- বাংলাদেশ
- সারাদেশের কৃষি কর্তাদের ময়মনসিংহে যেতে নির্দেশ
বাকৃবিতে কৃষিবিদ দিবসের সেমিনার
সারাদেশের কৃষি কর্তাদের ময়মনসিংহে যেতে নির্দেশ

ছবি: ফাইল
কৃষিবিদ দিবস উপলক্ষে আগামীকাল সোমবার ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে সেমিনারের আয়োজন করেছে গণতান্ত্রিক শিক্ষক ফোরাম। প্রতিবছর রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন (কেআইবি) ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) নানা আয়োজনে পালিত হয় দিবসটি। এবার শিক্ষক ফোরামের অনুষ্ঠান ঘিরে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। কারণ, ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে সারাদেশের কৃষি কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। সংশ্নিষ্টরা বলছেন, কেআইবির দু'পক্ষের দ্বন্দ্বের জেরে এ আদেশ জারি হয়েছে। এতে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা রয়েছেন অস্বস্তিতে।
নির্দেশনা অনুযায়ী মন্ত্রণালয়ের সংস্থাগুলোও মাঠ পর্যায়ে চিঠি পাঠিয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, কৃষিবিদদের মধ্যে নানা বিষয়ে কোন্দল রয়েছে। এ অবস্থায় মন্ত্রণালয়ের ওই নির্দেশনা যেন আগুনে ঘি ঢেলেছে। অফিস খোলার দিন একটি সংগঠনের অনুষ্ঠানে যেতে কর্মকর্তাদের নির্দেশনা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ।
সারাদেশে প্রায় ৪০ হাজার কৃষিবিদ আছেন। তাঁদের অনেকেই কৃষি মন্ত্রণালয়সহ নানা অধিদপ্তর ও ইনস্টিটিউটে কর্মরত। কৃষিবিদ দিবসে কেআইবি প্রতিবছরের মতো এবারও নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। পেশাদার এ সংগঠন পরিচালনা নিয়ে দুটি গ্রুপ দ্বন্দ্বে জড়িয়ে আছে।
জানা যায়, কেআইবির ২০১৭-১৮ কার্যনির্বাহী কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে চার বছর আগে। দুই বছরের সেই কমিটি গড়িয়েছে ছয় বছর। ২০১৮ সালের ২৩ নভেম্বর ২০১৯-২০ কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। ভুয়া ভোটার অন্তর্ভুক্তির অভিযোগ এনে এক কৃষিবিদ আদালতে যান। এতে ভোটের আগের দিন উচ্চ আদালতের আদেশে ওই নির্বাচন স্থগিত হওয়ায় এ নিয়ে মামলা-পাল্টা মামলাও চলে। এর মাঝেই সম্প্রতি কমিটি বাতিল করে প্রশাসক নিয়োগে সমাজসেবা অধিদপ্তরকে নির্দেশনা দেন হাইকোর্ট। তবে কেআইবির দপ্তর সম্পাদক মিজানুর রহমানের দাবি, প্রশাসক নিয়োগের সেই নির্দেশনায়ও স্থগিতাদেশ রয়েছে।
বাকৃবির গণতান্ত্রিক শিক্ষক ফোরামও দুই গ্রুপে বিভক্ত। গত বছর সেখানকার কৃষিবিদ দিবসের অনুষ্ঠানে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এবারের অনুষ্ঠানে উপস্থিতি নিশ্চিত করতে কৌশলে কৃষি মন্ত্রণালয়ের শরণাপন্ন হয় গণতান্ত্রিক শিক্ষক ফোরাম। ৭ ফেব্রুয়ারি সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক ড. আবু হাদী নূর আলী খান কৃষি মন্ত্রণালয়ের কাছে একটি আবেদন করেন। তাতে তিনি ওই সেমিনারে মন্ত্রণালয়ে কর্মরত কৃষি কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেন।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে ৮ ফেব্রুয়ারি কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন-১ শাখা থেকে মন্ত্রণালয়ের অধিভুক্ত কৃষি কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিতে ব্যবস্থা নিতে চিঠি জারি হয়। সিনিয়র সহকারী সচিব শেখ হাফিজুর রহমান স্বাক্ষরিত ওই চিঠি কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, কৃষি গবেষণা কাউন্সিল, কৃষি বিপণন অধিদপ্তর, কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট, কৃষি তথ্য সার্ভিসসহ ১৭টি বড় সংস্থায় পাঠানো হয়।
এর পর গত বৃহস্পতিবার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নির্দেশনা দেয়। মহাপরিচালকের পক্ষে ওই সংস্থার প্রশাসন ও অর্থ উইংয়ের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) জয়নাল আবেদীন স্বাক্ষরিত চিঠিতে সারাদেশের কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, সব জেলার উপপরিচালক ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের বাকৃবির সেমিনারে উপস্থিত থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অন্য সব দপ্তর থেকেও কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এতে মাঠ পর্যায়ের অনেকে বিপাকে পড়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, সাধারণত সরকারি অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য তাঁরা নানা নির্দেশনা পান। কিন্তু এবারই প্রথম একটি বেসরকারি সংগঠনের অনুষ্ঠানে যেতে নির্দেশনা পেয়েছি। তাতে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে যাতায়াত ভাড়াসহ আনুষঙ্গিক খরচের ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। এ নিয়ে আমরা অস্বস্তির মধ্যে আছি।
এ বিষয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব শেখ হাফিজুর রহমান বলেন, সেমিনারে থাকতে অনুরোধ করেছি। যাঁরা আগ্রহী তাঁরা যাবেন, এখানে জোর করা হচ্ছে না।
মন্তব্য করুন