জরায়ু ক্যান্সারের নকল ভ্যাকসিন নিয়ে ভয়ংকর বাণিজ্যের সঙ্গে ডা. এ আর খান ফাউন্ডেশনসহ তিনটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের যোগসাজশের প্রমাণ পেয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এর মধ্যে এ আর খান হাসপাতালের ব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম ডিবির অভিযানের খবর পেয়ে দুই বস্তা ভ্যাকসিন সরিয়ে ফেলেন। তিনি এবং এই কারবারের নেপথ্যে থাকা স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা হিমেল সিদ্দিক রয়েছেন গোয়েন্দা নজরদারিতে। যে কোনো সময় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হবে। সেই সঙ্গে আল নূর ফাউন্ডেশনের কাদের সিদ্দিকী ও পপুলার ভ্যাকসিনেশন সেন্টারের সাইফুর বাবুকেও আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।

এদিকে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য হিমেল সিদ্দিককে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।  

ডিবির তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার গোলাম সবুর সমকালকে বলেন, নকল ভ্যাকসিন চক্রের পাঁচ সদস্যকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদে বেশ কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। সেগুলো যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে। পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানে চলছে অভিযান।

তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা জানান, পাঁচজনকে গ্রেপ্তারের পর তাদের সঙ্গে অন্তত তিনটি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের সম্পৃক্ততার তথ্য পাওয়া যায়। জিজ্ঞাসাবাদ ও তদন্তে এ ব্যাপারে আরও তথ্যপ্রমাণ বেরিয়ে এসেছে। বিশেষ করে ডা. এ আর খান হাসপাতালের ব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলামের সঙ্গে এই চক্রের নিবিড় যোগাযোগ ছিল। অন্যদের গ্রেপ্তারের পর তাঁর নাম সামনে চলে আসায় তিনি আতঙ্কিত হয়ে শুক্রবার বিপুল পরিমাণ ভ্যাকসিন সরিয়ে ফেলেন।

হাসপাতালটির মালিক হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক এ আর খান বলেন, করোনার শুরু থেকে হাসপাতালটি বন্ধ। তবে প্রতিষ্ঠানটির দেখভাল করার জন্য ব্যবস্থাপক ও নিরাপত্তাকর্মীরা কাজ করেন। নকল ভ্যাকসিন চক্রের সঙ্গে আমার প্রতিষ্ঠানের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। ব্যবস্থাপক সাইফুল আলাদাভাবে ওষুধের ব্যবসা করেন। তাঁর সঙ্গেও কোনো অপরাধী চক্রের যোগাযোগ থাকার কথা নয়। অপরাধীরা হয়তো আমার প্রতিষ্ঠানের নাম ভাঙিয়ে অপকর্ম করে আসছিল। এ ঘটনায় আমি দারুস সালাম থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছি। 

অবশ্য ডিবির এক কর্মকর্তা বলছেন, চক্রটি অন্তত দুই বছর ধরে এসব কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল। এ আর খান ফাউন্ডেশনের নামে ভ্যাকসিনের প্রচারণা চালানো হয়েছে, ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। যদি এটা নাম ভাঙিয়ে করা হয়ে থাকে, তাহলে তিনি এতদিন কেন পুলিশকে জানাননি? তিনি জিডি করেছেন চক্রের সদস্যরা ধরা পড়ার পর। আর শুধু ব্যবস্থাপক নন, এ আর খানের ভাই আবু জাফরের সম্পৃক্ততার তথ্যও পেয়েছে ডিবি।

ঢাকার কেরানীগঞ্জে দখল করা জমিতে নকল ভ্যাকসিনের কারখানা চালিয়ে আসছিলেন স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আবু বক্কর সিদ্দিক হিমেল ওরফে হিমেল সিদ্দিক। তাঁর ছত্রছায়ায়ই চলত এ কারবার। আজকালের মধ্যেই তাঁকে গ্রেপ্তারে আশাবাদী ডিবি।

হিমেলের নকল ভ্যাকসিনের কারবার বিষয়ে গতকাল সমকালে খবর প্রকাশের পর এ নিয়ে কেরানীগঞ্জে দিনভর চলে আলোচনা-সমালোচনা। এক পর্যায়ে স্বেচ্ছাসেবক লীগ জানায়, তাঁকে আগেই বহিষ্কার করা হয়েছে। তবে আগেই বহিষ্কার করা হয়ে থাকলে তা প্রকাশ্যে আসেনি কেন– এ প্রশ্নের সদুত্তর মিলছে না। অনেকে বলছেন, হিমেলের অপকর্মের দায় এড়াতে তড়িঘড়ি করে তাঁকে বহিষ্কারের চিঠি তৈরি করে সেটি আগের তারিখে দেখানো হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মিরাজুর রহমান সুমন বলেন, হিমেলের বিরুদ্ধে একের পর অভিযোগ আসছিল। এ কারণে ৮ মার্চ তাঁকে বহিষ্কার করা হয়। বহিষ্কারের চিঠি তৈরি করে রেখে দিয়েছিলাম। দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ার চিন্তায় এতদিন তা গোপন রেখেছি। আর তাঁর বাবা যে বিএনপি নেতা সেটি আমাদের জানা ছিল না।

হিমেলের বাবা কেরানীগঞ্জের শুভাঢ্যা ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মীর মোহাম্মদ বলেন, আমার ছেলে কী করে তা আমার জানা নেই। সে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সঙ্গে আছে। তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করার চিঠি গতকাল ফেসবুকে দেখা গেছে।

ভারত থেকে অবৈধ পথে হেপাটাইটিস-বি’র আমদানিনিষিদ্ধ ভ্যাকসিন ‘জেনেভ্যাকুবি’ এনে তা দিয়ে জরায়ু ক্যান্সারের নকল ভ্যাকসিন (টিকা) বানিয়ে আসছিল একটি চক্র। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে বুধবার এ চক্রের পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে ডিবি।