বাংলাদেশের সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব (পিপিপি) প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রধান বাধা হলো জমি অধিগ্রহণে সংকট। এর বাইরে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসূত্রতা আরেকটি বড় বাধা। আমলারা মনে করেন, পিপিপিতে বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা অংশীদার নন, ঠিকাদার। আমলাদের এমন মানসিকতা বদলাতে হবে। যারা অর্থায়ন
করে, তাদেরও অনেক শর্ত থাকে। এ ছাড়া পিপিপিতে কোনো প্রকল্প বেসরকারি উদ্যোক্তাদের জন্য লাভজনক হবে কিনা, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকে। এ বিষয়ে গভীর পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণের অভাব রয়েছে।

সোমবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এফবিসিসিআই আয়োজিত বাংলাদেশ বিজনেস সামিটের সমাপনী দিনে ‘সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব: বেসরকারি খাতের ভূমিকা এবং বিনিয়োগ সুযোগ’ শিরোনামে কর্ম অধিবেশনে বক্তারা এমন অভিমত দেন।

আলোচনায় অংশ নিয়ে ঢাকা ইস্টার্ন বাইপাস এক্সপ্রেসওয়ে ডেভেলপমেন্ট কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শহীদুল ইসলাম আকন্দ বলেন, ‘বাংলাদেশে পিপিপি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসূত্রতা একটি বড় বাধা। অন্যদিকে জমি অধিগ্রহণ করতে দীর্ঘ সময় লেগে যায় এবং নানা জটিল পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়।’ তিনি অন্তত ৮০ শতাংশ জমি অধিগ্রহণের পর পিপিপি চুক্তি করার সুপারিশ করেন।

ইস্টার্ন বাইপাস প্রকল্পের অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বলেন, আমলাতন্ত্রের মানসিকতাই হচ্ছে দেরি করা। তাঁরা বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের অংশীদার মনে করেন না। ঠিকাদার মনে করেন। এ প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণের সঙ্গে সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ, রাজউক, রেলওয়ে প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানের সম্পৃক্ততা রয়েছে। জমি অধিগ্রহণে দেরি হওয়ায় প্রকল্পে চীনা অংশীদারের ব্যাংক অর্থায়নে দেরি করেছে। তারা নানা শর্তও দিয়েছে। তাঁর মতে, বাইরের অর্থায়নের চেয়ে দেশি অর্থায়ন সুবিধাজনক।

মূল প্রবন্ধে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নাসের এজাজ বিজয় বলেন, ‘সব পিপিপি প্রকল্পের জন্য আগে থেকে সম্ভাব্যতা যাচাই করা খুব জরুরি। এ ছাড়া প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র প্রক্রিয়া এবং প্রকল্প থেকে মুনাফা আসবে কিনা, তা যথাযথভাবে যাচাই করা উচিত।’ তিনি ক্রয় প্রক্রিয়ায় প্রশাসন নিশ্চিত করার ওপর জোর দেন। বাংলাদেশসহ অনেক দেশেই  পিপিপির অভিজ্ঞতা মিশ্র বলে তিনি মন্তব্য করেন।

এমসিসিআইর সাবেক সভাপতি ব্যারিস্টার নিহাদ কবির বলেন, প্রকল্পের সময়মতো বাস্তবায়ন এবং বাণিজ্যিক সম্ভাবনা পিপিপির ক্ষেত্রে প্রধান দুটি বিষয়। জমি অধিগ্রহণ এলেই বড় সমস্যা। এক্ষেত্রে অভিযোগগুলো প্রায়ই আদালত পর্যন্ত গড়ায়। আদালতে যাওয়ার আগে দ্রুত নিষ্পত্তির ব্যবস্থা থাকা উচিত। তিনি পিপিপি প্রকল্পের ক্ষেত্রে সরকারের গ্যারান্টি রাখার সুপারিশ করেন।  

পিডব্লিউসির ব্যবস্থাপনা অংশীদার মামুন রশিদ বলেন, শুধু সরকারের লোকসানি প্রকল্প পিপিপিতে দিতে হবে, এমন মানসিকতা থাকা উচিত হবে না। জমি অধিগ্রহণ সমস্যার নিষ্পত্তি সব মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ের মাধ্যমে করতে হবে। এ ধরনের প্রকল্পের সামাজিক চ্যালেঞ্জকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে।

সূচনা বক্তব্যে পিপিপি কর্তৃপক্ষের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মুশফিকুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে পিপিপির জন্য যথাযথ রেগুলেটরি কাঠামো রয়েছে। ১৭টি মন্ত্রণালয়ের অধীনে এ পর্যন্ত ৭৭টি পিপিপি প্রকল্প রয়েছে।

এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের পরিচালক তাকিও কোইকি বলেন, বাংলাদেশ তিনটি পিপিপি প্রকল্পে এডিবি অর্থায়ন করেছে। লজিস্টিকস এবং স্বাস্থ্যসেবার মতো খাতে পিপিপির সম্ভাবনা রয়েছে। তারা বাংলাদেশে পিপিপি অর্থায়ন চালিয়ে যেতে আগ্রহী।

বাংলাদেশে নিযুক্ত কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত লি জং কিউন বলেন, বাংলাদেশে ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে কোরিয়ার বিনিয়োগ সবচেয়ে বেশি। কোরিয়ার অনেক কোম্পানি অবকাঠামোতে বিনিয়োগে আগ্রহী। এক্ষেত্রে পিপিপি ভালো বিকল্প হতে পারে।

পিপিপি কর্তৃপক্ষের মহাপরিচালক আবুল বাশার বলেন, প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র প্রক্রিয়া এবং সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য সমীক্ষার বিষয়টি অনুসরণ করা হয়। বাংরাদেশে পিপিপি ধারণাটি খুব বেশিদিনের নয়। সাম্প্রতিক সময়ে পিপিপি প্রকল্পের জন্য কয়েকটি দেশের সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

অধিবেশন সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক মো. নাফিউল হাসান।