বহু দেন-দরবার ও কাঠখড় পুড়িয়ে স্টক এক্সচেঞ্জে চালু হয়েছে ট্রেজারি বন্ডের সেকেন্ডারি বাজার। কিন্তু এ বাজারে কেউ কেনাবেচা করে না। ব্যাংক ও বীমা কোম্পানিগুলো প্রথাগতভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যবস্থাপনায় এ বন্ড কেনাবেচা করছে। এ অবস্থায় বন্ড বাজারকে গতিশীল করতে সব মার্চেন্ট ব্যাংক, ব্রোকার ডিলার, সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানি এবং মিউচুয়াল ফান্ডের নিজস্ব পোর্টফোলিওতে তালিকাভুক্ত ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ বাধ্যতামূলক করে গত রোববার একটি নির্দেশনা জারি করেছে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি।

নির্দেশনায় বলা হয়েছে, বাজার মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের বিনিয়োগে বৈচিত্র্য আনা ও ঝুঁকি হ্রাস করতে নিজ পোর্টফোলিওর অন্তত ১ শতাংশ তালিকাভুক্ত ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ থাকতে হবে। এ বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে আগামী জুনের মধ্যে।

এর আগে ২০২২ সালের ৩০ জুনের মধ্যে তালিকাভুক্ত ডেট সিকিউরিটিজে অন্তত তিন শতাংশ বিনিয়োগ করার বাধ্যবাধকতা আরোপ করে ওই বছরের ২৩ মে একটি নির্দেশনা দেয় বিএসইসি। কেউ এ নির্দেশনা পরিপালন করতে না পারায় ওই সময়সীমা বাড়িয়ে ৩০ জুন ২০২৩ করা হয়েছে।

মার্চেন্ট ব্যাংক এবং ব্রোকার ডিলার প্রতিষ্ঠানগুলো জানিয়েছে, গত বছরের নির্দেশনাটি বাস্তবায়ন করতে না পারার কারণ বন্ড বাজারে কারও আগ্রহ নেই। বেক্সিমকোর সুকুক (শরিয়াহ বন্ড) ছাড়া অন্য কোনো বন্ডের ক্রেতা নেই, বিক্রেতাও পাওয়া যায় না। কেউ বিক্রি না করলে, অন্য কেউ কীভাবে বন্ডে বিনিয়োগ করবে। এ কারণে নির্দেশনা পরিপালনে সময় বাড়িয়ে দেওয়ার আবেদন করা হয়েছিল। একদিকে বন্ডে বিনিয়োগ লাভজনক, অন্যদিকে টাকা আটকে থাকে।

মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর সংগঠন বিএমবিএর সভাপতি ছায়েদুর রহমান সমকালকে বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বন্ড বাজারে বিনিয়োগ করাতে পারলে এ বাজার সক্রিয় হবে এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীরাও বিনিয়োগে আসবে বলে মনে করছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। তবে এ ধারণার বাস্তবায়ন নিয়ে যথেষ্ট সংশয় আছে। যতদিন বন্ডের থেকে ব্যাংকে বেশি সুদ বা মুনাফা মিলবে, ততদিন কেউ আগ্রহী হবেন না। জাপানের মতো দেশে, যেখানে ব্যাংক সুদহার ঋণাত্মক, সেখানে এটা সম্ভব। এখানে ফিক্সড ইনকাম বিনিয়োগে সবাই সঞ্চয়পত্রকে এক নম্বরে রাখেন।

ডিএসইর ব্রোকার ডিলারদের সংগঠন ডিবিএর সভাপতি রিচার্ড ডি রোজারিও বলেন, 'ব্রোকার ডিলাররা এখন বিনিয়োগ নয়, কীভাবে টিকে থাকবে, সে উপায় খুঁজছে। লেনদেন কমায় আয় কমেছে। অফিস ভাড়াসহ অন্যান্য খরচও মিটছে না। কর্মীদের বেতনও দিতে পারছে না অনেকে। এ অবস্থায় ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগের অর্থ কোথায় পাবে। শেয়ার বিক্রি করে যে বন্ড কিনবে, সে উপায়ও নেই। কারণ ফ্লোর প্রাইসের কারণে ক্রেতা নেই। এ কারণে গত বছরের নির্দেশনা পরিপালনের জন্য ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় চেয়ে বলেছিলাম আগে শেয়ার বিক্রি করতে পারলে ওই টাকায় বন্ড কিনব।'

মার্চেন্ট ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেন, বাধ্য করলে সবাই হয়তো ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করবে। এতে কিছু আর্থিক ক্ষতি হবে। এটা মনে করা ঠিক হবে না যে, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী বাজার থেকে একবার বন্ড কিনে আবার বিক্রি করবেন, আবার কিনবেন। কারণ বন্ডে সুদ নির্দিষ্ট; কিন্তু প্রতিবার কেনাবেচায় লেনদেন ফি আছে। এতে খরচ বাড়বে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে এখন ২৪৭টি ট্রেজারি বন্ড তালিকাভুক্ত আছে। এর বাইরে বেসরকারি বন্ড আছে ১০টি। এর মধ্যে বেক্সিমকোর সুকুক ছাড়া বাকিগুলোর লেনদেন হয় না। এখানে ক্রেতা বা বিক্রেতা, কোনো দিক থেকেই চাহিদা থাকে না।