- বাংলাদেশ
- উদ্বোধনী দিনেই ভারত থেকে এলো ১ হাজার ৯৩০ মেট্রিক টন জ্বালানি তেল
ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন
উদ্বোধনী দিনেই ভারত থেকে এলো ১ হাজার ৯৩০ মেট্রিক টন জ্বালানি তেল

ছবি: সমকাল
ভারত-বাংলাদেশ ডিজেল পাইপলাইনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হলো। শনিবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এর উদ্বোধন করেন। ১৩১.৫৭ কিলোমিটার দীর্ঘ পাইপলাইনটি দিয়ে বছরে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টন জ্বালানি আমদানি করা যাবে। উদ্বোধনী দিনে এসেছে ১ হাজার ৯৩০ টন তেল।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইন চালুর ফলে বাংলাদেশের জনগণ নানাভাবে উপকৃত হবে। এটি আমাদের জনগণের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে। প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেছেন, এই পাইপলাইন বাংলাদেশের উন্নতিকে ত্বরান্বিত করবে।
আসামের নুমালীগড় রিফাইনারি থেকে বাংলাদেশের দিনাজপুরের পার্বতীপুর পর্যন্ত ডিজেল আসছে এই পাইপলাইনে।
শেখ হাসিনা পাইপলাইনটি চালু হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করে উভয় দেশের প্রকল্প-সংশ্লিষ্টদের বিশেষ করে ভারতের যাঁরা দিনরাত পরিশ্রম করে এই পাইলাইন নির্মাণ করেছেন তাঁদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।
তিনি বলেন, এই পাইপলাইনের মাধ্যমে ভারত থেকে ডিজেল আমদানিতে ব্যয় এবং সময়ও উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, এই পাইপলাইন বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬টি জেলায় ডিজেলের স্থিতিশীল সরবরাহ নিশ্চিত করবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে রেলওয়ে ওয়াগনের মাধ্যমে ভারত থেকে বছরে ৬০ থেকে ৮০ হাজার টন ডিজেল আমদানি করা সম্ভব হতো। পাইপলাইন নির্মাণের ফলে বছরে প্রায় ১০ লাখ টন ডিজেল আমদানি করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, এর মাধ্যমে আসামের একটি ভালো বাজার বাংলাদেশে সৃষ্টি হলো, যেখানে এই ডিজেল মানুষের উন্নয়নের কাজে লাগবে এবং সেখানে আসামবাসীও লাভবান হবে, ভারতবাসীও লাভবান হবে।
তিনি বলেন, পার্বতীপুরে বর্তমানে আমাদের স্টোরেজ ক্যাপাসিটি ১৫ হাজার টন। তবে, আমরা এই স্টোরেজ ক্যাপাসিটি বৃদ্ধিতে কাজ করে যাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, এই পাইপলাইনের উদ্বোধন দু’দেশের মধ্যে যোগাযোগের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করল। দু’দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার সব ক্ষেত্রেই যথাযথভাবে ব্যবহার করতে হবে। সেটা রেল হোক, বা পরিহন, বা বিদ্যুতের গ্রিড কিংবা তথ্যপ্রযুক্তি।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, শেখ হাসিনার দূরদর্শী চিন্তার ফলেই দু’দেশের মধ্যে বন্ধ হয়ে যাওয়া রেল যোগাযোগ আবার চালু হয়েছে। তিনি জানান, বর্তমানে দু’দেশের মধ্যে পেট্রোলিয়াম বাণিজ্য বছরে ১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। পাইপলাইন চালুর ফলে তা আরও বাড়বে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০১৭ সালের এপ্রিলে পাইপলাইনের মাধ্যমে ভারত থেকে ডিজেল আমদানির জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি সই হয়। একই বছরের অক্টোবরে এনআরএল বাংলাদেশে ডিজেল রপ্তানির জন্য বিপিসির সঙ্গে ১৫ বছরমেয়াদি আরেকটি চুক্তি করে। ২০২০ সালের মার্চে পাইপলাইন বসানোর কাজ শুরু হয়। ভারতের নুমালিগড় রিফাইনারি লিমিটেড ও বাংলাদেশের মেঘনা পেট্রোলিয়াম যৌথভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে। ভারত ৩৭৭ কোটি রুপি ব্যয়ে পাইপলাইনটি নির্মাণ করেছে। বাংলাদেশে পড়েছে ১২৬.৫৭ কিলোমিটার এবং ভারতে ৫ কিলোমিটার। মাটির তিন ফুট নিচে পাইপলাইন বসানো হয়েছে। বাংলাদেশ অংশের লাইনটি পঞ্চগড়, নীলফামারী হয়ে দিনাজপুরের পার্বতীপুরে প্রবেশ করেছে। এতে ১৯৯ দশমিক ৩৪ একর জমি অধিগ্রহণ ও ১৩৪ দশমিক ১২ একর জমি হুকুমদখল করা হয়েছে।
ভারত অংশে ৯১ দশমিক ৮৪ কোটি রুপি বিনিয়োগ করেছে এনআরএল আর বংলাদেশ অংশে ২৮৫ দশমিক ২৪ কোটি রুপি ভারত সরকার অনুদান হিসেবে দিয়েছে।
৬ দশমিক ৮০ একর মোট ২৮ হাজার ৮০৯ টন ধারণক্ষমতার ছয়টি ফুয়েল স্টোরেজ ট্যাঙ্ক ও অগ্নিনির্বাপণের কাজের জন্য ৩ হাজার লিটার ধারণক্ষমতার দুটি পানির ট্যাঙ্ক নির্মাণ করা হচ্ছে। বর্তমানে পার্বতীপুর ডিপোর ধারণক্ষমতা ১৫ হাজার টন। নতুন ট্যাঙ্কের নির্মাণ শেষ না হওয়ায় পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা কোম্পানির তিনটি ডিজেল ট্যাঙ্ক খালি করে তাতে আমদানি করা নতুন তেল রাখা হচ্ছে। পাইপলাইনে সব সময় ৬৭ লাখ লিটার তেল মজুত থাকবে। প্রথম তিন বছর বছরে আড়াই থেকে ৩ লাখ টন তেল আনা হবে। পরে তা পর্যায়ক্রমে ৫ লাখ থেকে ১০ লাখ টনে উন্নীত হবে।
বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সাংবাদিকদের বলেছেন, বিদেশ থেকে ডিজেল আমদানিতে প্রতি ব্যারেলে প্রিমিয়াম দিতে হয় বর্তমানে ১১ ডলার। ভারত থেকে আমদানি করা ডিজেলে খরচ দিতে হবে ৫.৫০ ডলার। বছরে আড়াই লাখ টন তেল আমদানি করলে খরচ কমবে প্রায় ৮০ থেকে ৯০ কোটি টাকা। চুক্তি অনুযায়ী আগামী ১৫ বছর পাইপলাইনের মাধ্যমে তেল আমদানি করা হবে। এর পরে প্রয়োজন হলে চুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হবে। এই পাইপলাইনটি উন্নত প্রযুক্তিতে মনিটর করা হচ্ছে। পাইপলাইনের কোথাও কোনো ধরনের সমস্যা হলে অথবা তেল চুরির চেষ্টা কর হলে তাৎক্ষণিকভাবে জানা যাবে এবং স্থান নির্ণয় করা সম্ভব হবে।
গণভবনে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। ভারতের পক্ষে আসামের মুখ্যমন্ত্রী ড. হিমান্ত বিশ্বশর্মা, দেশটির পেট্রোলিয়াম এবং ন্যাচারাল গ্যাস মন্ত্রী হারদীপ সিং পুরি, আসামের পেট্রোলিয়াম এবং ন্যাচারাল গ্যাস মন্ত্রী রমেশ্বর তেলি প্রমুখ ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন।
উদ্বোধন উপলক্ষে পাইপলাইনের পার্বতীপুরের রিসিভ স্টেশনকে সাজানো হয় বর্ণিল সাজে। প্রধান ফটকে শোভা পায় জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি। দুই প্রধানমন্ত্রীর ছবি দিয়ে সাজানো হয় পার্বতীপুরের প্রধান প্রধান সড়কের দু’ধার।
মন্তব্য করুন