- বাংলাদেশ
- ঝুট কাপড় থেকে তৈরি হবে তুলা
হা-মীম স্পিনিং মিলে রিসাইকেল প্ল্যান্ট উদ্বোধন
ঝুট কাপড় থেকে তৈরি হবে তুলা

গাজীপুরের মাওনায় হা-মীম স্পিনিং মিলের রিসাইকেল প্ল্যান্ট উদ্বোধন।
রিসাইকেল বা প্রক্রিয়াকরণ করে পুনর্ব্যবহার বাংলাদেশের পোশাক শিল্পকে নতুন গতি দেবে বলে মনে করেন বিশ্ববিখ্যাত ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠান এইচ অ্যান্ড এমের বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ইথিওপিয়ার রিজিওনাল কান্ট্রি ম্যানেজার জিয়াউর রহমান। ঝুট কাপড় বা পোশাক বর্জ্য থেকে উৎপাদিত তুলা থেকে পুনরায় পোশাক উৎপাদন এ খাতের জন্য ‘মাইলফলক’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন তিনি। এর ফলে একদিকে রপ্তানি সক্ষমতা বাড়বে, অন্যদিকে বৈশ্বিক ভোক্তা এবং ব্র্যান্ড ক্রেতাদের কাছে বাংলাদেশের পোশাকের চাহিদা তৈরি হবে।
গাজীপুরের মাওনায় হা-মীম গ্রুপের প্রতিষ্ঠান হা-মীম স্পিনিং মিলের রিসাইকেল প্ল্যান্ট উদ্বোধন অনুষ্ঠানে রোববার এ অভিমত ব্যক্ত করেন তিনি।
তিনি বলেন, পরিবেশ সচেতনতাসহ অন্যান্য কারণে এইচঅ্যান্ডএমসহ অন্যান্য ক্রেতারা এ ধরনের পোশাকের প্রতি এখন বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে। সফলভাবে রিসাইকেলের মাধ্যমে হা-মীম দৃষ্টান্ত তৈরি করল। অন্য কারখানাকেও হা-মীমের দেখানো পথ অনুসরণ করতে হবে।

গত ১৯ বছর ধরে বাংলাদেশে এইচ অ্যান্ড এমের ব্যবসার কথা উল্লেখ করে জিয়াউর রহমান জানান, এদেশে ব্যবসা আরও বাড়াচ্ছেন তারা। এইচঅ্যান্ডএম বাংলাদেশের পোশাকের বড় ক্রেতা প্রতিষ্ঠান। সবচেয়ে বেশি ২০ শতাংশ পোশাক বাংলাদেশ থেকে নেয় তারা। গত অর্থবছর যার পরিমাণ ছিল ৩৫০ কোটি ডলার।
অনুষ্ঠানে হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি এ. কে. আজাদ বলেন, ফেলে দেওয়া পোশাক বর্জ্য এখন রিসাইকেলের মাধ্যমে মূল্যবান কাঁচামালে পরিণত হয়েছে। এ প্রক্রিয়ায় পরিত্যক্ত বর্জ্য থেকে তুলা এবং তুলা থেকে কাপড় হচ্ছে। সেই কাপড়ে উৎপাদিত পোশাক রপ্তানি হচ্ছে বিশ্ববাজারে। দূষণ থেকে পরিবেশ সুরক্ষা দেয় এ ধরনের প্রযুক্তির ব্যবহার। এ কারণে ক্রেতারা এখন রিসাইকেলের মাধ্যমে পোশাক উৎপাদনে উৎসাহিত করছেন। ঝুট কাপড় এবং তুলা বর্জ্যের পাশাপাশি পরিত্যক্ত প্লাস্টিক বোতলকেও রিসাইকেলের মাধ্যমে তুলা, সুতা এবং তৈরি পোশাক উৎপাদনে বিনিয়োগ পরিকল্পনার কথা জানান তিনি।
হা-মীম গ্রুপের এ প্রকল্পে অর্থায়ন করেছে স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক। ব্যাংকের কর্পোরেট ব্যাংকিং বিভাগের নির্বাহী পরিচালক ফারিয়া কবীর বলেন, আগামী প্রজন্মের জন্য নিরাপদ পরিবেশের স্বার্থে এ ধরনের কার্যক্রমে বিনিয়োগ করছেন তারা।
সময়মত ঋণ পরিশোধে হা-মীম গ্রুপের প্রশংসা করে তিনি বলেন, নির্ধারিত সময়ের আগেই ঋণ পরিশোধ করে থাকেন তারা। ঋণ পরিশোধে সুশৃঙ্খল প্রতিষ্ঠান এবং পরিবেশ সহায়ক এ ধরনের প্রকল্পে আরও অর্থায়নে আগ্রহ রয়েছে স্ট্যান্ডার্ড। হা-মীম গ্রুপের ডিএমডি দেলোয়ার হোসেনসহ গ্রুপের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, এক কেজি তুলা উৎপাদনে গড়ে প্রায় ১৫ হাজার লিটার পানির প্রয়োজন হয়। তুলা থেকে সুতা করার প্রক্রিয়ায় আরও পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস ব্যবহারের প্রয়োজন হয়। পরিবেশ দূষণ হয় ও আর্থিক ব্যয় বাড়ে। অন্যদিকে, পরিত্যক্ত ঝুট কাপড় রিসাইকেল প্রক্রিয়ায় পরিবেশ সুরক্ষার পাশাপাশি বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক এবং সময় সাশ্রয়ী। বিশ্বব্যাপী পরিবেশ সচেতনতায় তৈরি পোশাকের ক্রেতারা মোট পোশাকের অন্তত ৩০ শতাংশ রিসাইকেল পোশাক উৎপাদনকে উৎসাহিত করে আসছেন। এসব কারণে বিশ্ববাজারে তুলানির্ভর পোশাকের চেয়ে কৃত্রিম তন্তু বা ম্যান মেইড ফাইবারের চাহিদা বেড়ে এখন ৭০ শতাংশ। এছাড়া তুলা আমদানি বাবদ বছরে বড় অংকের বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করতে হয়।
জানতে চাইলে হা-মীম গ্রুপের ডিজিএম নিতিশ চন্দ্র শিকদার সমকালকে বলেন, স্পেন থেকে আমদানি করা মেশিনারিজে হা-মীম স্পিনিং মিলের রিসাইকেল প্ল্যান্ট থেকে প্রতিদিন ১৬ টন রিসাইকেল্ড তুলা উৎপাদন হবে। দ্বিতীয় ধাপে আরও ১৬ টন উৎপাদনের প্রক্রিয়া চলছে। তৃতীয় ধাপে এসব রিসাইকেল্ড তুলা থেকে ৪৫ টন কাপড় উৎপাদনের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ চলছে। ঝুট কাপড় সংগ্রহ করা হবে হা-মীম গ্রুপের বিভিন্ন পোশাক কারখানার ৪০০ লাইন থেকে। পোশাক উৎপাদনে সাধারণত কমবেশি ৫ শতাংশ কাপড় অপচয় হয়ে থাকে। প্রয়োজনে অন্য কারখানা থেকেও সংগ্রহের করার পরিকল্পনার কথা জানান তিনি।
মন্তব্য করুন