দেশের চিকিৎসাসেবার ৬০ শতাংশ চাহিদা মেটায় বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক। তবে নীতিমালাহীন চিকিৎসা ব্যয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন সাধারণ রোগীরা। স্বাস্থ্য বিভাগের তদরকির অভাবে প্রতিনিয়ত ভুল চিকিৎসার অভিযোগ উঠছে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে উন্নত চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্যবীমা জরুরি বলে করেন মনোয়ারা হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মীর মো. আরিফ হাসান। সমকালের কাছে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন আরিফ হাসান।

-চিকিৎসা সেবায় স্বাস্থ্যবীমা জরুরি কেন?
-দেশে উন্নত মানের মানসম্মত চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতে সর্বজনীন স্বাস্থ্যবীমা নিশ্চিত করা জরুরি। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সব জনগোষ্ঠীর চিকিৎসাসেবা স্বাস্থ্যবীমার মাধ্যমে করা হয়। তখন সেবা নিতে অর্থ সংকটের বিষয়টি মাথায় থাকে না। নিজের সুবিধামতো হাসপাতাল পছন্দ করে চিকিৎসা নেওয়ার সুযোগ থাকে। স্বাস্থ্যবীমা থাকার কারণে মেডিকেল চিকিৎসা ব্যয় বহন করে থাকে নিজ কর্মস্থল। আমাদের দেশে এটি বাস্তবায়নে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠাগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতনের মধ্যে যে অংশ চিকিৎসা ব্যয়ের জন্য দেওয়া হয়, সেটি স্বাস্থ্যবীমা বাবদ জমা রাখলে চিকিৎসা নিতে অর্থ সংকটে ভুগতে হবে না কাউকে। এর ফলে সরকারি হাসপাতালেও চাপ কমে আসবে। বেসরকারি হাসপাতালে আরও উন্নত সেবা দেওয়া সম্ভব হবে। এখন প্রশ্ন, সবার জন্য স্বাস্থ্যবীমা কীভাবে হবে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে শ্রম আইন অনুযায়ী এটি বাস্তবায়ন করা যেতে পারে। চিকিৎসা ব্যয়ের টাকা বেতনের সঙ্গে যুক্ত না করে এ টাকা স্বাস্থ্যবীমায় যুক্ত করতে হবে। এই বীমা নিশ্চিত করতে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতাল অ্যাসোসিয়েশনগুলোকেও উদ্যোগ নিতে হবে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো উদ্যোগ নিলে স্বাস্থ্যসেবার মানও বাড়বে।

-বহু বছর ধরে স্বাস্থ্যবীমা নিয়ে আলোচনা চলছে, বাস্তবায়ন কত দূর।
- শুধু সরকারি ব্যবস্থাপনায় সব প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবীমা বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। উদ্যোক্তা পর্যায়েও উদ্যোগী হতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারকে আইনিবিধি প্রণয়ন ও মনিটরিংয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। যখন শ্রম আইনের মাধ্যমে এটি বাস্তবায়ন করা হবে, তখন কোনো সংকট থাকবে না। এরই মধ্যে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় এটি কার্যকর করার উদ্যোগ নেওয়া হলেও অনেক ধীরগতিতে চলছে। চাইলে এটি দ্রুত সময়ে বাস্তবায়ন সম্ভব।

-বেসরকারি পর্যায়ে চিকিৎসাসেবার মান বাড়াতে করণীয় কী?
- বেসরকারি হাসপাতালে উন্নত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে প্রয়োজন দক্ষ জনশক্তি। এটি তৈরিতে দেশে এখনও তেমন কোনো ইনস্টিটিউট তৈরি করা সম্ভব হয়নি। দেশে নেই পর্যাপ্ত প্রশিক্ষিত জনবল। কিছু প্রতিষ্ঠান বেসরকারি পর্যায়ে এমন উদ্যোগ নিলেও এটি আরও সম্প্রসারণ করা প্রয়োজন। দেশে বেসরকারি পর্যায়ে প্রায় ৭০ হাজার দক্ষ লোকের প্রয়োজন। দক্ষ লোক না থাকার কারণে অদক্ষদের কাজ শেখাতে হয়। দেখা গেছে, মেডিকেলে নূ্যনতম কোনো জ্ঞান নেই তিনিই এক্স-রে মেশিন চালাচ্ছেন। প্রশিক্ষিত জনবল গড়ে তুলতে পারলে বিদেশেও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। বিদেশে বাংলাদেশের নার্সের ব্যাপক চাহিদা থাকলেও সেটি পাঠানো সম্ভব হয় না।

-বেসরকারি হাসপাতালের প্রসার বাড়লেও সেবার মান বেড়েছে কি?
-যে হারে দেশে বেসরকারি হাসপাতাল বেড়েছে, সে হারে সেবার মান বাড়েনি। এর প্রধান কারণ এ খাতে আমরা দক্ষ জনবল তৈরি করতে পারিনি। ফলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী সেবা নিশ্চিত করতে পারছে না। ফলে প্রতিটি মুহূর্তে কোনো কোনো ভুল চিকিৎসার সংবাদ আসছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তদারকি ও সেবার মান বাড়াতে হবে। লাইন্সেসের মেয়াদ দুই বা পাঁচ বছর করতে হবে। পাশাপাশি অনলাইনে নবায়নের সুযোগ তৈরি করে দিতে হবে। হাসপাতালে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে আগে খোঁজ নেওয়া হয় লাইন্সেস আছে কিনা। অথচ অনেক সময় লাইসেন্সের আবেদন করে ছয় মাস পার হলেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এটি দিতে পারে না। এই ধরনের দুর্ভোগ কমাতে হবে। আরও সহজে কীভাবে লাইসেন্স করা যায় সেটি নিয়ে সংশ্নিষ্ট কর্তৃপক্ষের ভাবতে হবে। একটি হাসপাতাল চালাতে ১৪ ধরনের লাইন্সেস প্রয়োজন হয়। আবার বছর শেষে নবায়নের জন্য ভোগান্তিও পোহাতে হয়।

-বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা জেলা-উপজেলা পর্যায়ে নিতে আপনার পরামর্শ কী।
-রাজধানীতে যে মানের চিকিৎসাসেবা দেওয়া সম্ভব, সেটি অনেক ক্ষেত্রে জেলা পর্যায়ে দেওয়া সম্ভব নয়। সেখানে চিকিৎসকরা অবস্থান করতে চান না। বিভাগীয় পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ থাকলেও সেখানে অনেক সময় রোগীরা যেতে চান না। সবাই রাজধানীমুখী হতে চান। এসব সংকট দূর করতে আমাদের সবাইকে উদ্যোগ নিতে হবে।া

বিষয় : স্বাস্থ্যবীমা উন্নত চিকিৎসাসেবা সর্বজনীন স্বাস্থ্যবীমা

মন্তব্য করুন