সিনেমা দেখা এখন আর সিনেমা হলের মধ্যে আটকে নেই। এখন বিকল্প মাধ্যমে সিনেমা দেখার সুযোগ তৈরি হয়েছে। হাতে থাকা মোবাইল ফোনে পছন্দের ছবি দেখা যায়। তবে বলা হচ্ছে, বিকল্প মাধ্যম এলেও সিনেমা দেখার জন্য হলের আবেদন এতটুকুও ফুরায়নি। কিন্তু বাস্তবচিত্র ভিন্ন। বাংলাদেশে ক্রমেই স্মৃতি হয়ে উঠছে সিনেমা হল সংস্কৃতি।

দেশে সিনেমা হল কমছেই। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, দেশে সচল সিনেমা হলের সংখ্যা এখন একশ'রও কম। অথচ দু’তিন বছর আগে সচল সিনেমা হল ছিল ২৫০ থেকে ৩০০টি। প্রযোজক, পরিবেশক ও প্রদর্শক সমিতির কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী দেশে এখন হল সংখ্যা ৬২-এর বেশি নয়। তবে উৎসবে এ সংখ্যা কিছুটা বাড়ে। তখন ৮০ থেকে ১০০টি হয়। অথচ ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, নব্বইয়ের দশকের শুরুতে সারাদেশে ১ হাজার ৪৩৫টির মতো সিনেমা হল সচল ছিল। 


এখন দেশের অনেক জেলা শহরে কোনো সিনেমা হল নেই। এর মধ্যে রয়েছে– বরগুনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, নড়াইল, মুন্সীগঞ্জ, নরসিংদী, পঞ্চগড়, ব্রাক্ষণবাড়িয়া, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, নাটোর, চুয়াডাঙ্গা, কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির উপদেষ্টা মিয়া আলাউদ্দিন সমকালকে দিয়েছেন এ তথ্য। 

সিঙ্গেল স্ক্রিনের হল কতটি আছে– এই হিসাব কখনও হয়নি বলে জানালেন প্রযোজক ও প্রদর্শক সমিতির নেতা এবং চলচ্চিত্র প্রযোজক খোরশেদ আলম খসরু। তিনি বলেন, 'সিনেমা হল কতটি আছে– এ বিষয়ে সঠিক হিসেব আপাতত দিতে পারছি না। আনুষ্ঠানিক তালিকাও তৈরি করা হয়নি। তবে সিনেমা মুক্তি দিতে গিয়ে দেখেছি, হলের সংখ্যা ৫০ থেকে ৭০টির বেশি নয়।

এই হলগুলো বন্ধ হওয়ার পেছনে কারণ হিসেবে পাওয়া যাচ্ছে নানা মত। অনেকেই ভালো সিনেমা নেই বলে হল বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা বলছেন। কেউ আবার বলছেন, হল নেই বলেই সিনেমা ব্যবসা খারাপ। তাই ভালো সিনেমাও নির্মিত হচ্ছে না। কিন্তু বাস্তব কথা হচ্ছে, ক্রমেই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে সিনেমা হল। যেসব হল এখনও সচল রয়েছে, সেগুলোও চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে।

সিনেমা হল বন্ধ নিয়ে প্রদর্শক সমিতির সাবেক সভাপতি ও প্রযোজক ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ বলেন, ‘সিনেমাগুলো ব্যবসা করতে পারছে না বলেই হল উঠে যাচ্ছে। দু-একটা ছবি যে ব্যবসা করছে না তা বলছি না। তবে এতে কি সিনেমা হল টিকে থাকবে?’

বাংলাদেশের সিনেমা এখন লাইফ সাপোর্টে আছে– উল্লেখ করে মধুমিতা সিনেমা হলের কর্ণধার ইফতেখার উদ্দিন বলেন, ‘শুধু সিনেপ্লেক্স বানালে হবে না। সবার তো সিনেপ্লেক্সে সিনেমা দেখার সামর্থ্য নেই। লোকাল দর্শকরা তো সেখানে সিনেমা দেখতে পারবেন না। তাই যে হলগুলো আছে, সেগুলো ঠিক করে আধুনিক করতে হবে। আর যদি দিন দিন হল হারাতে থাকে তাহলে বিশাল সংকটে পড়তে হবে। এক সময় দেশে হলই থাকবে না।’

বাংলাদেশ পরিচালক সমিতির মুশফিকুর রহমান গুলজার এ বিষয়ে হতাশার কথা জানালেন। তিনি বললেন, ‘আসলে সিনেমা চালিয়ে এখন হল মালিকরা লাভবান হতে পারছেন না। তাই হল ভেঙে মালিকরা মার্কেট বানাচ্ছেন বা অন্য ব্যবসা করছেন। হল না থাকলে সিনেমা কীভাবে দেখবে মানুষ? যে কোনোভাবে সিনেমা হল টিকিয়ে রাখতে হবে। এভাবে দিন দিন হল কমতে থাকলে ভবিষ্যতে বড় সমস্যায় পড়তে হতে পারে।'

তিনি আরও বলেন, 'আশার কথা হচ্ছে, সিনেমা হল উন্নয়নে সরকার কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। উদ্যোগগুলো বাস্তবায়ন হলে আশা করি বছর দুইয়েকের মধ্যে সমস্যা কেটে যাবে।’