
সময়টা সেপ্টেম্বর ১৯৫৭, কেমব্রিজে গিয়ে প্রথমবারের মতো রেহমান সোবহানকে জানার সুযোগ হয়। এর কিছুদিন আগেই তিনি কেমব্র্রিজে পড়াশোনার পাট শেষ করে দেশে ফিরে গেছেন। যাঁদের কাছে আমি রেহমান সোবহানের কথা শুনেছি, তাঁরা প্রত্যেকে নিজ নিজ ক্ষেত্রে অত্যন্ত বিখ্যাত মানুষ। প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জামাল নজরুল ইসলাম, পরবর্তী সময়ে পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসের নামজাদা আমলা হারুন অর রশিদ। আগের বছর রেহমান সোবহানের সঙ্গে কেমব্র্রিজ থেকে আরও যাঁরা বের হয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন অমর্ত্য সেন, মাহবুব উল হক, জগদীশ ভগবতী, মনমোহন সিং প্রমুখ।
আমি কেমব্র্রিজের সেইন্ট জন কলেজে ভর্তি হয়েছিলাম। পরবর্তী সময়ে রেহমান সোবহানের সঙ্গে আমার বেশ ক'বার দেখা হয়। প্রথমবার সম্ভবত ১৯৬০ সালে। এরপর ৭১ সালে, যুক্তরাষ্ট্রে, ওয়াশিংটন ডিসিতে তাঁর সঙ্গে দেখা হয়। তিনি তখন একের পর এক মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশের পক্ষে জনমত সৃষ্টির জন্য অকল্পনীয় পরিশ্রম করে চলেছেন। শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ই নয়, মার্কিন রাজনীতিক, বুদ্ধিজীবী বলয়েও তিনি বাংলাদেশের পক্ষে অভিমত সৃষ্টিতে ছিলেন নিরলস। সেই সময়টায় তাঁকে আমার অত্যন্ত আবেগি, অনুভূতিপ্রবণ মানুষ মনে হতো। একই সঙ্গে একজন বীর যোদ্ধাকেও তাঁর মাঝে দেখতে পেতাম। এমন অকপটে দুঃসাহসী সব কথা বলতেন যেন তাঁর হারানোর কিছুই নেই। এমন ভাবনা-পরিকল্পনাময় একজন মানুষ যে আমাদেরই একজন, সেটা ভাবতেই গর্ব হতো। আজকের এ অনুষ্ঠান নতুন প্রজন্মের কাছে বার্তা। রেহমান সোবহানের কাজ পাবলিক পলিসি মেকিং বা জাতীয় নীতিনির্ধারণ, দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন, অর্থনৈতিক অন্যায্যতার বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থানের উদ্যোগগুলো গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে।
আজকের অনুষ্ঠানে আমি তাঁর আজীবনলব্ধ অভিজ্ঞতার প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি। যে অভিজ্ঞতা দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাজে আসবে। আজ আমি তাঁর সেই আদর্শঋদ্ধ অন্তরের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি, যে অন্তর এক অতুলনীয় বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের চালিকা। বিআইডিএস থেকে অব্যাহতি নেওয়ার পর রেহমান সোবহান তাঁর লেখালেখিতে আরও নিবেদিত হয়ে পড়েন এবং অবিরত প্রকাশিত হতে থাকে তাঁর গবেষণালব্ধ, সমৃদ্ধ গ্রন্থমালা; যেখানে সাম্যের কথা, মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির কথা, অন্যায্যতার বিরুদ্ধকথা অকাট্য যুক্তি ও পরিকল্পনাসহকারে উপস্থাপিত হয়েছে, জাতির ভবিষ্যৎ নির্মাণে অবদান রেখেছে। তাঁর তুলনামূলক সাম্প্র্রতিক রচনাগুলোয় গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার বিচ্যুতি, অপশাসন, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দূরদর্শিতার অভাব, রাষ্ট্র হিসেবে লক্ষ্যে পৌঁছাতে না পারার পেছনের কারণগুলোয় আলোকপাত করা হয়েছে। আজও তিনি লিখে চলেছেন, আদর্শে অবিচল। এখনও এক লড়াকু তরুণ ছাড়া তাঁকে আর কিছু মনে হয় না। প্রকৃতি তাঁকে সুস্থ রাখুক, দীর্ঘায়ু দান করুক। যেন আরও বহুকাল আমাদের শক্তি ও সাহসের উৎস এ মানুষটিকে কাছে পাই। তাঁর সম্মানার্থে একটিবার দাঁড়িয়ে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করতে আমি সবার কাছে বিনীত অনুরোধ করছি।
এম সাইদুজ্জামান
সাবেক অর্থমন্ত্রী
আমি কেমব্র্রিজের সেইন্ট জন কলেজে ভর্তি হয়েছিলাম। পরবর্তী সময়ে রেহমান সোবহানের সঙ্গে আমার বেশ ক'বার দেখা হয়। প্রথমবার সম্ভবত ১৯৬০ সালে। এরপর ৭১ সালে, যুক্তরাষ্ট্রে, ওয়াশিংটন ডিসিতে তাঁর সঙ্গে দেখা হয়। তিনি তখন একের পর এক মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশের পক্ষে জনমত সৃষ্টির জন্য অকল্পনীয় পরিশ্রম করে চলেছেন। শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ই নয়, মার্কিন রাজনীতিক, বুদ্ধিজীবী বলয়েও তিনি বাংলাদেশের পক্ষে অভিমত সৃষ্টিতে ছিলেন নিরলস। সেই সময়টায় তাঁকে আমার অত্যন্ত আবেগি, অনুভূতিপ্রবণ মানুষ মনে হতো। একই সঙ্গে একজন বীর যোদ্ধাকেও তাঁর মাঝে দেখতে পেতাম। এমন অকপটে দুঃসাহসী সব কথা বলতেন যেন তাঁর হারানোর কিছুই নেই। এমন ভাবনা-পরিকল্পনাময় একজন মানুষ যে আমাদেরই একজন, সেটা ভাবতেই গর্ব হতো। আজকের এ অনুষ্ঠান নতুন প্রজন্মের কাছে বার্তা। রেহমান সোবহানের কাজ পাবলিক পলিসি মেকিং বা জাতীয় নীতিনির্ধারণ, দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন, অর্থনৈতিক অন্যায্যতার বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থানের উদ্যোগগুলো গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে।
আজকের অনুষ্ঠানে আমি তাঁর আজীবনলব্ধ অভিজ্ঞতার প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি। যে অভিজ্ঞতা দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাজে আসবে। আজ আমি তাঁর সেই আদর্শঋদ্ধ অন্তরের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি, যে অন্তর এক অতুলনীয় বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের চালিকা। বিআইডিএস থেকে অব্যাহতি নেওয়ার পর রেহমান সোবহান তাঁর লেখালেখিতে আরও নিবেদিত হয়ে পড়েন এবং অবিরত প্রকাশিত হতে থাকে তাঁর গবেষণালব্ধ, সমৃদ্ধ গ্রন্থমালা; যেখানে সাম্যের কথা, মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির কথা, অন্যায্যতার বিরুদ্ধকথা অকাট্য যুক্তি ও পরিকল্পনাসহকারে উপস্থাপিত হয়েছে, জাতির ভবিষ্যৎ নির্মাণে অবদান রেখেছে। তাঁর তুলনামূলক সাম্প্র্রতিক রচনাগুলোয় গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার বিচ্যুতি, অপশাসন, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দূরদর্শিতার অভাব, রাষ্ট্র হিসেবে লক্ষ্যে পৌঁছাতে না পারার পেছনের কারণগুলোয় আলোকপাত করা হয়েছে। আজও তিনি লিখে চলেছেন, আদর্শে অবিচল। এখনও এক লড়াকু তরুণ ছাড়া তাঁকে আর কিছু মনে হয় না। প্রকৃতি তাঁকে সুস্থ রাখুক, দীর্ঘায়ু দান করুক। যেন আরও বহুকাল আমাদের শক্তি ও সাহসের উৎস এ মানুষটিকে কাছে পাই। তাঁর সম্মানার্থে একটিবার দাঁড়িয়ে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করতে আমি সবার কাছে বিনীত অনুরোধ করছি।
এম সাইদুজ্জামান
সাবেক অর্থমন্ত্রী
বিষয় : প্রচ্ছদ এম সাইদুজ্জামান রেহমান সোবহান
মন্তব্য করুন