প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ গড়ার যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখায় কার্যকর ভূমিকা পালনের জন্য র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‍্যাব) প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে র‍্যাব সদস্যদের ঘাবড়ানোর কিছু নেই। দেশবিরোধী একটা শ্রেণি আছে, তাদের অভ্যাসটাই হলো বিদেশিদের কাছে গিয়ে দেশের বদনাম করা। কিছু লোক থাকবেই যারা সব সময় বিরোধিতা করবে। আবার মাঝে মাঝে কিছু উল্টাপাল্টা কথাও বলবে। এগুলো কানে না নিয়ে দেশের কল্যাণে সঠিক কাজ করছি কিনা, এই চিন্তা করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। প্রধানমন্ত্রী গতকাল রোববার রাজধানীর কুর্মিটোলায় র‍্যাব সদরদপ্তরে বাহিনীর ১৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এসব কথা বলেন। খবর বাসসের।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নয়নশীল দেশ হিসেবেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। আমরা ২০২৬ সালে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমাদের যাত্রা শুরু করব। এখন থেকেই আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। সেই প্রস্তুতি নেওয়ার জন্যই দেশের শান্তি ও নিরাপত্তা দরকার। মাদকের অপব্যবহার, কিশোর গ্যাং সংস্কৃতি এবং সাইবার অপরাধ নির্মূলে আরও মনোযোগী হতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো বিশেষ করে র‍্যাবকে সজাগ থাকতে নির্দেশ দেন তিনি।

সরকারপ্রধান বলেন, ২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত টানা ক্ষমতায় থাকাকালে অগ্নিসন্ত্রাসসহ বিভিন্ন অপতৎপরতা মোকাবিলা করেও তাঁর সরকার দেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে পেরেছে বলেই আজকের এই বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের ঘোষণা বাস্তবায়ন করেছে। ২০৪১ সালের বাংলাদেশ কেমন হবে তারই ভিত্তিতে সরকার প্রেক্ষিত পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে এবং পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। আমরা স্মার্ট জনগোষ্ঠী গড়ে তুলব, স্মার্ট অর্থনীতি হবে। স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়ন করাটাই আমাদের লক্ষ্য। পাশাপাশি ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ কীভাবে গড়ে উঠবে, সেজন্য ‘ডেলটা প্ল্যান-২১০০’ সরকার দিয়ে যাচ্ছে। এটা বাস্তবায়ন করতে হলে শান্তি-শৃঙ্খলা ‌একান্তভাবে দরকার।

র‍্যাব সদস্যদের যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে না ঘাবড়ানোর পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ ব্যাপারে কারও মনঃকষ্ট হওয়া উচিত নয়। নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় অনেকেই প্রথমে ঘাবড়ে গিয়েছিল। এখন সেই চিন্তা আর নেই। এটা আমাদের দেশ, আমরা রক্ত দিয়ে এর স্বাধীনতা এনেছি। কাজেই আমার দেশে যারা কাজ করে তারা কে কী করে, না করে সেটা আমরা জানি। বিচারটা আমরা করব, সেই আত্মবিশ্বাস রেখেই কাজ করতে হবে। যারা এ ধরনের মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়ে দেশের বদনাম করে, দেশের একেকটা প্রতিষ্ঠানকে প্রশ্নবিদ্ধ করে, তাদের চিহ্নিত করতে হবে। তারা কোন উদ্দেশ্যে করছে, সেটা আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। দেশবিরোধী কিছু শক্তি আছে যারা যত ভালো কাজই হোক চোখে দেখে না। আবার আরেকটা শ্রেণি আছে, তাদের অভ্যাসটাই হলো বিদেশিদের কাছে গিয়ে দেশের বদনাম করা। দেশের কোনো উন্নতি তাদের চোখেই পড়ে না।

শেখ হাসিনা বলেন, জঙ্গিদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। মাদক, অগ্নিসন্ত্রাস, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, জঙ্গিবাদ দমনসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে র‍্যাবের বলিষ্ঠ ভূমিকা রয়েছে। যারা জঙ্গিবাদে যোগ দেয়, তাদের মোটিভেশন দরকার। ডি-রেডিকালাইজেশন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন প্রোগ্রাম (নবদিগন্তের পথে) এর মাধ্যমে অপরারীদের মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন ঘটিয়ে তাদের মূলধারায় ফিরিয়ে আনার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আমাদের আরেকটা বোঝা হচ্ছে, মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গা। প্রতিনিয়ত সেখানে নানা ধরনের অপরাধ ঘটছে। এ ব্যাপারেও সবার আরও নজর দিতে হবে।

অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও র‍্যাবের মহাপরিচালক এম খুরশীদ হোসেন বক্তব্য দেন।

প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান এবং পুলিশের মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে র‍্যাবের কার্যক্রমের ওপর একটি ভিডিও ডকুমেন্টারিও প্রদর্শিত হয়।