- বাংলাদেশ
- শিশু সুরক্ষায় উদাসীনতা কাম্য নয়
শিশু সুরক্ষায় উদাসীনতা কাম্য নয়

বাংলাদেশের ১৭ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে ৪০ শতাংশই শিশু। এই শিশুরাই দেশের ভবিষ্যৎ। শিশুদের বিশ্বাস, আস্থা এবং নির্ভরতার প্রধান উৎস তাদের পরিবার। সেই পরিবার ও সমাজে শিশুদের অধিকার সুরক্ষা করার প্রধান দায়িত্ব রাষ্ট্রের।
স্বাধীনতার ৫২ বছরে আজও কি বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটি পেরেছে যথাযথ আইন প্রয়োগের মাধ্যমে সব শিশুর সুরক্ষা ও অধিকার নিশ্চিত করতে? এখনও কি এই রাষ্ট্র একটি শিশুবান্ধব হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে বিশ্বের কাছে?
সারাবিশ্বে বাল্যবিয়ে বন্ধে কাজ করা আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থা ‘গার্লস নট ব্রাইডস’-এর সম্প্রতি প্রকাশিত একটি পরিসংখ্যান বলছে, ১৫ বছর হওয়ার আগেই বাংলাদেশে ২২ শতাংশ কন্যাশিশুর বিয়ে হয়ে যাচ্ছে এবং প্রায় ৫৯ শতাংশ কন্যাশিশুর বিয়ে হচ্ছে ১৮ বছর হওয়ার আগেই। এই পরিসংখ্যানই বলে দেয়, বাংলাদেশে কন্যাশিশুদের বিয়ের চিত্র কতটা ভয়াবহ।
বাল্যবিয়ের কারণে শিশুরা শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বিদ্যালয় থেকে অকালে ঝরে পড়ছে; বন্ধ হচ্ছে তাদের শিক্ষা ও জ্ঞানের বিকাশ। একটি কন্যাশিশু পরিপূর্ণ নারী হিসেবে বিকশিত হওয়ার আগেই তার কোলজুড়ে আসছে আরেকটি শিশু। শিশুর কোলে জন্ম নিচ্ছে অপুষ্ট শিশু। এভাবেই বাল্যবিয়ের কারণে একটি অপুষ্ট প্রজন্ম তৈরি হচ্ছে, যা দীর্ঘমেয়াদে একটি রাষ্ট্রের ভবিষ্যতের জন্য অশনিসংকেত।
শুধু বাল্যবিয়েই নয়; শিশুশ্রম, সহিংসতা, অপব্যবহার ও শোষণের শিকার হচ্ছে বাংলাদেশে লক্ষাধিক শিশু। কিন্তু রাষ্ট্রের যেন টনক নড়ছে না! তাই তো শিশুদের অধিকার রক্ষার দাবিতে এগিয়ে আসছে শিশুরাই। তারা নিজেরা সংগঠিত হচ্ছে। তৈরি করছে নিজেদের প্ল্যাটফর্ম। আলোচনা করছে নিজেদের সমস্যা নিয়ে। সমাধানে নিজেরাই উদ্যোগী হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘ওয়ার্ল্ড ভিশন’ দেশে তাদের কর্ম এলাকায় শিশুদের সংগঠিত করে শিশু ফোরাম বা শিশুদের সংগঠন তৈরি করতে ভূমিকা রাখছে। শিশু ফোরামের সদস্যদের শিশু সুরক্ষার প্রশিক্ষণ দিচ্ছে এবং শিশু ফোরাম গঠনের মাধ্যমে শিশু সুরক্ষা ও শিশু অধিকার নিয়ে শিশুরা নিজেরাই তাদের কণ্ঠস্বর প্রসারিত ও উচ্চকিত করছে। ঢাকার বারিধারায় কাজ করা তেমনই একটি শিশু সংগঠন হলো ‘সূর্যোদয় শিশু ফোরাম’। বাল্যবিয়ে, শিশুশ্রম প্রতিরোধে তারা অভিভাবকদের সচেতন করছে এবং ধর্মীয় নেতা (কাজি), স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশের সহায়তায় বাল্যবিয়ে ও শিশুশ্রম প্রতিরোধ করে যাচ্ছে। এমনকি তারা জাতীয় বাজেটে শিশুকল্যাণে অর্থ বাড়াতে স্থানীয় সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে। তাদের উদ্যোগে প্রতিটি পুলিশ স্টেশনে শিশুবান্ধব হেল্প ডেস্কও স্থাপিত হচ্ছে। এ ছাড়া শিশুরা আরও অনুপ্রেরণামূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়ে নিজেদের মানসিক ও সামাজিক বিকাশ নিশ্চিত করে যাচ্ছে। সারাদেশে ওয়ার্ল্ড ভিশনের উদ্যোগে ২৭টি জেলায় সূর্যোদয় শিশু ফোরামের মতো ২ হাজার ৩২৮টি শিশু সংগঠনে ৬৩ হাজার ৯৮৬ শিশু যুক্ত রয়েছে। তারা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রমের মাধ্যমে সমাজের অবহেলিত শিশুদের পাশে দাঁড়াচ্ছে এবং অন্য শিশুরাও যেন সুরক্ষিত থাকে, সে লক্ষ্যে নিজেদের নেতৃত্ব বিকশিত ও শক্তিশালী করছে।
উন্নয়ন কর্মী ও সহকারী, শিশু সুরক্ষা কর্মকর্তা, ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন