স্কুল পর্যায়ে অ্যাথলেটিকস প্রতিযোগিতায় স্বর্ণ ও রোপ্য পদক জয় করেছে পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার সুবর্ণা। বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (বিকেএসপি) চূড়ান্ত ভর্তি পরীক্ষায় দেশের মধ্যে প্রথম হয়েছে। তবে অর্থের অভাবে ভর্তি হতে পারবে কিনা, এখনও জানে না সে।

উপজেলার সোনাতলা উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী সুবর্ণা। পৌরসভার ফেঁচুয়ান গ্রামের ভ্যানচালক রাসেল শেখের মেয়ে সে। বাড়ির চার শতক জমি ছাড়া আর কিছু নেই। পাঁচ সদস্যের পরিবারের খরচ চালিয়ে তার খরচ দেওয়া সম্ভব নয় বাবার পক্ষে।

পারিবারিক ও বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সুবর্ণা ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় ২০২১ সালে অ্যাথলেটিকস প্রতিযোগিতায় ১০০ ও ২০০ মিটার এবং রশি দৌড়ে প্রথম হয়। জেলা, উপজেলা, বিভাগ বা উপ-অঞ্চলে দৌড় ও দীর্ঘ লাফে প্রথম হয় সে। পরে রাজশাহী ও রংপুর অঞ্চলে দৌড়ে প্রথম হয়েছে। জাতীয় পর্যায়েও দৌড়ে ব্রোঞ্জ পদক পায়।

একই মাঠে রিলে দৌড়ে রৌপ্য জেতে সুবর্ণা। চলতি বছর উপজেলা, জেলা, উপ-অঞ্চল (আট জেলা) ও অঞ্চল (দুই বিভাগ) পর্যায়ে দৌড়, দীর্ঘ লাফেও চ্যাম্পিয়ন হয় সে। যশোরে পায় স্বর্ণপদক। আর দীর্ঘ লাফে রৌপ্য ও দৌড়ে ব্রোঞ্জ পেয়েছে। শেখ কামাল অ্যাথলেটিকস প্রতিযোগিতায়ও প্রথম হয়েছে।

সুবর্ণার ভাষ্য, ‘আমি বাংলাদেশের দ্রুততম মানবী হতে চাই। অলিম্পিক গেমসে স্বর্ণপদক জয় করে বাংলাদেশকে বিশ্বদরবারে উচ্চ শিখরে তুলে ধরতে চাই।’

জানা গেছে, গত ৩১ জানুয়ারি সাভার বিকেএসপিতে অ্যাথলেটিকস বিভাগের চূড়ান্ত ভর্তি পরীক্ষায় বালিকা বিভাগে দেশসেরা হয়েছে সুবর্ণা। ভর্তির প্রাথমিক টাকা জমা দেওয়ার শেষ দিন আজ রোববার। বাকি টাকা দিতে হবে ৯ মার্চের মধ্যে। ভর্তি হতে লাগবে ২৩ হাজার টাকা।

বাবা রাসেল শেখ বলেন, ‘আমি চাই মেয়েডা খেলাধুলায় শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্ব জয় করুক। তবে ভর্তি ও লেখাপড়ার খরচ চালানো আমার পক্ষে সম্ভব নয়।’ মা সালমা খাতুন বলেন, ‘স্বামী ভ্যান চালায়্যা যে টাকা পায়, সেটা দিয়্যে চাল-ডাল কিনি।’

সুবর্ণার প্রশিক্ষক ও বিদ্যালয়ের ক্রীড়া শিক্ষক এনামুল হক বলেন, সুবর্ণার প্রবল ইচ্ছাশক্তি। স্বপ্ন বাস্তবায়নে সে কঠোর পরিশ্রম করছে। প্রধান শিক্ষক সৈয়দ গোলাম মওলা বলেন, অনুশীলন অব্যাহত রাখলে এবং বিকেএসপি ভর্তি হতে পারলে সে বড় মাপের অ্যাথলিট হতে পারবে।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ দেলোয়ার বলেন, এলাকায় সুবর্ণার মতো অ্যাথলিট গড়ে ওঠায় তাঁরা গর্বিত। তিনি ব্যক্তিগতভাবে তাঁকে আর্থিক সহযোগিতা করেছেন।