- বাংলাদেশ
- আজো ‘ডমখা’য় সেহরির আহ্বান
আজো ‘ডমখা’য় সেহরির আহ্বান

শাহজালাল (রা.)-এর মাজার এলাকায় ডমখা বাজিয়ে স্থানীয়দের সেহরির আহ্বান জানাচ্ছেন তদারককারীরা সমকাল
প্রযুক্তির প্রবাহমানতা এবং কালের বিবর্তনে সিলেট অঞ্চলের বিশেষ করে হজরত শাহজালাল (রা.)-এর মাজারের পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোর এক সময়ের ঐতিহ্যবাহী ডমখার রেওয়াজ এখন আর শোনা যায় না। একটা সময় রমজান মাস এলেই সেহরির সময় মানুষকে ডমখা বাজিয়ে ঘুম থেকে জাগানোর রেওয়াজ প্রচলিত ছিল সিলেটজুড়েই, যার প্রচলন হয় হজরত শাহজালাল (রহ.)-এর সিলেট আগমনের পর থেকে। তবে এখনও সিলেটে ‘বাজে ডমখা’। তবে এটি পুরো এলাকা জুড়ে নয়। শুধু মাজারকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে ঐতিহ্যের এই ডমখা বাজার প্রক্রিয়া।
বৃহস্পতিবার রাত ২টা। হযরত শাহজালাল (রহ.) প্রধান ফটকের সামনে ঢাকের শব্দ। শব্দ শুনে লোকজন জড়ো হতে থাকেন। বেশ কিছু সময় ডমখাবাদকরা ফটকের সামনে অবস্থান করেন। একজনের পিঠে থাকে ‘ডমখা’। অপরজন পিঠে থাকা ডমখায় দুই হাতে থাকা কাঠি দিয়ে জোরে আঘাত করতে থাকেন। প্রচণ্ড শব্দে ঘুম থেকে জেগে ওঠেন লোকজন। ধারাবাহিকভাবে চারজন মিলে এটি পেটাতে থাকেন। রাত ২টা থেকে শুরু হয় ডমখার বাজনা। পুরো দরগাহ এলাকা ঘুরে ফের প্রধান ফটকের সামনে গিয়ে শেষ হয় এই কার্যক্রম।
এই কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত আছেন মাজারের ভক্ত ও কর্মচারীরা। যখন যে সুযোগ পান তখনই ডমখা বাজাতে আসেন বলে জানালেন প্রবীণ ডমখাবাদক হীরা মিয়া। তিনি জানান, এটি দেখতে ঢোলের মতো। তবে তারা এটিকে ডমখা বলে থাকেন।
তিনি জানান, ১৯৭১ সাল থেকে এই ডমখা বাজাচ্ছেন। তাঁর আগে মুকিত মিয়া নামে একজন বাজাতেন। তাঁর কাছ থেকে তিনি সেটি রপ্ত করেন। প্রয়াত মুকিত মিয়া তাঁকে জানিয়েছেন ধারাবাহিকভাবে এটি চলে আসছে। তিনিও বাজাচ্ছেন ৫২ বছর ধরে। তিনি জানান, এটি ধরে রেখেছেন মাজারের মোতাওয়াল্লি ও খাদেমরা। তাই তিনিও এখনও রমজান এলে এটি বাজাতে কার্পণ্য করেন না।
মাজার এলাকার বাসিন্দা ব্যাংকার আবু সায়েম জানান, তিনি দরগাহ এলাকায় ভাড়া থাকেন বছর তিনেক ধরে। এই তিন বছর ধরে ডমখার আওয়াজে তাদের এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের ঘুম ভাঙে। তিনি এই ঐতিহ্য যেন টিকে থাকে সেই প্রত্যাশার কথাও জানান।
এ ব্যাপারে শাহজালাল (রহ.) মাজারের মোতোওয়াল্লি সরেউকম ফতেহ উল্লাহ আল আমান সমকালকে বলেন, ‘আমি ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি ডমখার প্রচলন। বাবার কাছ থেকে শুনেছি তিনিও ছোটবেলা থেকে দেখে আসছেন এই রেওয়াজ। এভাবেই সেই সাড়ে ৭শ বছর ধরে চলছে ডমখা বাজানোর রীতি। আগে সাইরেন বা অন্য কিছু ছিল না। এ কারণে সিলেটজুড়ে ডমখা বাজানো হতো। এখন প্রযুক্তি সেই ঐতিহ্যের স্থান দখল করেছে। তারা শুধু সেই ঐতিহ্যের ধারক হওয়ার চেষ্টা করছেন।’
মন্তব্য করুন