কুষ্টিয়া পৌরসভার মেয়রের কার্যালয় তছনছ করেছে দুর্বৃত্তের দল। শনিবার গভীর রাতের কোনো এক সময়ে এ ঘটনা ঘটে।

দুর্বৃত্তরা মেয়র ভবনের পশ্চিম দিকের গ্রিল ভেঙে ভেতরে ঢুকে মেয়রের কক্ষের ড্রয়ার, ব্যক্তিগত আলমিরা ও ভল্টের তালা খুলে সিসিটিভির ডিভাইস, নগদ অর্থ ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে গেছে। কুষ্টিয়া পৌরসভার ১৫২ বছরের ইতিহাসে এ ধরনের ঘটনা এটাই প্রথম। তবে একে চুরি বলতে নারাজ মেয়র। তিনি ঘটনাটি পূর্বপরিকল্পিত বলে দাবি করেছেন। ঘটনার নেপথ্যে জড়িতদের খুঁজে বের করতে কাজ করছে পুলিশ।

কুষ্টিয়া পৌরসভার হিসাব বিভাগের কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘সকালে অফিসে এসে দেখি মেয়র ভবনের কয়েকটি দরজার তালা ভাঙা। বিষয়টি আমি তাৎক্ষণিক কর্মকর্তাদের জানাই। তারা পুলিশে খবর দেয়।'

মেয়রের খাস পিয়ন প্রনব বিশ্বাস জানান, রাতের বেলা ডিউটি করেন তিনজন দারোয়ান। তারা রাতের ডিউটি শেষে দিনের দুই দারোয়ানের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করতে গেলে দারোয়ানদের একজন মেয়র ভবনের একটি তালা ভাঙা দেখতে পান। সেই সূত্র ধরে দেখতে গিয়ে মেয়রের কার্যালয়ের তালা ভাঙা দেখা যায়। রুমে ঢুকে দেখা যায় সারা কার্যালয় তছনছ করা হয়েছে। পুলিশকে খবর দিলে তারা এসে তদন্ত শুরু করে।

সরেজমিনে দেখা যায়, মেয়রের কার্যালয়ে খাবার ঘরে তালা ভেঙে ভেতরে ঢোকে দুর্বৃত্তরা। সেখানে ফ্রিজে থাকা আপেল খায় তারা। একটি আপেল রেখেও গেছে। পাশে মেয়রের রুমের দরজার তালা চাপ দিয়ে ভাঙা। মেয়রের টেবিলের ড্রয়ার ভেঙে সব কাগজপত্র ও খাম বের করা। গরীব ছাত্রদের শিক্ষাবৃত্তির জন্য রাখা কয়েকটি খামের মধ্যে থেকে টাকা বের করে খামগুলো রেখে গেছে দুর্বৃত্তরা। মেয়র যে চেয়ারে বসেন ঠিক তার পেছনে কার্যালয়ের সিসিটিভির ফুটেজ সংরক্ষণ করা দুটি ডিভাইস নেই, ছেড়া তার পড়ে আছে সেখানে। অন্য ড্রয়ারে ৫টি মোবাইল রাখা থাকলেও সেগুলোতে হাত দেয়নি দুর্বৃত্তরা।

মেয়রের অফিসের পশ্চিম দিক ঘেঁষে থাকা খাস কামরার ভল্ট খোলা ছিল। এছাড়া আলমিরায় থাকা তিনটি ক্যামেরার মধ্যে একটি ডিএসএলআর ক্যামেরা পাওয়া যায়নি।

মেয়র কার্যালয়ের পাশে শিল্পকলা একাডেমি ভবন। সেখানে বারান্দার গ্রিল ভাঙা হয়, তার পাশে একটি সিসি ক্যামেরা আছে। সেটির মুখ উল্টে দেওয়া হয়। অন্য ক্যামেরার দিকগুলো পরিবর্তন করে দেয় দুর্বৃত্তের দল।

সকাল ৯টায় খবর পেয়ে মেয়র ভবনে আসেন প্যানেল মেয়র ও কাউন্সিলর শাহিন উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘আমি এসে তালা ভাঙা ও কার্যালয় তছনছ দেখে ফোন করি অনেককে। পুলিশকেও ফোন করি। সাড়ে ৯টার দিকে থানা ও পুলিশের সাইবার টিমের সদস্যরা আসেন। পরে সিআইডি, পিপিআইএর সদস্যরাও আসেন তদন্তের জন্য।'

দুপুর ১২টার দিকে মেয়র আনোয়ার আলী আসেন। তার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘পৌরসভার মেয়র পদে দীর্ঘ সময় দায়িত্ব পালন করছি। আমার রাজনৈতিক জীবনও দীর্ঘ সময়ের। এমন ঘটনা এই প্রথম। আমার কার্যালয়ে লাখ লাখ টাকা থাকে না যে চুরি করতে হবে। কোনো গুরুত্বপূর্ণ ফাইলও নেই। চুরি করতে তারা আসেনি। তাদের উদ্দেশ্য ভিন্ন।'

পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, 'মেয়র স্যারের চেয়ারটি সব সময় সোজা থাকে। তারা যাওয়ার সময় সেটি দিক পরিবর্তন করে উল্টোদিকে রেখে কী বোঝাতে চেয়েছে সেটি এখন প্রশ্ন।'

এ কথা শুনে মেয়র বলেন, তার মানে তুমি চলে যাও, সময় শেষ- এমনটা হয়ত বোঝাতে চেয়েছে।

দুপুর ১টার দিকে মেয়র আনোয়ার আলী জরুরি সংবাদ সম্মেলন আহ্বান করেন। তিনি বলেন, 'এটা বড় বড় মাথার কাজ। এটা সাধারণ চুরি নয়, তারা এ কাজের দ্বারা অন্য কিছু বোঝাতে চায়। পুলিশকে কাজ করতে, ঘটনার নেপথ্যে কারা তা খুঁজে বের করতে বলেছি। আমার কার্যালয়ের কেউ জড়িত থাকতে পারে বলে মনে হয়। ব্যক্তিগত শত্রুতা থেকে কেউ এমনটি করতে পারে। পৌরসভার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ ও আমাকে হেয় করতে এমনটি করা হয়েছে।'

এদিকে, এ ঘটনায় পুলিশের একাধিক টিম পৌরসভার বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। থানায় মামলা দেওয়া হয়েছে।

কুষ্টিয়া মডেল থানার ওসি দেলোয়ার হোসেন বলেন, এটা সাধারণ চুরি বলে মনে হচ্ছে না। চুরি হলে মোবাইলসহ অন্য ক্যামেরাগুলো নিয়ে যেত। পরিকল্পিতভাবে তারা কাজটি করেছে। রুমের ভেতরের দুই স্থানে তারা বসে কাগজপত্র ছিড়েছে। তার মানে টিমে একাধিক লোক ছিল।