গোপালগঞ্জে ৪৭ লাখ ৬৭ হাজার টাকা ঋণখেলাপি হয়েও ইউপি নির্বাচনে চূড়ান্ত প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগের এক নেতা। অথচ বিষয়টি জানিয়ে নির্বাচন অফিসে আগেই চিঠি দিয়েছিল ব্যাংক। তবে নির্বাচন কর্মকর্তাদের গাফিলতিতে খেলাপি ঋণের টাকা আদায় হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রার্থী প্রতীক পাওয়ায় এ নিয়ে আর কিছু করার নেই বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

ইসলামী ব্যাংকের গোপালগঞ্জ শাখা সূত্রে জানা গেছে, তপশিল ঘোষণার পর সদরের ৬ ইউনিয়নে নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের জন্য কর্মকর্তাদের নামের তালিকা চান নির্বাচন কর্মকর্তা। এর পর ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানতে পারেন, দুর্গাপুর ইউপির চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক নাজিব আহমেদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন। গত ৩০ জানুয়ারি নির্বাচন অফিসে চিঠি দিয়ে তাঁরা জানান, তিনি ঋণখেলাপি।

ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক এ এইচ এম গোলাম মোস্তফা কামাল বলেন, চিঠিটি গ্রহণ করে তাঁদের রিসিভ কপি দেওয়া হয়েছে। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের আগে চিঠি দিয়ে তাঁদের উপস্থিত থাকতে বলার বিধান আছে। কিন্তু তাঁদের বিষয়টি জানানো হয়নি। পরে যাচাই-বাছাইয়ের দিন গত ২০ ফেব্রুয়ারি নাজিব আহমেদের ঋণখেলাপির বিষয়টি জানিয়ে ফের চিঠি দেন। নির্বাচন কর্মকর্তা রাসেদুল ইসলাম এটি গ্রহণ করলেও প্রতিকার পাননি।

ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, নাজিব আহমেদ হলফনামায় খেলাপি ঋণের তথ্য গোপন করে প্রার্থী হয়েছেন। রিটার্নিং কর্মকর্তা চিঠি না দেখার ভান করে মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করেছেন। অথচ তাঁর প্রার্থী হওয়ার সুযোগ নেই। নির্বাচন অফিসের গাফিলতির কারণে ৪৭ লাখ ৬৭ হাজার ১২৩ টাকা খেলাপি ঋণ আদায় হয়নি। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন শাখার কর্মকর্তারা।

সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা রাসেদুল ইসলাম বলেন, গত ৩০ জানুয়ারি ব্যাংকের প্রথম চিঠি পেলেও তখন রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ হয়নি। ২০ ফেব্রুয়ারি দুপুর ১২টা ১০ মিনিটে আরেকটি চিঠি পান। সকাল ১০টায় যাচাই-বাছাই হয়ে গেছে জানিয়ে চিঠি রিটার্নিং অফিসার শেখ বদরুদ্দিনকে দিতে বলেন। কিন্তু তাঁরা সেখানে চিঠি দেননি।

টুঙ্গিপাড়া উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও দুর্গাপুর ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত রিটার্নিং অফিসার শেখ বদরুদ্দিন বলেন, ইসলামী ব্যাংকের কোনো চিঠি তাঁর কাছে আসেনি। এ জন্য প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। প্রতীক বরাদ্দ হওয়ায় মনোয়নপত্র বাতিলের সুযোগ নেই।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মুহাম্মদ ফয়জুল মোল্লা বলেন, তিন কার্যদিবসের মধ্যে আপিলের সুযোগ ছিল। জনতা ব্যাংক, বিআরডিবি, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরসহ অন্য দপ্তরের ঋণ পরিশোধের পর মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। ইসলামী ব্যাংক আবেদন করলে তাদের টাকাও আদায় হতো।

চেয়ারম্যান প্রার্থী নাজিব আহমেদ বলেন, ‘যে ঋণখেলাপি হলে নির্বাচন করা যায় না, আমি সে খেলাপি নই। আইন মেনে প্রার্থী হয়েছি। তাই রিটার্নিং অফিসার মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করেছেন।’

জেলা প্রশাসক কাজী মাহবুবুল আলম বলেন, যাচাই-বাছাই ও প্রতীক বরাদ্দের পর তাঁর কাছে অভিযোগ করেছে ব্যাংক। তিনি আপিল কর্তৃপক্ষ নন। এ ব্যাপারে ব্যাংক কমিশনে যেতে পারে।