- বাংলাদেশ
- হজ প্যাকেজ দেখে আমরাও ভয় পেয়ে গেছি : হাইকোর্ট
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কাছে ব্যাখ্যা তলব
হজ প্যাকেজ দেখে আমরাও ভয় পেয়ে গেছি : হাইকোর্ট

চলতি বছর সরকারি ব্যবস্থাপনার ‘হজ প্যাকেজ’ নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়কে ‘অথর্ব’ উল্লেখ করে সর্বোচ্চ আদালত বলেছেন, ‘এবারের হজ প্যাকেজ অমানবিক। হজের জন্য এত খরচ ধরা হয়েছে, যা সাধারণ মানুষ দূরের কথা, আমরা নিজেরাও প্যাকেজ দেখে ভয় পেয়ে গেছি।’
গতকাল মঙ্গলবার বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলী সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ হজ প্যাকেজের মূল্য পুনর্নির্ধারণ চেয়ে করা রিটের শুনানিতে এসব মন্তব্য করেন। পরে হজ প্যাকেজ কীভাবে ৬ লাখ ৮৩ হাজার ১৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে এবং হজ প্যাকেজ বিষয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ অবস্থান কী– রাষ্ট্রপক্ষকে জানাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি আজ বুধবার ফের শুনানির জন্য কার্যতালিকায় আসবে।
হাইকোর্ট আরও বলেন, ‘এত টাকা লাগলে সাধারণ মানুষ কীভাবে হজে যাবেন? বিশ্বের অন্যান্য দেশে হজের জন্য সরকার আলাদা বরাদ্দ রাখে।
আমাদের এটি নেই কেন?’
গত ১ ফেব্রুয়ারি চলতি বছরের হজ প্যাকেজ ঘোষণা করে ধর্ম মন্ত্রণালয়। সরকারি ব্যবস্থাপনায় প্যাকেজের মূল্য নির্ধারণ করা হয় ৬ লাখ ৮৩ হাজার ১৮ টাকা, যা ২০২২ সালে ছিল সর্বনিম্ন ৪ লাখ ৬২ হাজার ১৫০ টাকা। এক লাফে দেড় থেকে ২ লাখ টাকা বেশি হওয়ায় বিভিন্ন মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
এর পর গত ৬ মার্চ হজ প্যাকেজ মূল্য সংশোধন করে ৪ লাখ টাকা নির্ধারণে সরকারকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও আল কোরআন স্টাডি সেন্টারের প্রধান সমন্বয়ক আশরাফ উজ জামান। নোটিশের জবাব না পেয়ে ১২ মার্চ তিনি রিট করেন।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী গাজী মো. মহসীন, আশরাফ উজ জামান খান, আহসান উল্লাহ প্রমুখ। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আওলাদ হোসেন।
শুনানিতে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উদ্দেশে হাইকোর্ট বলেন, ‘হজে যাওয়ার জন্য এত খরচ নির্ধারণ করায় যাঁরা উপযুক্ত তাঁরাও পারছেন না। এটি অমানবিক হজ প্যাকেজ। এ প্যাকেজ তৈরির সঙ্গে যাঁরা জড়িত, তাঁরা গুনাহের ভাগী হবেন।’ বিমান ভাড়ার কারণে খরচ বেড়েছে– এমন দাবি প্রসঙ্গে হাইকোর্ট বলেন, ‘কোটি কোটি টাকা লোকসানের দায় হজযাত্রীদের ওপর চাপাতে পারে না বিমান! মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় হজ ফান্ড আছে। বাংলাদেশ ও ভারতের ফান্ড কম। একমাত্র বঙ্গবন্ধু এ বিষয়ে চিন্তা করেছিলেন। তার পরে এ বিষয়ে কেউ চিন্তা করেনি।’
সৌদি ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বাইরে অন্য যে কোনো এয়ারলাইন্সের টিকিট কেনার সুবিধা না থাকার বিষয়ে আদালত বলেন, ‘এখানে ব্যবসা করার চেষ্টা করা হচ্ছে।’
আইনজীবী আশরাফ উজ জামান সাংবাদিকদের বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ-সৌদি-বাংলাদেশ রুটে প্লেন ভাড়া ৭৬ হাজার থেকে ১ লাখ ১০ হাজার টাকা। প্রতি বছর দুই দেশের সরকার হজযাত্রীদের সৌদি ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের টিকিট কিনতে বাধ্য করে স্বাধীনতা ধ্বংস করে। এসব কারণসহ বিভিন্ন বিষয় উল্লেখ করে ৪ লাখ টাকার মধ্যে চলতি হজ প্যাকেজ সংশোধন, পরিবর্তন ও পুনর্নির্ধারণ চেয়ে হাইকোর্টে রিট করা হয়। রিটে ধর্ম সচিব, বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়।
চাঁদ দেখাসাপেক্ষে আগামী ২৭ জুন পবিত্র হজ হবে। এ উপলক্ষে গত ৯ জানুয়ারি সৌদি সরকার ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী এ বছর হজযাত্রীর কোটা ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৫ হাজার ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ১ লাখ ১২ হাজার ১৯৮ জন পবিত্র হজ পালনের সুযোগ পাবেন।
হজে যাওয়ার জন্য গত ১২ মার্চ পর্যন্ত ৮০ হাজার ৭৩৪ জন নিবন্ধন করেছেন। আগামী ১৬ মার্চ পর্যন্ত নিবন্ধনের সুযোগ রয়েছে। প্যাকেজ মূল্য বেশি হওয়ায় এবার নিবন্ধন কম বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মন্তব্য করুন