রিকশাচালক বাবার সন্তান তিনি। টিনের ছাউনিঘেরা এক খুপরি ঘরে বাবা-মায়ের সঙ্গে তার বাস। অভাব-অনটনের সংসারে খেয়ে না খেয়ে ছেলের পড়া চালিয়ে গেছেন বাবা। ছেলেও বাবার কষ্টের প্রতিবাদ দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। যদিও স্বপ্ন পূরণের প্রথম পরীক্ষায় সফলতার দেখা পারেননি তিনি, তবুও দমে যাননি। দমবেই বা কেন? দারিদ্রতা আর সংগ্রামের সঙ্গেই তো তার বহু দিনের সন্ধি। 

তাই ব্যর্থতাকে পাশ কাটিয়ে স্বপ্ন পূরণের চেষ্টায় দ্বিতীয়বার বসলেন পরীক্ষায়। এবার সফলতা ধরা দিয়েছে তার হাতে। বলা হচ্ছে, চলতি বছর মেডিকেল ভর্তির সুযোগ পাওয়া রাজশাহীর বিনোদপুরের পূর্বধরমপুর এলাকায় রিকশাচালক বাবা জাহিদুল ইসলামের ছেলে চাঁন মিয়ার কথা।  

তবে দারিদ্রতা তো আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে আছে বহুদিন ধরে। তাই দারিদ্রতাকে পায়ে মাড়িয়ে স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে বারবার হোঁচট খাচ্ছেন চাঁন মিয়া। মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ হলেও ‘পুরোনো বন্ধু’ টাকার অভাবে আবারও পড়ালেখার খরচ জোগানোর দুশ্চিন্তায় পড়তে হয় তাকে। তবে এবার পড়ালেখার খরচ মেটানোর দায়িত্ব নিলেন রাজশাহীর মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন।

জানা যায়, প্রথমবার মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পাননি চাঁন মিয়া। পরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন তিনি। তবে ডাক্তার হওয়ার বাসনায় দ্বিতীয়বার পরীক্ষায় অংশ নেন। বরিশাল শেরে-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন চাঁন মিয়া। 

চাঁন মিয়া জানান, পড়াশোনার জন্য একটি চেয়ার-টেবিলও ছিলো না। বিছানায় বসে পড়তে পড়তে প্রায়ই ব্যাকপেইন হতো। রিকশা চালিয়ে বাবা যে টাকা আয় করতেন, তা দিয়েই চলতো পড়ালেখা। 

তিনি আরও বলেন, ‘আমি ডাক্তার হয়ে এলাকাবাসীর সেবা করতে চাই। এলাকাবাসীর ঋণ কখনোই পরিশোধ করতে পারব না। তারা সব সময় আমাকে উৎসাহ দিয়েছেন। পাশে থেকেছেন।’

বাবা জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ছেলের পড়াশোনার জন্য অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। তবে ভর্তির সুযোগ পাওয়ার পর মেডিকেলে পড়ার খরচ কীভাবে চালাব, সেই চিন্তায় ছিলাম। বিষয়টি জানতে পেরে মেয়র আমাকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। চাঁন মিয়ার মেডিকেলে ভর্তি ও পড়াশোনাসহ সব খরচ ব্যয় করবেন বলে জানিয়েছেন মেয়র। তার ব্যক্তিগত সহকারী আব্দুল ওয়াহেদ খান টিটু এসে খোঁজ-খবর নিয়ে একথা জানিয়ে গেছেন।’

জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘মেডিকেল কলেজে ভর্তির জন্য প্রথমে লাগবে ২৫ হাজার টাকা। ভর্তির পর বই কেনাসহ আরও এক লাখ টাকা লাগবে। রিকশা চালিয়ে আমার পক্ষে ছেলের ভর্তির জন্য এত টাকা জোগাড় করা সম্ভব না। খুবই বিপদে পড়ে গিয়েছিলাম। দুঃসময়ে কাউকে পাশে পাচ্ছিলাম না। ঠিক সেই মুহূর্তে আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন।’

 চাঁন মিয়ার মা শিরিনা বেগম বলেন, ‘আমরা খুবই দুশ্চিন্তায় ছিলাম। মেয়র আমার সন্তানের সব খরচ বহন করবেন বলে জানিয়েছেন। এতে স্বস্তি পাচ্ছি।’