- বাংলাদেশ
- পাতে পড়ে না মাছও
পাতে পড়ে না মাছও

প্রতীকী ছবি
নিত্যপণ্যের বাজারে আরও এক দফা বেড়েছে ব্রয়লার ও গরুর মাংসের দাম। দফায় দফায় আমিষ জাতীয় খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় ক্রেতার ভিড় বেড়েছে মাছের দোকানে। আর এতেই যেন তেতে উঠেছে মাছের বাজার। গত ৮ থেকে ১০ দিনের ব্যবধানে প্রায় সব ধরনের মাছের দাম বেড়েছে কেজিতে ২০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত। ফলে মাছ-মাংস স্বল্প আয়ের ক্রেতাদের একপ্রকার নাগালের বাইরে।
গতকাল শুক্রবার সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মাছ কিনতে এসেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী মাহবুবুর রহমান। তেলাপিয়া মাছের কেজি ২৪০ টাকা শুনে যেন কপালে চোখ উঠল তাঁর।
মাছ বিক্রেতাকে তিনি বলেন, 'আচ্ছা ভাই বলেন তো, মাছ উৎপাদনে কী এমন খরচ বেড়েছে, তেলাপিয়ার দাম ২৪০ টাকা হতে হবে?' দর কষাকষির মাধ্যমে পরে তিনি দুই কেজি তেলাপিয়া কিনেছেন ৪৪০ টাকায়। সেই হিসাবে প্রতি কেজির দাম পড়ছে ২২০ টাকা।
মাছ কেনার পর তিনি সমকালকে বলেন, বাজারে জিনিসপত্রের যে হারে দাম বাড়ছে তাতে ভবিষ্যতে মধ্যবিত্তদেরও ক্রয় তালিকা থেকে মাছ-মাংস বাদ পড়বে।
তেজকুনিপাড়ায় একটি মুরগির দোকানে ব্রয়লার মুরগি কিনতে এসে একপ্রকার ক্ষোভ ঝাড়লেন পোশাক কারখানার শ্রমিক জাহানারা বেগম। বলেন, 'আমরা গরিব মানুষ। কপালে গরুর মাংস জোটে না। সপ্তাহে একদিন ছুটি পাই। ওই দিন একটু ভালোমন্দ খাওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু ব্রয়লারের দামও চায় ২২০ টাকা। দুই সপ্তাহ আগেও ১৬০ টাকায় কিনেছি।' এই ক্রেতাও দরকষাকষি করে ২১০ টাকা দরে দেড় কেজি ব্রয়লার মুরগি কিনেছেন।
খাদ্যের দাম ও সরবরাহ সংকটের অজুহাতে সপ্তাহ দুয়েক ধরে ব্রয়লার মুরগির দাম বাড়ার তালিকায় রয়েছে। কয়েক দফায় বেড়ে ব্রয়লারের দাম এখন ২০০ টাকা ছাড়াল। বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার ১৯০ থেকে ২০০ টাকায় পাওয়া গেলেও পাড়া-মহল্লায় কিনতে লাগছে ২০০ থেকে ২১০ টাকা। ব্রয়লারের সঙ্গে বেড়েছে সোনালি জাতের মুরগির দাম। প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৯০ থেকে ৩১০ টাকায়। এ ছাড়া দেশি মুরগি কিনতে ক্রেতাকে কেজিপ্রতি গুনতে হবে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা। মুরগির পাশাপাশি বেড়েছে ডিমের দাম। প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা।
বেশ কয়েক মাস স্থির থাকার পর এবার বেড়েছে গরুর মাংসের দাম। ১০ থেকে ১৫ দিন আগে গরুর মাংসের কেজি ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকায় কেনা গেছে। তবে এখন ৭০০ টাকার কমে পাওয়া যাচ্ছে না। কোথাও কোথাও ৭২০ টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে। খাসির মাংসের দাম বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ১০০ টাকায়।
বিশেষ করে ডিম-মুরগির দাম বাড়ার কারণে বেশিরভাগ স্বল্প ও মধ্যবিত্ত ভিড় করছেন মাছের বাজারে। এতেই যেন আগুন ঝরছে মাছের বাজারে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় সব ধরনের মাছের দাম বেড়েছে।
সাধারণত কম আয়ের মানুষের ভরসা তেলাপিয়া, পাঙাশ ও চাষের কই মাছ। কিন্তু এ তিন জাতের মাছের দাম বেড়েছে কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকার মতো। এর মধ্যে প্রতিকেজি তেলাপিয়া ২০০ থেকে ২২০, পাঙাশ ১৮০ থেকে ২০০ এবং চাষের কই ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এ ছাড়া গত সপ্তাহের তুলনায় ৫০ টাকা বেড়ে রুই ও কাতল মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে যথাক্রমে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা ও ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা।
দামি মাছের মধ্যে কেজিতে ৫০ টাকা বেড়ে পাবদা ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, চিংড়ি ৫৫০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এভাবে কেজিতে ৪০ থেকে ৫০ টাকা বেড়েছে অন্যান্য মাছের দাম।
দাম বাড়ার চিত্র দেখা গেছে সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) প্রতিবেদনেও। সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরের ব্যবধানে ব্রয়লারের দাম ৩১ শতাংশ, ডিমের দাম ২৮ শতাংশ, গরুর মাংসের দাম ১৮ শতাংশ ও খাসির মাংসের দাম প্রায় ২৪ শতাংশ বেড়েছে। অন্যদিকে রুই মাছের দাম ৩৩ ও ইলিশের দাম প্রায় ৬ শতাংশ বেড়েছে।
খুচরা মুরগির ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, পাইকারি ব্যবসায়ী ও খামারিরা খাদ্যের দাম এবং সরবরাহের খরচ বৃদ্ধির অজুহাতে মুরগির দাম বাড়াচ্ছেন। ফলে খুচরা ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়েছেন। বাধ্য হয়ে তাঁদেরও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। কিন্তু এতে তাঁদের বিক্রি আগের তুলনায় কমে গেছে। আর মাছ বিক্রেতারা বলছেন, মাছের সরবরাহ কম। আগের মতো ট্রাকে ট্রাকে মাছ আসে না বাজারে। এ কারণে দাম বাড়তি।
মন্তব্য করুন