আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির যুগে অন্যতম অনুষঙ্গ স্মার্টফোন, যেটি ছাড়া দৈনন্দিন জীবনযাপন অনেকটাই অসম্ভব হয়ে উঠেছে। কথা বলা, ছবি তোলা থেকে শুরু করে বিল পেমেন্ট, অনলাইন চ্যাটিং, ইউটিউব, ফেসবুক, মেসেঞ্জার– সবকিছু ব্যবহারে স্মার্টফোনের ওপর খুব নির্ভরশীল হয়ে পড়েছি। কারণ, ল্যাপটপের তুলনায় এটা বহন করা সহজ, দেখতেও অনেক স্মার্ট আর ফ্যাশনেবল। তাই স্মার্টফোন এখন ছেলে-বুড়ো সবার হাতে শোভা পায়। যুগের প্রয়োজনে স্মার্টফোনের এই ব্যবহার অস্বীকার করা যাবে না। কিন্তু ইদানীং শিশু থেকে শুরু করে অভিভাবকরা পর্যন্ত স্মার্টফোনে অতিমাত্রিয় আসক্ত হয়ে পড়ছেন। অনেকেই আছেন প্রয়োজনীয় কাজ কিংবা বিনোদন ছাড়াও শুধু সময় কাটাতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফেসবুক, মেসেঞ্জার কিংবা ইউটিউবে পড়ে থাকেন। এতে মানুষ যেমন ধীরে ধীরে অসামাজিক হয়ে উঠছে, তেমনি এর অতি ব্যবহার একটা সময় আসক্তির পর্যায়ে চলে যাচ্ছে, যা ব্যক্তির শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলছে। একটা সময় ছিল, যখন মানুষ দৈনন্দিন কাজের ভেতর থেকেও বই পড়া, ভালো গান শোনা, সেলাই করা বা বিভিন্ন হাতের কাজ, বাগান করাসহ সৃষ্টিশীল নানা কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখত।

এতে সৃষ্টিশীল সময় কাটানো ছাড়াও নিজের মেধা ও মননশীলতার বিকাশ ঘটত। মানুষের ব্যক্তিত্ব সমৃদ্ধ হতো। এসব কাজের মাধ্যমে মানুষ তার খোরাক জোগাত। কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া আজ সে জায়গাটা যেন সম্পূর্ণ দখল করে নিয়েছে স্মার্টফোন। আমাদের সমাজে তাই সুস্থ মনমানসিকতার পরিবর্তে স্থূল চিন্তাচেতনা আর অসুস্থ মানসিকতার ছড়াছড়ি। যুগের প্রয়োজনে প্রযুক্তির এই ব্যবহারকে কোনোভাবেই অস্বীকার করা যাবে না– এ কথা ধ্রুব সত্য। তেমনি এ কথাও সত্য, মানুষের মেধা ও মননশীলতার বিকাশে সৃষ্টিশীল কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখতে হবে। আমরা শুধু সময় কাটাতে কোনো যন্ত্রের ওপর যেন অতি নির্ভরশীল না হয়ে উঠি, যা আমাদের যন্ত্রের দাসে পরিণত করে। কারণ মানুষমাত্রই সামাজিক জীব। তাকে সামাজিক হয়েই বাঁচতে হবে। স্মার্টফোনের অতি আসক্তি মানুষকে খানিকটা সমাজ-বিচ্ছিন্ন ও আত্মকেন্দ্রিক করে তুলছে। এই আসক্তি অনেক ক্ষেত্রে মাদকের আসক্তির থেকেও ভয়াবহ পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। সুতরাং সময় থাকতেই স্মার্টফোন ব্যবহারে সবাইকে সচেতন হতে হবে।

মোহাম্মদপুর, ঢাকা