- বাংলাদেশ
- বেরিয়ে আসছে নানা অপকর্মের কাহিনি
ঢাবির ‘প্রলয় গ্যাং’ এর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ
বেরিয়ে আসছে নানা অপকর্মের কাহিনি

ঢাবির ডা. শহীদ মোর্তজা মেডিকেল সেন্টারের তৃতীয় তলায় কার্যালয় বানিয়েছে প্রলয় গ্যাং-সংগৃহীত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) ছিনতাই, চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মে জড়িত ‘প্রলয়’ গ্যাংয়ের সদস্যদের হাতে আহত শিক্ষার্থীর মা শাহবাগ থানায় অভিযোগ করেছেন। অভিযোগে গ্যাংয়ের ২৪ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। এদিকে অনেক ভুক্তভোগী প্রলয় গ্যাংয়ের অপকর্ম সম্পর্কে মুখ খুলতে শুরু করেছেন। বিষয়টি সমকালকে নিশ্চিত করে থানার ওসি নুর মোহাম্মদ বলেছেন, তাঁরা বিষয়টি তদন্ত করছেন।
অভিযুক্তরা হলেন– মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল ও শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়নের ছাত্র তবারক মিয়া, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল ও ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস বিভাগের ফয়সাল আহমেদ সাকিব ও ফারহান লাবিব, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল ও দর্শন বিভাগের অর্ণব খান, মার্কেটিং বিভাগের মোহাম্মদ শোভন ও বিপ্লব হাসান জয়, কবি জসীম উদ্দীন হল ও নৃবিজ্ঞান বিভাগের নাইমুর রহমান দুর্জয়, কবি জসীম উদ্দীন হল ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাদ, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজেমেন্টের সিফরাত সাহিল, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল ও সমাজকল্যাণ বিভাগের হেদায়েতুন নুর, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের মাহিন মনোয়ার এবং তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের সাদমান তাওহিদ বর্ষণ, একই হলের আব্দুল্লাহ আল আরিফ, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল এবং ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের সৈয়দ নাসিফ ইমতিয়াজ, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের আবু রায়হান, জগন্নাথ হল ও লোকপ্রশাসন বিভাগের প্রত্যয় সাহা, জসীম উদ্দীন হলের রহমান জিয়া, চায়নিজ ল্যাঙ্গুয়েজ বিভাগের ফেরদৌস আলম ইমন, ফাইন্যান্স বিভাগের মোশারফ হোসেন, জগন্নাথ হলের জয় বিশ্বাস।
অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে– অভিযুক্তরা প্রাইভেটকারে সামাজিক বিজ্ঞান চত্বরে ঘুরছিলেন। এ সময় তাঁদের গাড়ির চাকা থেকে কাদা এসে ভুক্তভোগীদের গায়ে পড়ে। পরে ভুক্তভোগীরা তিন নেতার মাজারের পাশে গাড়িটি চিনতে পারেন এবং জিজ্ঞেস করলে ক্ষেপে যান অভিযুক্তরা। তারপর ভুক্তভোগীরা চলে এলে তাঁকে ফোন করে ডেকে মারধর করা হয়।
জানা যায়, সাকিবের বন্ধু সিয়ামের প্রাইভেটকারে তাঁরা ঘুরছিলেন। সিয়াম একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সিএ পড়েন। তাঁরা একত্রে নেশা করেন। এ সময় গাড়িতে আরও ছিলেন সাকিব, দুর্জয়, প্রত্যয়, আরিফ। ভুক্তভোগীদের গাড়ি আটকালে বন্ধুর সামনে অপমানবোধ করেন সাকিব। সেই জের ধরে তবারক, নাসিফসহ বাকিদের ডেকে গ্যাংয়ের সদস্যরা মারধর করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সম্প্রতি ‘আইল্যান্ড’ নামে একটি কোম্পানির পানির ব্যবসা শুরু করেছে এই গ্যাং। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ওয়াসা ভবনের এক রুমকে বানিয়েছে তাদের পানির স্টোর রুম। ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন থেকে চানখাঁরপুল পর্যন্ত দোকানগুলোতে তারা তাদের সরবরাহ করা পানি নিতে বাধ্য করে। এর আগে এক ব্যক্তি ‘জীবন’ কোম্পানির পানি এই দোকানগুলোতে সরবরাহ করতেন। তাঁকে হুমকি-ধমকি দিয়ে পানি বিক্রি করতে নিষেধ করে তারা।
ভুক্তভোগী সেই ব্যক্তি সমকালকে বলেন, ‘আমাকে তারা হুমকি দেয়– আপনে আর পানি বেচতে পারবেন না। গত দুই মাস থেকে ওই এলাকায় যাইতে পারি না, ব্যবসা তো দূরের কথা।’ শাহবাগ, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, মেডিকেল মোড় এবং চানখাঁরপুলের দোকানিদের সঙ্গে কথা বলে এ ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই গ্যাংয়ের সদস্যরা চাঁদাবাজি করে ক্যাম্পাস ও উদ্যানে বসা ছেলেমেয়েদের টার্গেট করে তাদের কাছ থেকে সর্বস্ব কেড়ে নেয়। আর এ কাজটি চলে নাসিফের নেতৃত্বে।
এদিকে শাহবাগ থানার এক উপপরিদর্শককে গ্যাং সদস্যদের ছবি দেখানো হলে তিনি সবাইকে শনাক্ত করেন এবং বিভিন্ন সময়ে ছিনতাইসহ নানা কারণে তাদের আটক করা হয়েছে বলে জানান। নাম না প্রকাশের শর্তে তিনি সমকালকে বলেন, প্রায় সময়ই উদ্যানে তাদেরকে দেখি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হওয়ার কারণে মৌখিকভাবে অনেক অভিযোগের সমাধান করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে তাদের।
প্রক্টর ড. একেএম গোলাম রব্বানী বলেন, কবি জসীম উদ্দীন হল একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। পাশাপাশি থানায় অভিযোগ দাখিল হয়েছে। আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছি। এদিকে মারধরের ঘটনায় পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন বলে জানিয়েছেন কবি জসীম উদ্দীন হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আব্দুর রশীদ।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ওই গ্যাং সম্পর্কে অবগত হয়েছি। ক্যাম্পাসকে নিরাপদ রাখতে যা করতে হয়, তা-ই করা হবে। বখাটে, উচ্ছৃঙ্খল, চাঁদাবাজদের ঠাঁই এখানে হবে না।
মন্তব্য করুন