চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় সাঙ্গু নদীতে গোসল করতে নেমে মো. সোহাদী হাসান সোহাগ নামে সাড়ে পাঁচ বছর বয়সী এক শিশু নিখোঁজের প্রায় ২১ ঘণ্টা পর মরদেহ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস।

মঙ্গলবার সকাল পৌঁনে আটটার দিকে চট্টগ্রাম ও সাতকানিয়া ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল উপজেলার কালিয়াইশ ইউনিয়নের বিওসির মোড়স্থ সাঙ্গু নদীর রেল ব্রিজ এলাকায় নদীর গভীরে প্রায় দুই ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে শিশুটির লাশ উদ্ধার করে।

শিশু সোহাগ বিওসির মোড়ের নতুনপাড়া এলাকার মনিরুল ইসলামের ছেলে। সে স্থানীয় একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিশু শ্রেণির শিক্ষার্থী। এর আগে গত বছরের মার্চ মাসে সাঙ্গু নদীতে গোসল করতে নেমে একই এলাকার আবদুস সবুরের পাঁচ বছর বয়সী কন্যা মুনতাহা প্রাণ হারিয়েছিল।

সাতকানিয়া ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের সিনিয়র স্টেশন কর্মকর্তা এস এম হুমায়ুন কার্ণায়েন বলেন,সকাল আনুমানিক ছয়টার দিকে চট্টগ্রাম আগ্রাবাদের পাঁচজন ও সাতকানিয়া ফায়ার সার্ভিসের আটজনসহ মোট ১৩ জন ডুবুরির একটি দল যৌথভাবে শিশুটি উদ্ধারের জন্য সাঙ্গু নদীতে অভিযান শুরু করে। প্রায় পৌঁনে দুই ঘণ্টা অভিযান শেষে নিখোঁজ হওয়া স্থানের প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ ফুট গভীরতা থেকে শিশুটির লাশ উদ্ধার করে নদীর তীরে উঠানো হয়।

হুমায়ুন কার্ণায়েন আরও বলেন, সোমবার সকালে শিশুটি সাঙ্গু নদীতে নিখোঁজ হওয়ার খবর শুনে সাতকানিয়া ফায়ার সার্ভিসের একটি দল শিশুটিকে উদ্ধারের জন্য অভিযান চালিয়েছিল। নদীতে জোয়ার থাকার কারণে অভিযান চালাতে গিয়ে বেশ বেগ পেতে হয়েছিল। এরপর অন্ধকার নেমে আসায় উদ্ধার কাজ অসমাপ্ত রেখেই নদী থেকে উঠে আসতে হয়েছিল উদ্ধারকারী দলকে। শিশুটির লাশ সাতকানিয়া থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে শিশু সোহাগের বাবা ও বাসের হেলপার মনিরুল ইসলাম বলেন, সোমবার সকাল ১১টার দিকে আমার বড় ছেলে মেহেদী হাসান সবুজের সাথে সাঙ্গু নদীতে গোসল করতে যায় ছোট ছেলে সোহাগ। তাদের সাথে পাড়ার আরও এক ছেলে ছিল। সোহাগ প্রথমে গোসল করতে নেমে পানি থেকে আর উঠেনি। বড় ছেলে ও পাড়ার ছেলেটি সোহাগ গোসল করে বাড়ি চলে গেছে মনে করে তারাও গোসল শেষে বাড়ি চলে আসে। কিন্তু বাড়ি এসে সোহাগকে না দেখে বিষয়টি আমাকে ও তার মাকে জানায়। পরে আমরা নদীর পাড়ে সোহাগের প্যান্ট ও জুতা পড়ে থাকতে দেখি। পরে স্থানীয় জেলে পাড়ার লোক ও জাল দিয়ে ছেলেকে খুঁজলেও পাওয়া যায়নি। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন এসে উদ্ধার করতে চেষ্টা করেও সফল হয়নি । সকালে নদী থেকে আমার ছেলের লাশ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল।

স্থানীয় ইউপি সদস্য আবদুল গফুর মুক্তা ও আবদুল আজিজ নামে একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করে বলেন, তমা কনস্ট্রাকশন ফার্মের ক্রমাগত বালু উত্তোলনের কারণে সাঙ্গু নদীর বিভিন্ন স্থানে বিশাল আকৃতির গর্তের সৃষ্টি হয়। বালু উত্তোলনের সময় তারা বাধা দিতে গেলে এলাকার কিছু দুর্বৃত্ত তাদের প্রথমে হুমকি-ধমকি দেয়। পরে পুলিশ দিয়ে মামলায় জড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখালে বালু উত্তোলন বন্ধে কেউ সাহস দেখাইনি।  শিশু সোহাগ গভীর গর্তের অথৈই জলের মধ্যে তলিয়ে নিখোঁজ হয়। শিশুটি যখন গোসল করতে নামে তখনো ৩০ ফুট দূরে তমা গ্রুপের ড্রেজার মেশিন চলছিল। তাদের ভাষায়, এমনও হতে পারে ড্রেজার মেশিনের টানে সোহাগ পানিতে তলিয়ে  গেছে ।

সাতকানিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ফায়ার সার্ভিসের কাছ থেকে লাশ বুঝে নেওয়া হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে শিশুটি পানিতে পড়ে মারা গেছে। তবুও পরিবার লাশ বুঝে নেওয়ার জন্য আবেদন করলে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তই চুড়ান্ত হবে। তবে এ ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের হয়েছে।