য ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। জনগণকে কাজে লাগাতে হবে। তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে নেতৃত্বকে আর শক্তিশালী করতে হবে।’

হেলভেটাস বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর শামীম আহমেদ বলেন, ‘বাংলাদেশে খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি নিয়ে চাপা উদ্বেগ আছে। এ উদ্বেগ নিরসনে দরকার অন্তর্ভুক্তিমূলক শাসন ও জবাবদিহিতা।’

অনুষ্ঠানে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস ও বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি পরিষদের (বিএনএনসি) মহাপরিচালক হাসান শাহরিয়ার কবির বক্তব্য দেন।

গত বছর ক্ষুধা সূচকে এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের ওপরে ছিল শ্রীলঙ্কা ও নেপাল। ১৩ দশমিক ৬ স্কোর নিয়ে শ্রীলঙ্কার অবস্থান ৬৪তম। এরপর ১৯ দশমিক ১ স্কোর নিয়ে ৮১তম নেপাল। দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দুই দেশ ভারত ও পাকিস্তান ক্ষুধা মেটানোর সক্ষমতায় বাংলাদেশের তুলনায় পিছিয়ে। দেশ দুটির অবস্থান যথাক্রমে ১০৭ ও ৯৯তম।