- বাংলাদেশ
- যোগাযোগ অবকাঠামোর উন্নয়ন বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াবে
যোগাযোগ অবকাঠামোর উন্নয়ন বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াবে

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়নে বেশ কিছু প্রকল্পের কাজ চলছে। এর ফলে দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়বে।
বৃহস্পতিবার ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) এবং বাংলাদেশে ভারতীয় হাইকমিশনের যৌথ আয়োজনে ‘ভারত ও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা কাজে লাগাতে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এমন মত দেন।
ঢাকা চেম্বার জানায়, রাজধানীর হোটেল লা-মেরিডিয়েন আয়োজিত সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান বলেন, দু’দেশের বাণিজ্য স্থানীয় মুদ্রায় করা যেতে পারে। বাংলাদেশে বিনিয়োগ সহায়ক পরিবেশ কাজে লাগিয়ে এ দেশে একক কিংবা যৌথ বিনিয়োগে এগিয়ে আসতে পারে। দু’দেশের রেল যোগাযোগ উন্নয়নে যমুনা রেল সেতু স্থাপনসহ বেশ কিছু প্রকল্পের কাজ চলমান, যা শেষ হলে যোগাযোগ অবকাঠামো খাতে উন্নয়ন পরিলক্ষিত হবে। এটি ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগকে সহজতর করবে।
তিনি ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের পাশাপাশি অন্যান্য প্রদেশে বিনিয়োগ ও পণ্য রপ্তানিতে মনোযোগী হওয়ার জন্য বাংলাদেশের উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানান। উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ থেকে পাট রপ্তানিতে আরোপিত অ্যান্টি-ডাম্পিং ডিউটির ফলে আমাদের স্থানীয় উদ্যোক্তারা প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হচ্ছেন, যা নিরসনে ভারত সরকারকে সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। ভারতের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশি পণ্যের ট্রান্সশিপমেন্ট প্রক্রিয়া আরও সহজ করার ওপর জোর দেন তিনি।
অনুষ্ঠানে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি ব্যারিস্টার মো. সামীর সাত্তার বলেন, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং বাংলাদেশের যোগাযোগের উন্নয়নে দু’দেশের আঞ্চলিক বাজার ও বাণিজ্য সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ভারতীয় উদ্যোক্তারা বাংলাদেশে ইতোমধ্যে প্রায় ১০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছেন। বাংলাদেশের বিনিয়োগ সুবিধা বিবেচনায় নিয়ে তিনি কৃষি প্রক্রিয়াজাত, টেক্সটাইল, অটোমোবাইল, তথ্যপ্রযুক্তি, সেবা প্রভৃতি খাতে বিনিয়োগের আহ্বান জানান।
ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা বলেন, গত এক দশকে দু’দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে এবং প্রস্তাবিত ‘সেপা’ চুক্তির বাস্তবায়ন হলে বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও সাপ্লাই চেইন ব্যবস্থায় আরও অগ্রগতি পরিলক্ষিত হবে।
তিনি বলেন, বর্তমানে সাতটি ‘ল্যান্ড কাস্টমস স্টেশন’ অবকাঠামো উন্নয়নে কাজ চলছে, যা শেষ হলে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সহজতর হবে। তিনি জানান, সামনের দিনগুলোতে সীমান্ত হাট কার্যক্রম আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। বাংলাদেশি উদ্যোক্তারা অন্যান্য দেশে পণ্য রপ্তানিতে কলকাতা ও দিল্লি বিমানবন্দর ব্যবহার করতে পারেন বলে তিনি মন্তব্য করেন।
সেমিনারে ভারতীয় দূতাবাসের পক্ষ থেকে উপস্থাপিত মূল প্রবন্ধে জানানো হয়, গত পাঁচ বছরে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য দ্বিগুণ বেড়েছে এবং গত তিন বছরে ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি দ্বিগুণ হয়েছে, যা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। এ ছাড়াও বাংলাদেশের রেলওয়ে খাতের দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধিতে ভারত সরকার বেশ কিছু প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে, যার সুফল শিগগিরই পাওয়া যাবে। প্রস্তাবিত ‘ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ পাইপলাইন’-এর কার্যক্রম চালু হলে প্রতি বছর প্রায় ১ মিলিয়ন টন ডিজেল পরিবহন সক্ষম হবে, যা বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
মুক্ত আলোচনায় সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ফারুক সোবহান, ডিসিসিআইর সাবেক সভাপতি মতিউর রহমান, আসিফ ইব্রাহীম, মো. সবুর খান, শামস মাহমুদ, এমসিসিআইর সাবেক সভাপতি আনিস উদ-দৌলা, ঢাকা চেম্বারের পরিচালক মালিক তালহা ইসমাইল বারী, খায়রুল মজিদ মাহমুদ প্রমুখ অংশ নেন।
তাঁরা আশা প্রকাশ করেন, প্রস্তাবিত ‘কম্প্রিহেনসিভ প্রিফারেনশিয়াল ট্রেড এগ্রিমেন্ট (সেপা)’ চুক্তি বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের পাট রপ্তানির ওপর অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক প্রত্যাহারসহ দু’দেশের শুল্ক ও প্যারাট্যারিফ প্রতিবন্ধকতার নিরসন হবে, যা বাণিজ্য ও বিনিয়োগ ত্বরান্বিত করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। পাশাপাশি আলোচকরা বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি, স্বাস্থ্যসেবা প্রভৃতি খাতে ভারতের উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগে এগিয়ে আসার আহবান জানিয়ে বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের ভারতের ভিসা প্রদানের প্রক্রিয়া আরও সহজতর করার ওপর জোর দেন।
মন্তব্য করুন