বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও প্রধানমন্ত্রীর সাংবিধানিক ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা জাতিসংঘ সনদ ও আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী বলে মনে করছে সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশন। সংগঠনটির দাবি, দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকাশিত প্রতিবেদনটি একপেশে, পক্ষপাতদুষ্ট ও অসত্য।

শনিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটি মিলনায়তনে সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশনের এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলা হয়।

সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশনের মহাসচিব অধ্যাপক মোহাম্মদ আবেদ আলী সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে পাঠ করেন। তিনি বলেন, 'গত ২০ মার্চ যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাতে উল্লেখ করা হয়েছে- গণতন্ত্র ত্রুটিপূর্ণ। প্রতিবেদনটি একপেশে, পক্ষপাতদুষ্ট ও অসত্য। যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আমাদের প্রশ্ন- পৃথিবীর কোন দেশে ত্রুটিমুক্ত গণতন্ত্র রয়েছে, তারা বলতে পারবে কী? যুক্তরাষ্ট্র তাদের নিজ দেশে নির্বাচনের বিরুদ্ধে ক্যাপিটল হিলে দাঙ্গা বাধিয়েছিল এবং তাতে প্রাণ ঝরেছে। এ প্রেক্ষিতে আমরা বলছি না বাংলাদেশের গণতন্ত্র শতভাগ ত্রুটিমুক্ত, কিন্তু গণতন্ত্র ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সরকার তথা মানবাধিকার সংগঠনগুলো প্রতিনিয়ত সোচ্চার।'

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, প্রতিবেদনে যে দুইটি সংগঠন ও ব্যক্তিদের সূত্র উল্লেখ করা হয়েছে তারা অনিবন্ধিত এবং রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত নয়। দুইটি সংগঠনের একটি ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরের সমাবেশে হতাহতের সংখ্যা নিয়ে যে তথ্য দিয়েছিল তা বিভ্রান্তিমূলক। এ ছাড়া বিভিন্ন নাগরিক সংগঠনের দাবির প্রেক্ষিতে বর্তমান সরকার ‘নির্বাচন কমিশন আইন’ করেছে। বর্তমান নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে বেশ কিছু নির্বাচনে তাদের নিরপেক্ষতা, যোগ্যতা ও সাহসিকতা প্রমাণ করেছে।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, এবারের প্রতিবেদনটি ২০২২ সালের মানবাধিকার পরিস্থিতির ওপর হলেও বিস্ময়করভাবে এতে ২০১৮ সালের নির্বাচনের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে এ ধরনের গ্রহণযোগ্যতার প্রশ্ন তোলা সাধারণ নাগরিকরে কাছে রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট বলে মনে হচ্ছে।  এ ছাড়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ নিয়ে প্রতিবেদনে যা বলা হয়েছে তা সঠিক নয়।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, রাষ্ট্রের মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতি এই রাষ্ট্রটির সমান মনোযোগ থাকা উচিত। তাছাড়া একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও মানবাধিকার নিয়ে প্রশ্ন তোলা অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের শামিল এবং স্পষ্টতই জাতিসংঘ সনদের পরিপন্থী।

সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশনের মহাসচিব বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ ধরনের প্রতিবেদন প্রকাশের আগে সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিতপূর্বক সত্যতা যাচাই ও আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ  দেওয়ার দরকার ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনে শ্রম অধিকার বিষয়ে উল্লেখিত ইস্যুতে সরকারের বিবেচনা করা ও যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলে মনে করেন তারা।

সভাপতির বক্তব্যে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি ছিদ্দিকুর রহমান মিয়া বলেন, 'বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি পৃথিবীর বহু দেশের চেয়ে ভালো। আমাদের বিচার বিভাগের যোগ্যতা ও সততা নিয়ে প্রশ্ন তোলায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রকাশিত প্রতিবেদনটির প্রতি নিন্দা জানিয়ে তা প্রত্যাখ্যান করছি।'

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন, আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. আবুল কালাম আজাদ, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবুল হাসেম, ইলেকশন মনিটরিং ফোরামের পরিচালক ইকবাল বাহার প্রমুখ।