সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাজেদুল ইসলামসহ ছয় সরকারি কর্মকর্তা ও সাত সরকারি জমি দখলকারীর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়েছে। দখলদারের কবল থেকে জমি উদ্ধারে ভূমিকা না রেখে উল্টো প্রতিকার প্রার্থীর কাছে ঘুষ চাওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে মামলায়।

জগন্নাথপুর পৌর শহরের হবিবপুর গ্রামের বাসিন্দা মুহিতুর রহমান তালুকদার নামে একজন আইনজীবী গতকাল সোমবার সুনামগঞ্জের সিনিয়র স্পেশাল জজ ও দায়রা জজ আদালতে মামলাটি দায়ের করেন। আদালত মামলাটি গ্রহণ করে সিলেটের দুর্নীতি দমন কমিশনকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেন ।

ইউএনওর দাবি, এই ঘটনার সূত্রপাত তিনি যোগদান করার আগে। আর মামলার আরজিতে বলা হয়েছে, সার্ভেয়ার ঘুষ দাবি করেছেন। তবে সার্ভেয়ার সেটি অস্বীকার করেছেন।

মামলার এজাহারে  উল্লেখকৃত বিবাদীরা হলেন– ইউএনও সাজেদুল ইসলাম, সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহফুজুল আলম মাসুম, সাবেক সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইয়াসির আরাফাত, সাবেক সার্ভেয়ার আব্দুল মোনায়েম খান, বর্তমান সার্ভেয়ার মুহিবুর রহমান ও ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা একে এম নাজমুল হুদা খান। অন্যরা হলেন– হবিবপুর গ্রামের বাসিন্দা আলকাব আলী, সিজিল মিয়া, রুহিন মিয়া, সুজাত মিয়া, আবু শায়েক, আলী আকবর ও জামাল মিয়া।

মামলার তথ্যমতে, জগন্নাথপুর পৌর এলাকার হবিবপুর মৌজার এক নম্বর খতিয়ানের ১২৫ নম্বর দাগের ২২ শতক গোপাট ও রাস্তার জমি ২০১৪ সালে জবরদখল করেন আলকাব আলী, সিজিল মিয়া, রুহিন মিয়া, সুজাত মিয়া, আবু শায়েক, আলী আকবর ও জামাল মিয়া। এলাকাবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ওই সরকারি জমি থেকে দখলদারদের উচ্ছেদের জন্য ২০২০ সালের ৮ সেপ্টেম্বর সুনামগঞ্জের রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর (আরডিসি) দখলকারীদের সাত দিনের মধ্যে উচ্ছেদের জন্য নির্দেশ দেন।

মামলার বাদী সিলেট জজ আদালতের অ্যাডভোকেট মুহিতুর রহমান তালুকদার জানান, দখলদাররা ভূমি অফিসের কর্মচারীদের ম্যানেজ করেই সরকারি ভূমিতে দোকানপাট ও পাকা বসতঘর করে আছেন। উচ্ছেদের কোনো প্রতিকার না পেয়ে ২০২১ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক বরাবর আবারও আবেদন করা হয়। জেলা প্রশাসক ওই সময় জেলা রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর আরডিসিকে ব্যবস্থা গ্রহণের দায়িত্ব দেন। পরে আরডিসি ওই বছরের ২৪ অক্টোবর ইউএনও সাজেদুল ইসলামকে অবৈধ দখলকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। এর পর তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি সার্ভেয়ার মুহিবুর রহমানের পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করতে বলেন। সার্ভেয়ারের সঙ্গে কথা বললে তিনি দুই লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। তিনি এর প্রতিবাদ জানালে সার্ভেয়ার পুলিশের ভয়ভীতি দেখান।

বাদীর আইনজীবী সুনামগঞ্জ জেলা বারের সদস্য আবুল আজাদ রুমান জানান, আদালত মামলাটি দুর্নীতি দমন কমিশন সিলেটকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে আদেশ দিয়েছেন।

ইউএনও সাজেদুল ইসলাম জানান, মামলার বিষয়টি শুনেছেন, তবে তাঁর কাছে কোনো কাগজ যায়নি। যে ইস্যুতে মামলা হয়েছে তার সূত্রপাত তিনি জগন্নাথপুরে যোগদানের আগে। মামলায় তৎকালীন ইউএনও-এসিল্যান্ডকে যুক্ত করা হয়েছে। সার্ভেয়ার ঘুষ চেয়েছেন বলে দাবি করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলবেন বলেও জানান তিনি।