
স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (এলডিসি) বিষয়ে পঞ্চম জাতিসংঘ সম্মেলন আজ থেকে ৯ মার্চ কাতারের দোহায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এ সম্মেলনে জাতিসংঘ মহাসচিব এলডিসির জন্য টেকসই উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার লক্ষ্য নিয়ে বিশ্ব নেতৃবৃন্দ, সুশীল সমাজ এবং বেসরকারি খাতের নেতাদের বক্তব্য রাখবেন। জাতিসংঘ যেসব দেশকে স্বল্পোন্নত হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করেছে, সেগুলোর প্রবৃদ্ধির জন্য সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং পরিবেশগত উন্নয়ন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। এলডিসির ৪৬টি দেশ বিশ্বে জনসংখ্যার ১৩ শতাংশ হলেও তাদের জিডিপি বিশ্বে মোট জিডিপির মাত্র ১.৫ শতাংশ এবং বিশ্ববাণিজ্যে তাদের অবদান কম– মাত্র ১ শতাংশ। এটা স্পষ্ট যে, সেখানে আরও কিছু করা দরকার।
স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য সুযোগ তৈরিতে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার সম্প্রসারণের জন্য আমরা বেশ কয়েকটি নতুন পদক্ষেপ নিয়েছি। এর মধ্যে মাইক্রোসফটের এয়ারব্যান্ড উদ্যোগের মাধ্যমে আফ্রিকার অতিরিক্ত ২ কোটি মানুষকে ইন্টারনেট সুবিধা প্রদানের জন্য লিকুইড ইন্টেলিজেন্ট টেকনোলজির সহযোগিতায় একটি নতুন চুক্তি আমরা করেছি। বিশ হাজার যুবক, নারী ও উদ্যোক্তার কাছে পৌঁছানোর জন্য ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অব এমপ্লয়ার্স এবং সিন্যাপসের সঙ্গে আমরা চুক্তি করেছি। কৃষিক্ষেত্রে সহায়তার জন্য ওসিপি আফ্রিকার সঙ্গে আমাদের অংশীদারিত্ব রয়েছে। প্লানেট ল্যাবস ও ইনস্টিটিউট ফর হেলথ মেট্রিক্স অ্যান্ড ইভালুয়েশনের সঙ্গে একটি প্রকল্প চলমান, যা জলবায়ু অভিবাসনের ধরন বোঝা ও নতুন অবস্থা পর্যবেক্ষণে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং সরকারকে সহায়তা করবে। এটি বিশ্বব্যাপী মানুষের স্বাস্থ্য ও সুস্থতায়ও অবদান রাখবে।
জাতিসংঘের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের প্রতি আমাদের অব্যাহত সমর্থনে প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে মাইক্রোসফট এ এলডিসি সম্মেলনে প্রাইভেট সেক্টর ফোরামের সহসভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে। ডিজিটাল উন্নয়নের মাধ্যমে ওই লক্ষ্যগুলোকে আরও এগিয়ে নেওয়া এবং সেগুলোকে বাস্তবে পরিণত করার ক্ষেত্র তৈরিতে আমরা সহায়তা করব। বেসরকারি খাত এলিডিসিতে বসবাসকারী মানুষের সুযোগ তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। সেখানে জনসংখ্যার মাত্র ৩৬% আজ ইন্টারনেট ব্যবহার করে; এটি প্রসারের ক্ষেত্রে তার অংশগ্রহণকে মাইক্রোসফট গুরুত্বপূর্ণ মনে করে। এলডিসি সম্মেলনকে সামনে রেখে ডিজিটাল অবকাঠামো, ডিজিটাল দক্ষতা এবং ডিজিটাল উন্নয়নকে প্রাধান্য দিয়ে এ সম্পর্কিত অংশীদারিত্বের কার্যক্রমের বিবরণ হাজির করছে মাইক্রোসফট।
মাইক্রোসফটের এয়ারব্যান্ড উদ্যোগের কথা আগেই বলেছি। এর মাধ্যমে ২০২৫ সালের মধ্যে আফ্রিকার অতিরিক্ত ২ কোটি মানুষের কাছে ইন্টারনেট কার্যক্রম পৌঁছানোর তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। লিকুইড ইন্টেলিজেন্ট টেকনোলজি আফ্রিকা মহাদেশজুড়ে ১ লাখ কিলোমিটার ফাইবার নেটওয়ার্ক পরিচালনা করে। এই প্রোগ্রামটি আফ্রিকাজুড়ে বেশ কয়েকটি বাজারে পৌঁছবে, যার মধ্যে রয়েছে এলডিসির ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো (ডিআরসি) এবং জাম্বিয়া। উপরন্তু এর মাধ্যমে কেনিয়া, নাইজেরিয়া, তানজানিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকায়ও উচ্চগতির সংযোগ বৃদ্ধি করবে।
ডিজিটাল দক্ষতা উন্নয়নের কাজও করছে মাইক্রোসফট। দক্ষতার কর্মসূচিগুলো আজ এলডিসিজুড়েই বিদ্যমান, কিন্তু জাতি, লিঙ্গ, ভূগোল, স্থানচ্যুতি বা অন্যান্য সংকটের কারণে অনেক মানুষ এ থেকে বাদ পড়েছে। তাদের দক্ষতা নিশ্চিত করার জন্যই মাইক্রোসফট বিশেষত কাজ করছে। কিন্তু একক প্রতিষ্ঠানের দ্বারা এটি সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। সেজন্য জাতিসংঘের সংস্থা, সরকার, স্থানীয় অংশীজন ও বেসরকারি খাতকে একত্র করতে হবে।
বিশ্বজুড়ে তাপমাত্রা বাড়ার কারণে পৃথিবী উষ্ণ হচ্ছে, এর একটি বড় বোঝা অনুন্নত দেশগুলোর ওপর পড়ছে। পরিবর্তনশীল জলবায়ুর সঙ্গে স্থিতিস্থাপকতা এবং অভিযোজন-পরবর্তী ৩০ বছরে গুরুত্বপূর্ণ হবে। এআই তথা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে ভবিষ্যদ্বাণীমূলক মডেলিংয়ের সাহায্যে বিশ্বব্যাপী খাদ্য নিরাপত্তা জোরদার করতে, জনসংখ্যার স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে এবং অবকাঠামো শক্তিশালী করতে কী প্রয়োজন হবে, তা অনুমান করা সম্ভব।
মাইক্রোসফট এ বৈশিষ্ট্যগুলো আরও ভালোভাবে বোঝার জন্য ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্লানেট ল্যাবস পিবিস ও ইনস্টিটিউট ফর হেলথ মেট্রিক্স অ্যান্ড ইভালুয়েশনের (আইএইচএমই) সঙ্গে সহযোগিতা করছে।
আমাদের লক্ষ্য হলো পরিস্থিতি অনুধাবনের ক্ষমতা তৈরি করা, যাতে সরকার, জাতিসংঘ ও সাহায্য সংস্থাগুলো এবং সাপ্লাই চেইন অপারেটররা বিশ্বব্যাপী মানুষের স্বাস্থ্য ও সুরক্ষার জন্য এগিয়ে আসে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অগ্রগতি জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রেও ভূমিকা রাখতে পারে। যদিও আমাদের হাতে আলাদীনের চেরাগ নেই, তবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো রূপান্তরমূলক প্রযুক্তি এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা এগিয়ে নেওয়ার নতুন এবং বাস্তব উপায় প্রদান করে। এটি ডিজিটাল অবকাঠামো ও ডিজিটাল দক্ষতার প্রয়োজনীয়তাকে আরও গুরুত্ব দিচ্ছে, যাতে এই বিষয়গুলো স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মানুষের হাতে তুলে দেওয়া যায় এবং তাদের বৈষম্যের ব্যবধান কমে আসে।
এবারের এলডিসি সম্মেলনে এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহযোগিতা করছে মাইক্রোসফট। প্রাইভেট সেক্টর ফোরামের কো-চেয়ার হিসেবে মাইক্রোসফট জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে একত্রে কাজ করছে। গত সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের বার্ষিক সভায় জোর দিয়ে বলেছিলাম, আমরা বিশ্বাস করি প্রযুক্তি অগ্রগতির জন্য একটি অপরিহার্য হাতিয়ার; যার মধ্যে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে এই লক্ষ্যগুলো অর্জনে অর্ধেক পথে রয়েছি। অগ্রগতি চলমান, কিন্তু আরও অনেক কিছু করার আছে।
২০২০ সালে আমরা একটি টিম গঠন করেছি, যাতে জাতিসংঘ মিশন ও এর অঙ্গসংগঠন, বহুপক্ষীয় ও আঞ্চলিক প্রতিষ্ঠান, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, সরকার, স্থানীয় সম্প্রদায় ও অংশীজনের প্রতি মাইক্রোসফটের প্রতিশ্রুতি আরও গভীর হয়।
২০২৩ সালে রূপান্তরশীল প্রযুক্তির দ্রুত পরিবর্তন হয় এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সামনে আসে। এসডিজি অ্যাডভোকেট হিসেবে, আমি আশা করি আমরা সম্মিলিতভাবে হাতে থাকা সুযোগটিকে কাজে লাগাতে পারব।
সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের প্রয়োজনীয়তা কখনোই স্পষ্ট ছিল না। এটি কেবল জনহিতকর অনুশীলন নয়, বরং একটি ব্যবসায়িক বাধ্যবাধকতা। আমাদের সবাইকে আরও কিছু করতে হবে এবং একসঙ্গে উদ্ভাবন চালিয়ে যাওয়া আমাদের জন্য অপরিহার্য।
ব্র্যাড স্মিথ : ভাইস চেয়ার ও প্রেসিডেন্ট, মাইক্রোসফট; মাইক্রোসফটের ব্লগ থেকে সংক্ষেপিত ভাষান্তর মাহফুজুর রহমান মানিক
মন্তব্য করুন