বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) ফলাফল জটিলতা নিরসনে আমরণ অনশন শুরু করেছেন ইংরেজি বিভাগের এক শিক্ষার্থী।  রোববার বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে আমরণ অনশনে বসেন তিনি। প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সন্ধ্যা ৭টার দিকেও অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, শিক্ষার্থীদের সমস্যা সমাধানে দ্রুতই ব্যবস্থা নেয়া হবে।

জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে অধ্যায়নরত শিক্ষার্থী শামীম ইসলাম প্রথম বর্ষ ২য় সেমিস্টারে থাকা অবস্থায় কম্পিউটার ইন্ট্রোডাকশন টু কম্পিউটার নামক কোর্সের ব্যবহারিক পরীক্ষার ফলাফলে অকৃতকার্য হয় কিন্তু মোট সিজিপিএ তে উত্তীর্ণ হয়। এতে ধারাবাহিক ক্লাস পরীক্ষা দিতে থাকে। এর মধ্যে বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কে জানালে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. সরিফা সালোয়া ডিনাকে প্রধান করে একটি তথ্য অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটি সবকিছু যাচাই-বাছাই করে বিশেষ পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থীকে উক্ত কোর্সে উত্তীর্ণ হওয়ার সুপারিশ করলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তা গ্রহণ না করে আবারও তদন্ত কমিটি গঠন করে। এদিকে চার বছরের অনার্স চতুর্থ বর্ষ শেষ সেমিস্টারের রেজাল্ট প্রকাশিত হওয়ার পর শামীম ইসলামের রেজাল্ট ‘উইথ হেল্ড’ হয়ে আছে। ঐ শিক্ষার্থী বিভাগ ও ছাত্র পরামর্শ দপ্তরে গিয়ে সমাধান না পেয়ে উপাচার্যের কাছে গেলে উপাচার্য কথা না শুনে খারাপ আচরণ করেন বলে অভিযোগ উঠে। ফলে বাধ্য হয়ে বন্ধুদের নিয়ে অনশনে বসেন শামীম ইসলাম।

শামীম ইসলাম বলেন, আমার সঙ্গে অন্যায় করা হচ্ছে। আমার শিক্ষাজীবনে লিখিত পরীক্ষায় আমি কখনও কোন বিষয়ে ফেল করি নাই। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হওয়ার পর ১ম বর্ষ ২য় সেমিস্টারের সবগুলো পরীক্ষাও ভালো হয়। কিন্তু কম্পিউটার কোর্সের ব্যবহারিক পরীক্ষাতে কোন কারণে ফেইল আসলেও ফলাফলে মোট সিজিপিএ তে উত্তীর্ণ হই। আমি চেয়েছিলাম পরের বছর ঐ বিশয়ে মানোন্নয়ন পরীক্ষা দেবো। পরের বছর যোগাযোগ করা হলে আমাকে জানানো হয়-ব্যবহারিক পরীক্ষার মানোন্নয়ন হয় না। পরে বিষয়টি প্রশাসন কে জানালে তারা কমিটি করে দেয়। এদিক অনার্স এর চতুর্থ বর্ষের শেষ সেমিস্টারের ফলাফল প্রকাশিত হলে আমার ফলাফল উইথহেল্ড করে রাখা হয়। বিষয়টি নিয়ে উপাচার্য স্যারের কাছে গেলে তিনি খারাপ আচরণ করেন। ফলে বাধ্য হয়ে বন্ধুদের নিয়ে অনশনে বসছি।

তিনি আরও বলেন, আমার মানসিক অবস্থা ভালো না। আমার বন্ধুরা অনার্সের ফলাফল পেয়ে বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় আবেদন করলেও আমি কিছুই করতে পারছি না। ফলে বাধ্য হয়ে আমি আমরণ অনশনে বসছি। রেজাল্ট ছাড়া আমি কোথাও যাবো না!

তথ্য অনুসন্ধান কমিটির আহ্বায়ক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. সরিফা সালোয়া ডীনা বলেন, ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী শামীম এর বিষয়ে আমাকে প্রধান করে যে কমিটি হয়েছিল আমরা দেখেছি শিক্ষার্থী নিজেও এ বিষয়ে অমনযোগী ছিল। সিলেবাসেও নির্দিষ্ট করে লেখা নেই ঐ কোর্সটি ব্যবহারিক। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তর থেকেও বিষয়টি ভালোভাবে লক্ষ্য না করে ফলাফল উত্তীর্ণ দেখায়। গোটা সিস্টেমেই গ্যাপ থাকায় একটি জটিলতা তৈরি হয়েছিল। তাই শিক্ষার্থীর কথা ভেবে আমরা বিশেষ পরীক্ষা নেয়ার সুপারিশ করেছিলাম।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর গোলাম রব্বানী বলেন, আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন সেমিস্টারে কোন একটি কোর্সে ফেইল থাকলে সার্টিফিকেট দেওয়া হয় না। ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী শামীম ইসলামরে ১ম বর্ষের একটি ব্যবহারিক কোর্সে ফেইল থাকায় সে রেজাল্ট পায়নি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। আগামী সাত কর্ম দিবসের মধ্যে তারা তদন্ত রিপোর্ট জমা দিবে। এরপর বিশেষ পরীক্ষা নিয়ে তার রেজাল্ট প্রকাশ করা হবে। আমি আশ্বস্ত করেছি কিন্তু তারা মানছে না। আশা করি, দ্রুতই সমস্যার সমাধান হবে। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হাসিবুর রশীদ বলেন, ঐ শিক্ষার্থীর ফলাফলের বিষয়ে তদন্ত কমিটি হয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট পেলেই আমি পদক্ষেপ নিবো। এই সপ্তাহের ভেতরই বিষয়টি বলতে পারবো।