বিতর্কের মধ্যে এবার ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস এবং সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের দুটি বই প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। শুক্রবার এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির জন্য প্রণীত ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের বইয়ের কিছু অধ্যায়ে প্রয়োজনীয় সংশোধন করা হবে। তবে এই বইগুলোর অন্য সব অধ্যায়ের পাঠদান অব্যাহত থাকবে। বই দুটিতে কী কী সংশোধনী আনা হবে, তা শিগগির শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে জানানো হবে।

এনসিটিবি সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান বলেছেন, ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে দুটি অংশ রয়েছে; আর বিজ্ঞান বইয়েও দুটি করে অংশ রয়েছে। একটি অনুশীলন বই, আরেকটি অনুসন্ধানী পাঠ। ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের 'অনুসন্ধানী পাঠ' স্থগিত করা হয়েছে। আর 'অনুশীলন বইয়ের' কিছু কিছু অধ্যায়ের কিছু জায়গায় সংশোধন করে স্কুলগুলোতে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। এগুলো নিয়ে সমালোচনা হচ্ছিল, তাই এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

এদিকে শুক্রবার চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলায় এক উঠান বৈঠকে এ বিষয়ে কথা বলেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনিও। তিনি বলেন, আমরা ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন দুটি বই প্রণয়ন করে দেব। এখন থেকে আগের বই দুটি পড়ানো বন্ধ থাকবে। ওটা পড়ার দরকার নেই। বইয়ে ইসলামবিরোধী কিছুই নেই, তারপরও আমরা মানুষের কথা শুনি। মানুষের মনে কষ্ট লাগলে, দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকলে আমরা তাকে সম্মান দিতে চাই। যে মিথ্যাচার করছে, তাকে প্রশ্রয় দেওয়া ঠিক হবে না। নৌকা ও আওয়ামী লীগের কর্মীরা কখনও ইসলামবিরোধী কোনো কাজ করতে পারে না।

পরীক্ষা ও মুখস্থনির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আসতেই নতুন শিক্ষাক্রমে যাওয়ার কথা বলছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর অংশ হিসেবে এ বছর প্রাথমিক স্কুলে প্রথম শ্রেণি এবং মাধ্যমিকে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রমের পরীক্ষামূলক বইয়ের পাঠদান শুরু হয়েছে। আগামী বছর তা শুরু হবে দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে। এরপর ২০২৫ সালে পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতেও নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে।

নতুন শিক্ষাক্রমের পরীক্ষামূলক বই নিয়ে একটি 'চিহ্নিত গোষ্ঠী' অপপ্রচারে নেমেছে বলে বৃহস্পতিবার এক অনুষ্ঠানে মন্তব্য করেছিলেন শিক্ষামন্ত্রী। এসব পাঠ্যপুস্তক রচনার সঙ্গে যেসব লেখক, শিক্ষক, শিক্ষাবিদ-বিশেষজ্ঞরা জড়িত, তাদের 'কদর্য ভাষায়, কুৎসিতভাবে ব্যক্তিগত আক্রমণ করা হচ্ছে এবং হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

নতুন শিক্ষাক্রমের জন্য ছাপানো পাঠ্যপুস্তকের ভুল সংশোধনে এবং কেন ভুল হলো তা তদন্তে ইতোমধ্যে দুটি কমিটি গঠন করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ২০২৩ শিক্ষাবর্ষের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির জন্য প্রণীত পাঠ্যপুস্তকের অসংগতি, ভুল বা ত্রুটি চিহ্নিত করে তা সংশোধনে প্রয়োজনীয় সুপারিশের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) পরিচালক আব্দুল হালিমকে আহ্বায়ক করে গঠিত কমিটিতে সদস্য সচিব হিসেবে আছেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের উপপরিচালক (মাধ্যমিক) মো. আজিজ উদ্দিন।