ঢাকা মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪

টিকে থাকার প্রাচীন কৌশল শেখায় বন

বুশক্রাফট

টিকে থাকার প্রাচীন কৌশল শেখায় বন

ধৈর্য, অধ্যবসায়, পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা ও প্রাণোচ্ছলতার বিকাশ ঘটায় বুশক্রাফট - বিবিসি

শিলু হোসেন

প্রকাশ: ২৪ মার্চ ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ২৫ মার্চ ২০২৩ | ০০:২৪

গহিন বন। চারপাশে কেউ নেই; সঙ্গে নেই খাবার ও পানি। আছে বন্যপশুর ভয়, যে কোনো সময় প্রাণহানির শঙ্কা। এমন পরিস্থিতিতে মানুষ কীভাবে ও ক’দিন বেঁচে বা টিকে থাকতে পারে? এ বিষয়টি একই সঙ্গে ভয়ের এবং উত্তেজনার। আদিম মানুষের মতো এভাবে টিকে থাকার অভিজ্ঞতা নিতে অনেকে বন ও জনহীন প্রান্তরে ক্যাম্পিংয়ে যান, যাকে বলা হয় বুশক্রাফট। এরকম জায়গায় টিকে থাকার প্রাচীন কৌশল শিখতে চাওয়া মানুষের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।

বুশক্রাফটে দক্ষরা বলছেন, মানুষ এখন আরাম-আয়েশে ডুবে থাকতে চায়। অতি কঠিন পরিস্থিতিতে কীভাবে টিকে থাকতে হয়, সে জ্ঞান অনেকেরই নেই। অফিস কিংবা বাড়িতে একটি কল ঘোরালেই বের হয় বিশুদ্ধ পানি, এক বোতামের স্পর্শে ঘর উষ্ণ ও ঠান্ডা হয়। মোবাইল ফোন হাতে তুলে কল করে বললেই মুহূর্তে দরজায় হাজির হচ্ছে খাবার। এত আরামে ডুবে থেকে মানুষ প্রকৃতির ছন্দ ও সম্পদের সঙ্গে যোগাযোগ হারিয়ে ফেলছে। এই ভারসাম্যহীনতা দূর করতে দরকার বনে টিকে থাকার দক্ষতা এবং অনুশীলন, যে দক্ষতা বুশক্রাফটে অর্জন সম্ভব। কারণ, বুশক্রাফটে গিয়ে খাবার নিজে সংগ্রহ করতে হয়। অনেকে মাছ ধরে খায়। মাছ ধরার যন্ত্রটাও বানাতে হয় নিজ হাতে। অনেকে আবার জঙ্গলে ঘুরে মাশরুম সংগ্রহ করে খায়।

যুক্তরাজ্য ও উত্তর ওয়েলসে ‘অরিজিনাল আউটডোর’ নামে বুশক্রাফট প্রশিক্ষণ সংস্থা রয়েছে। এর প্রশিক্ষক রিচার্ড প্রিডাক্স বুশক্রাফটের মানসিক স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে বলেন, বাড়ির বাইরে থাকলেই মানসিক স্বাস্থ্য ব্যাধি নিরাময় হবে, তা নয়। তবে এর সুবিধাগুলো স্পষ্ট। বাইরে থাকা কিংবা পরিচিত দৃশ্য থেকে দূরে থাকলে মানুষের মস্তিষ্কের পরিবর্তন হয়। এটি সমস্যাগুলো দূর করে না, তবে সমস্যাকে ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার সুযোগ করে দেয়।

বনে ক্যাম্পিং ও মাছ ধরাসহ বিভিন্ন দৃশের ভিডিও ধারণ করে ইউটিউবে আপলোড করে পরিচিত পল হেইস। বুশক্রাফট মনের শক্তিবর্ধক ওষুধ হিসেবে কাজ করে বলে মনে করেন তিনি। হেইস বলেন, বনে গিয়ে জীবনে প্রথমবার জুতার ফিতা ও ছুরি দিয়ে ধনুক ড্রিল বানিয়ে ঘষে ঘষে আগুন জ্বালিয়েছিলাম। যদিও একটু সময় লেগেছিল, তবে এটি আমার জীবনের সেরা পাঁচটি কাজের একটি। প্রযুক্তির বাইরে গিয়ে কিছু জয় করার মধ্যে এক ধরনের আদিম অনুভূতি রয়েছে।

পূর্ব ইংল্যান্ডের এসেক্সে ‘ডিসকভার বুশক্রাফট’ নামের সংগঠন রয়েছে হেলেন পেইনের। সংগঠনটি একটি কোর্সের মাধ্যমে বিশেষ করে নারীদের বুশক্রাফট সম্পর্কে জানতে সহায়তা করে। করোনার প্রকোপ ঠেকাতে প্রথম লকডাউনের পর ‘উইমেন ইন দ্য উডস’ নামে ফেসবুক পেজ খোলেন তিনি। তাঁর অনুসারীদের ৮০ শতাংশ নারী।

হেলেন বলেন, তাঁরা হোম স্কুলিং এবং বাড়ি থেকে অফিস করতেন। নিজের জন্য তাঁদের কিছু দরকার ছিল। প্রকৃতির সঙ্গে যুক্ত হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। নতুন দক্ষতা অর্জন এবং বাইরে থাকা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। একটি কফি টেবিলের চারপাশে বসে থাকার চেয়ে আগুন জ্বালিয়ে (ক্যাম্পফায়ার) চারপাশে বসে থাকার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। সূর্যের নিচে যে কোনো বিষয় নিয়ে কথা বলা যায়।

ফেন্টনের মতে, বুশক্রাফট মানুষের ধৈর্য, অধ্যবসায়, নম্রতা, পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা ও প্রাণোচ্ছলতার বিকাশ ঘটায়। সেই সঙ্গে বাড়ায় আত্মনির্ভশীলতা। আদিবাসী সম্প্রদায়ের লোকেরা অল্প বয়স থেকেই নিজেদের মধ্যে এসব গুণবলি লালন করে, যা আমাদের প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থায় অনুপস্থিত। আমাদের আর লাঠি ঘষে আগুন জ্বালাতে হয় না। এ ছাড়া কোন গাছ ঔষধি, সেটা জানারও দরকার পড়ে না। কিন্তু এগুলোই আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছে। পল হেইসের মতে, প্রকৃতি আপনার কাছে কিছু বিক্রি করার চেষ্টা করবে না। এর কোনো উদ্দেশ্য নেই। প্রকৃতি সৎ ও সত্য। সে কখনও মানুষের সঙ্গে মিথ্যা বলে না। সূত্র: বিবিসি।

আরও পড়ুন

×