- বাংলাদেশ
- ঢামেকের ইন্টার্ন চিকিৎসককে মারধরের অভিযোগ ‘প্রলয় গ্যাংয়ের’ বিরুদ্ধে
ঢামেকের ইন্টার্ন চিকিৎসককে মারধরের অভিযোগ ‘প্রলয় গ্যাংয়ের’ বিরুদ্ধে

প্রলয় গ্যাং। ফাইল ছবি
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (ঢামেক) ইন্টার্ন চিকিৎসক এ কে এম সাজ্জাদ হোসেনকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মারধরের অভিযাগ উঠেছে ‘প্রলয় গ্যাংয়ের’ বিরুদ্ধে। গ্যাংয়ের একজন সদস্য ও সদস্যদের ঘনিষ্ঠ এক বন্ধু এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সূত্র বলছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) প্রলয় গ্যাংয়ের সদস্যরাই গত বছরের আগস্টে ওই চিকিৎসককে মারধর করে।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ইন্টার্ন চিকিৎসক শাহবাগ থানায় জিডি করেন এবং বিচারের দাবিতে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা কর্মবিরতিতেও যান।
তবে, এতদিনে মারধরের ঘটনায় কারা জড়িত সে তথ্য জানতে পারেনি শাহবাগ থানা পুলিশ।
এ দিকে ‘প্রলয় গ্যাংয়ের’ সদস্যদের ছবি দেখে ভুক্তভোগী চিকিৎসক সাজ্জাদ হোসেন কয়েকজনকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন। তিনি সমকালকে বলেন, ‘ঘটনার পরে ঢাবির ছাত্র পরিচয়ে একজন তাকে ফোন করেন। তিনি প্রলয় গ্যাংয়ের সদস্য তবারকের ‘বড় ভাই’ হিসেবে পরিচয় দেন। ওই ‘বড় ভাই’ তবারকের পক্ষ নিয়ে কথা বলেন। পরে তবারক নিজে আমার মোবাইল ফোনে কল করে ক্ষমা চান।’
সাজ্জাদ বলেন, ‘আমার কাছে তবারক ফোন দিয়ে বলেন, তিনি আমার এলাকার (কিশোরগঞ্জ)। তার বাবা নাই। তিনি অসহায়। ঘটনার দিন তিনি কিছু করেননি বলে জানান। তবে প্রলয় গ্যাংয়ের এই সদস্যরাই আমাকে মারধর করেন।’
ওই গ্যাং সদস্যদের এক বন্ধুর সঙ্গে সমকালের কথা হয়। সদস্যরা নিয়মিতই চিকিৎসককে মারধরের কথা গর্ব করে বলতেন বলে জানান তিনি। ঘটনার বর্ণনা দিয়ে গ্যাং সদস্যদের ওই বন্ধু বলেন, সেদিন শহীদ মিনারে চিকিৎসক সাজ্জাদ হোসেন একা বসা ছিলেন। এ সময় প্রলয় গ্যাংয়ের সদস্যরা তার পরিচয় জানতে চান। তবে আইডি কার্ড না দেখানোয় ওই চিকৎসককে মারধর শুরু করে গ্যাংয়ের সদস্যরা। সাজ্জাদের বুকে প্রথম লাথি দেন মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল ও ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস বিভাগের ফয়সাল আহমেদ সাকিব। তারপর থাপ্পড় মারেন শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়নের তবারক মিয়া। পরে এলোপাথাড়ি মারধর শুরু করেন ফাইন্যান্স বিভাগের মোশারফ হোসেন, বঙ্গবন্ধু হলের মুরসালীন ফাইয়াজ, কবি জসীমউদ্দিন হল ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাদ ও একই হলের রহমান জিয়া। সবাই তখন মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন।
এর আগে, রোববার রাতে গ্যাংয়ের এক সদস্য ইন্টার্ন চিকিৎসককে মারধরের বিষয়টি প্রথম স্বীকার করেন। অনুসন্ধানে ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়।
জানা গেছে, তবারক মিয়া সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ শাখা ছাত্রলীগের পরিকল্পনা ও কর্মসূচিবিষয়ক উপ-সম্পাদক। তিনি বঙ্গবন্ধু টাওয়ারে ভাড়া থাকেন।
সোমবার সন্ধ্যায় সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘‘প্রথমে এসে তারা আমার পরিচয় জানতে চান। আমি ঢামেকের ইন্টার্ন চিকিৎসক, তা জানাই। পরে আমাকে আইডি দেখাতে বলেন তারা। সঙ্গে আইডি কার্ড না থাকায় আমি বলি যে, সবসময় কি মানুষ আইডি কার্ড নিয়ে ঘুরবে? এর পরপরই তাদের একজন মানিব্যাগ বের করে আইডি কার্ড দেখিয়ে বলেন, ‘আমার আইডি কার্ড আছে, তোর নাই কেন? এরপর তিনি আমার বুকে লাথি মারেন। তারপর এলোপাথাড়ি মারধর শুরু করেন তারা।’’
চিকিৎসকের মারধরের ঘটনায় করা জিডির বিষয়ে শাহবাগ থানার ওসি নুর মোহাম্মদ সমকালকে বলেন, ইন্টার্ন চিকিৎসককে মারধরের বিষয়ে কোনো অগ্রগতি করতে পারেনি পুলিশ। তবে জোবায়েরকে মারধরের মামলায় তদন্ত চলছে।
প্রক্টর অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রব্বানী বলেন, বিষয়টি পুলিশ দেখছে। পুলিশকে সহযোগিতা করা হচ্ছে এবং নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।
গত শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি জসীমউদ্দিন হলের সামনে এক শিক্ষার্থীকে মারধর করে আলোচনায় আসে প্রলয় গ্যাং। এ বিষয়ে সমকালে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরপর ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর মা শাহবাগ থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় দুজনকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। এ দিকে জসীমউদ্দিন হল প্রশাসন এ ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
মন্তব্য করুন