কালামিলা চাকমার বয়স ৪৯ বছর। তিনি খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার ভিতর তারাবনিয়া গ্রামের বাসিন্দা। স্বামীহারা এই নারীর তিন ছেলে থাকলেও আলাদা থাকেন সবাই। তিনি থাকতেন জরাজীর্ণ কুঁড়েঘরে। কালবৈশাখী রাতে নিদ্রাহীন কাটাতেন। পাহাড় থেকে লাকড়ি কুড়িয়ে বাজারে বিক্রি করেন এই নারী। লাকড়ি বিক্রির আয়েই চলে তাঁর সংসার। ঘর নিয়ে কষ্টের সীমা ছিল না। তবে তাঁর কষ্টের দিন ফুরিয়েছে। সম্প্রতি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পেয়েছেন। ঘর পেয়ে যেন আনন্দের সীমা নেই তাঁর।  
কালামিলা চাকমা বলেন, ‘একই ঘরে থাকা-খাওয়া, রান্নাবান্না, স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন ব্যবস্থা। আমার মতো সহায়-সম্বলহীন একজন নারীর জীবনে এরচেয়ে বেশি পাওয়ার আর কী আছে! প্রধানমন্ত্রীর মানবিকতায় জরাজীর্ণ কুঁড়েঘর ছেড়ে এখন স্বপ্নের নতুন ঘরে নতুন জীবন শুরু করেছি।’

শুধু কালামিনা চাকমাই নন, গ্রামটিতে এমন ঘর পেয়েছে আরও ১৩টি পরিবার। উপজেলা সদর থেকে গ্রামটির দূরত্ব সাত কিলোমিটার। হেঁটে যাওয়ার কোনো বিকল্প নেই। পাহাড়ি আঁকাবাঁকা, উঁচুনিচু পথ বেয়ে যেতে হয় গ্রামটিতে।

গত রোববার গিয়ে গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এক সময় নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিলেন এই গ্রামের বাসিন্দারা। স্বাধীনতার ৫০ বছর পর ২০২২ সালের শুরুর দিকে গ্রামটি পরিদর্শন করেন তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহমিদা মোস্তফা। সে সময় পাঁচটি পরিবারকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর দেন ইউএনও। বর্তমান ইউএনও মুহাম্মদ আরাফাতুল আলম গ্রামের আরও ১৪টি পরিবারকে বরাদ্দ দিয়েছেন ঘর। আগামীকাল আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের হাতে নবনির্মিত ঘরের চাবি হস্তান্তর করা হবে। তবে এরই মধ্যে ঘরে বসবাস শুরু করে দিয়েছেন সুবিধাভোগীরা।

‘দুই বেলা খাবার ব্যবস্থা করতে যেখানে পান্তা ফুরায় অবস্থা, সেখানে টিনের ছাউনির পাকা ঘরে বসবাস তো আমার জন্য সোনার হরিণ। আমাদের মতো ছিন্নমূল মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য মমতাময়ী প্রধানমন্ত্রীর দীর্ঘায়ু কামনা করছি।’ বলছিলেন গ্রামটির আরেক সুবিধাভোগী নারী সুমিতা চাকমা।

গ্রামপ্রধান মায়াজয় চাকমা বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার ৫০ বছর পর সহায়-সম্বলহীন মানুষগুলো ভাগ্য বদলের স্বপ্ন দেখছেন। উপজেলা প্রশাসনের নানামুখী উদ্যোগ গ্রামবাসীর মুখে হাসি ফুটেছে। তাই এ বছর নতুন ঘরে ঐতিহ্যবাহী সামাজিক উৎসব বৈসাবি পালনের উদ্যোগ নিয়েছেন বাসিন্দারা।

ইউএনও মুহাম্মদ আরাফাতুল আলম বলেন, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে বাদ দিয়ে সমৃদ্ধ দীঘিনালা গড়া সম্ভব নয়। তাই ভিতর তারাবনিয়াবাসীর উন্নয়নে নানামুখী পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সেই পরিকল্পনার আওতায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর ও স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করার পাশাপাশি বিশুদ্ধ খাবার পানি, সোলার প্যানেল স্থাপনের মাধ্যমে বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ এবং সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।