জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বড় পরীক্ষায় নামতে যাচ্ছে কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন। আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে গাজীপুর, খুলনা, রাজশাহী, বরিশাল, সিলেট এই পাঁচ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন শেষ করার পরিকল্পনা নিয়েছে ইসি।

সিটি করপোরেশন আইন অনুযায়ী, করপোরেশনের প্রথম বৈঠক থেকে পাঁচ বছরের মেয়াদপূর্তির আগের ৬ মাসের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সেই হিসেবে হাতে পর্যাপ্ত সময় থাকলেও দ্রুত সিটি ভোট করতে চায় ইসি। কারণ আগামী বছরের শুরুতেই জাতীয় সংসদের নির্বাচন হবে। সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে আগেভাগেই স্থানীয় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এই স্তরের ভোট শেষ করার বিষয়ে কমিশন একমত হয়েছে। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর রোববার নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, জুনের আগে দু-একটা সিটি করপোরেশনের ভোট হবে। বাকিগুলো জুনের পরে। সেপ্টেম্বরের মধ্যে সিটি করপোরেশন ভোট শেষ করা হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের তপশিলের বিষয়ে কমিশনে কোনো আলোচনা হয়নি। সিটি ভোট মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে ৬ মাসের মধ্যে করতে হয়, এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তারা জানান, তাদের হিসাব মতে আগামী ১১ মার্চ থেকে গাজীপুর সিটির পরবর্তী ভোটের ৬ মাসের বা ১৮০ দিনের ক্ষণগণনা শুরু হবে। ১০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে এই নির্বাচন শেষ করতে হবে। খুলনা ও রাজশাহী সিটির ক্ষণগণনা শুরু হবে ১৩ এপ্রিল থেকে; ভোট করতে হবে ১০ অক্টোবরের মধ্যে।  বরিশাল সিটির ভোট ১৩ নভেম্বরের মধ্যে এবং সিলেট সিটির ভোট ৬ নভেম্বরের মধ্যে শেষ করতে হবে । ময়মনসিংহ সিটি ভোটের ক্ষণগণনা শুরু হবে ২০ ডিসেম্বরের মধ্যে; ভোট করতে হবে ২০২৪ সালের ১৯ জুনের মধ্যে।

এক প্রশ্নের জবাবে মো. আলমগীর জানান, সামনে জাতীয় নির্বাচন। চলতি বছরের ডিসেম্বরের শেষে অথবা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ভোট হবে। তাই ইসির চেষ্টা রয়েছে সিটি ভোট আগেভাগেই শেষ করার। কারণ জাতীয় নির্বাচনের জন্য অনেক ক্ষেত্রে প্রস্তুতির বিষয় রয়েছে। ১১ মার্চ থেকে ১০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে গাজীপুরের ভোটের সময়। মার্চের পরে যে কোনো সময় এই নির্বাচন হতে পারে। তপশিল নিয়ে কমিশন সভায় এখনও আলোচনা হয়নি বলেও জানান তিনি।

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এক দিনে সব সিটির ভোট হবে না। ৬টি সিটি করপোরেশনের মধ্যে ময়মনসিংহ সিটির নির্বাচনের অনেক দেরি। বাকি পাঁচটির ক্ষেত্রে হয়তো দুই বা তিন দিনে হতে পারে। জুন মাসের মধ্যে অন্তত দুই সিটি ভোটের পরিকল্পনার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, সেপ্টেম্বরের মধ্যে সিটি ভোট শেষ করা হবে।

বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই নির্বাচনী অনিময় দূর করতে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার এবং ভোটকেন্দ্রে সিসিটিভি মোতায়েনের পক্ষে মত দিয়ে আসছে। কিন্তু পর্যাপ্ত বাজেট না থাকায় ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত সংসদের ছয়টি আসনের উপনির্বাচনে তা ব্যবহার করা সম্ভব হয়নি।

পাঁচ সিটির ভোটে ইভিএম ও সিসিটিভি ব্যবহারের বিষয়ে কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, এটি নির্ভর করছে বাজেটের ওপর। প্রয়োজনীয় অর্থ পাওয়া গেলে সিসি ক্যামেরা ব্যবহার করা হবে। একইভাবে ইভিএম সংস্কার করতেও টাকার প্রয়োজন রয়েছে।

তিনি বলেন, নতুন ইভিএম আসেনি। ইভিএমগুলোর ব্যাটারির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। ব্যাটারি পরিবর্তন করতে হবে, সার্ভিসিং করাতে হবে। এ জন্য টাকা লাগবে। সার্ভিসিংয়ের পরে বোঝা যাবে কতগুলো মেশিন সচল করা সম্ভব হয়েছে, আর কত ইভিএম ব্যবহার করা যাবে। এ বিষয়ে কমিশনের ইতিবাচক আগ্রহের কথাও জানান তিনি।

গাইবান্ধা উপনির্বাচনের পর সিসিটিভি ব্যবহারে সরকারি দলের আপত্তির বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সিসি ক্যামেরা ভোটের অনুষঙ্গ নয়। আইনে কোথাও বলা নাই সিসি ক্যামেরা রাখতে হবে। এটা বাড়তি ব্যবস্থা এবং পরীক্ষামূলক ছিল। টাকা পেলে সব আসনে না করলেও ঝুঁকিপূর্ণ আসনে সিসি ক্যামেরা ব্যবহার করা হবে।