ফরিদপুরে ইউপি নির্বাচনকে সামনে রেখে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে বিভিন্ন ইউনিয়নের পরিস্থিতি। প্রতিদিনই নির্বাচনকে ঘিরে সহিংসতার একাধিক ঘটনা ঘটছে।

আগামী বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) ফরিদপুর সদরের ১১টি ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ইউনিয়নে প্রার্থীর ভাই, ভাতিজাকে পিটিয়ে কুপিয়ে আহত করা, প্রার্থীর নির্বাচনী বহরে হামলা চালিয়ে মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেল ভাঙচুর, নির্বাচনী  অফিস ভাঙচুর  এবং প্রার্থীর এজেন্টদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে হুমকি ধমকি দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে । সোমবার সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ফরিদপুর সদরের কানাইপুর, কৈজুরি, ডিক্রিরচর ও মাচ্চর ইউনিয়নে এসব ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় এ পর্যন্ত ১০ জন আহতের খবর পাওয়া গেছে।

কানাইপুর নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মো. সাইফুল ইসলাম কামাল জানান, কয়েকজন সমর্থক নিয়ে তিনি গত সোমবার রাতে ফরিদপুর থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। রাত ২ টার দিকে ভাটিকানাইপুর এলাকার মাদ্রাসার পাশে দিয়ে যাওয়ার সময় কয়েকজনকে নৌকা মার্কার পোস্টার ছিড়তে দেখলে প্রথমে সাইফুল কামালের ভাতিজা তুষার খান তাদেরকে পোস্টার ছেঁড়ার কারণ জানতে চান। এ নিয়ে তাদের মধ্যে বাকবিতন্ডা হয়। এক পর্যায়ে বেলায়েত ফকির, তার ভাই এনায়েত ফকির, ভাই সুজায়েত ফকিরসহ প্রায় ২০/২৫ জন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তাদের উপর হামলা করে। প্রথমেই বেলায়েত ফকির সাইফুলের ভাতিজা তুষায় খানকে দেলীয় অস্ত্র দিয়ে কোপ দেয়। এরপর তারা এলাপাতারি কুপিয়ে সাইফুলের ভাই মাজহারুল ইসলাম চঞ্চল ও মো. সুমন মিয়াকে জখম করে।  আহত সবাইকে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তারা সবাই এখনও চিকিৎসাধীন রয়েছে।

মো. সাইফুল ইসলাম কামাল বলেন, এ ঘটনায় কোতয়ালী থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। আমি নির্বাচন কমিশন বরাবরও অভিযোগ দিব।

কানাইপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থী ফকির বেলায়েত হোসেন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, নির্বাচনে পরাজয় নিশ্চিত জেনে সাইফুল ইসলাম আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেছেন। তিনি আরও বলেন, এ অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই।

অপরদিকে, কৈজুরী ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী  মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন আহমেদ আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সমর্থকদের হাতে হামলার শিকার হয়েছেন বলে জানা গেছে। সোমবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে কৈজুরী ইউনিয়নের ব্যাঙডোবা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নাজিম উদ্দিন আহমেদ জানান, তাম্বুলখানা এলাকায় প্রচারণা কাজ শেষে করে  ঘোড়াদহ এলাকায় যাওয়ার পথে ব্যাঙডোবা ও বেতবাড়িয়া মোড় এলাকায় তিনি মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেলের শোভাযাত্রা নিয়ে পৌঁছলে এ হামলার ঘটনা ঘটে।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, এ সময় আকস্মিকভাবে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর নেতাকর্মীরা হামলা চালায়। কোতোয়ালী থানা শ্রমিক লীগের আহবায়ক মোহাম্মদ সেলিমুজ্জামানের নেতৃত্বে এ হামলা চালানো হয় বলে তিনি অভিযোগ করেন। তিনি জানান, হামলাকারীরা তার দুটি মাইক্রেবাস ও কয়েকটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে। এ সময় তার ১০জন কর্মী আহত হন এবং তিনি নিজেও আঘাত পান। পরে তারা ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নেন।

তবে ফরিদপুর কোতোয়ালী থানা শ্রমিক লীগের আহবায়ক মোহাম্মদ সেলিমুজ্জামানের দাবি, নাজিম উদ্দিন আহমেদ যে অভিযোগ করেছেন তার সাথে তিনি জড়িত নন।

এদিকে সোমবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে ডিক্রিরচর ইউনিয়নে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী (মোটর সাইকেল) মেহেদী হাসান মিন্টুর  নির্বাচনী অফিসে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। অভিযোগ রয়েছে, নৌকা প্রতীকের  প্রার্থী আনোয়ার হোসেন আবু ফকির ও তার সমর্থকরা এসব ঘটনা ঘটিয়েছে।

মেহেদী হাসান মিন্টু অভিযোগ করে বলেন, মুন্সীডাঙ্গী, ধরাল মোড় ও বালু ফকিরের ডাঙ্গী এলাকায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী আনোয়ার হোসেন ও তার সমর্থকরা মিন্টুর নির্বাচনী ক্যাম্পগুলি ভাঙচুর করেছে। তারা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তার সমর্থক ও কর্মীদের ধাওয়া করেছে।

মাচ্চর ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী জাহিদ মুন্সী অভিযোগ করেন, বেশ কিছু মোটরসাইকেল নিয়ে হেলমেট পরিহিত ব্যক্তিরা মাচ্চর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে শোডাউন করে নৌকার সমর্থকরা। সোমবার রাত ১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত চলে এ তাণ্ডব। ভোটারদের দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হুমকি দেয়া ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করেও তারা।

ফরিদপুর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বলেন, সদরের ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ফরিদপুরের বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থীদের বেশ কিছু অভিযোগ স্ব স্ব রিটানিং কর্মকর্তার কাছে দেওয়া হয়েছে। এগুলো তদন্ত করে দেখার জন্য ফরিদপুর কোতয়ালী থানার ওসিকে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সুমন রঞ্জন সরকার বলেন, প্রতিটি অভিযোগ পাওয়ার পর ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। এছাড়া নির্বাচন উপলক্ষে পুলিশের নতুন চারটি টহল দল গঠন করা হয়েছে। তারা কাজ করছে। তিনি আরও বলেন, নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে যেসব অভিযোগ এসেছে দ্রুত তা তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত, আগামী ১৬ মার্চ সোমবার ফরিদপুর সদরের ১১টি ইউনিয়নের ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ইভিএম পদ্ধতিতে এ নির্বাচনে ভোট গ্রহণ করা হবে। এসব ইউনিয়নে ভোটারের সংখ্যা ২ লাখ ৩৩ হাজার।