- বাংলাদেশ
- মানুষের জন্য জীবন
মানুষের জন্য জীবন

মাহমুদুর রহমান নাঈম। বয়স আঠারোর ঘরে হলেও এরই মধ্যে ৩৭টি বাল্যবিয়ে বন্ধ করে আলোচনায় উঠে এসেছেন। কেবল তা-ই নয়; নাঈম যৌন হয়রানির শিকার দুই শিশুকে সহায়তার পাশাপাশি এক শিশুকে পাচারের হাত থেকে উদ্ধারেও সহায়তা করেছেন। শিশু সুরক্ষা, শিশু আইন এবং শিশু অধিকার সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেন তিনি। মা-বাবাহীন নাঈম চাচা-চাচির সঙ্গে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের একটি বস্তিতে থাকেন। অবহেলা, অযত্নে নিজের শৈশব কাটলেও তিনি চান প্রতিটি শিশু সুন্দর ও নিরাপদে বেড়ে উঠুক।
সাড়ে ১১ বছর বয়স থেকে নাঈম শিশু অধিকার নিয়ে কাজ করছেন। শিশু হিসেবে নিজে নানা ধরনের নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। বাবা নেই, মা ছিলেন মানসিক রোগী। এমন পরিস্থিতিতে একটি আন্তর্জাতিক বেসরকারি সেবা সংস্থার শিশু অধিকার ও শিশু সুরক্ষাবিষয়ক মিটিংয়ে তাঁর যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল। সেখানে শিশু অধিকারবিষয়ক কথা শুনে নাঈম তাদের সঙ্গে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাঈম বলেন, ‘আমি চেয়েছি আমার মতো যেন আর একটি শিশুও নির্যাতনের শিকার না হয়। আমি যে বস্তি এলাকায় থাকি, সেখানে প্রায় ৮৬ হাজার মানুষের বসবাস। বেশিরভাগই দিন আনে দিন খায়। তেমন শিক্ষিতও নয়। অনেকে এতটাই গরিব যে, কন্যাসন্তানকে বোঝা মনে করে। তাই একটু বড় করে বিয়ে দিতে পারলেই যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচে। বিয়ের বয়স হলো কিনা, তা ভাবার তাদের যেন একটুও সময় নেই। যখন বুঝতে পারলাম এটা নিয়ে কাজ করার সুযোগ আছে, তখন থেকেই কাজ শুরু করলাম।’
বস্তি এলাকায় কাজ করায় নাঈমের পরিচিতি গড়ে ওঠে। সবাই জানে, শিশু অধিকার নিশ্চিত করতে তার তৎপরতার খবর। তাই কোথাও বাল্যবিয়ের কথা উঠলেই শিশু, সহপাঠী কিংবা স্থানীয়রা খবর পৌঁছে দেয় নাঈমের কাছে। খবর পেয়ে ছুটে যান নাঈম। মা-বাবাকে বুঝিয়ে বলেন। কখনও কখনও স্থানীয় কাউন্সিলর ও মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে বাল্যবিয়ে বন্ধ করেন। নাঈম বলেন, ‘বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ করতে যাওয়ায় আমাকে মেরে ফেলার হুমকি ও প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল দুবার। তবু আমি আমার কাজ করতে থাকি। আগামীতেও করব।’
মন্তব্য করুন