জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে কুষ্টিয়া-১ আসনে আওয়ামী লীগের কোন্দল ক্রমে প্রকাশ্যে আসছে। বর্তমান ও সাবেক দুই এমপির বলয় ছাড়াও কয়েকটি ধারায় বিভক্ত দলীয় নেতাকর্মীরা। তবে দুই এমপির তিক্ততা বাড়ছে। দৌলতপুর উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত আসনটির বর্তমান এমপি আ ক ম সরওয়ার জাহান বাদশা। তাঁর সঙ্গে সাবেক এমপি রেজাউল হক চৌধুরী বিবাদে জড়িয়েছেন।
এমপি সরওয়ার জাহান বাদশা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। রেজাউল হকের পদ সহসভাপতি। ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিদ্রোহী হিসেবে জয় পান রেজাউল। তাঁর ভাই উপজেলা যুবলীগের সভাপতি বুলবুল আহমেদ টোকেন চৌধুরীও মাঠে সক্রিয়। তিনি মনোনয়ন না পেলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারেন বলে আভাস মিলেছে।
দলীয় সূত্র জানায়, বিএনপির দখলে থাকা আসনটি ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণে আসে। উপজেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন  সভাপতি আফাজ উদ্দিন জয়ী হন। ২০১৪ সালে তিনি দলীয় মনোনয়ন পেলেও রেজাউল হক বিদ্রোহী হিসেবে জয় পান। ২০১৮ সালে মনোনয়ন পান বাদশা। উপজেলার অনেক নেতা এখন তাঁর সঙ্গে। তবে রেজাউল বিদ্রোহী হিসেবে জয়ী ও ভাই যুবলীগ সভাপতি হওয়ায় তাঁদেরও শক্ত অবস্থান রয়েছে। এ দুই বলয়সহ সক্রিয় পাঁচটি ধারা আছে বলে নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন।
জানা গেছে, বাদশার সময়ে চরে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন স্থাপনসহ কিছু উন্নয়ন কাজ হয়েছে। এ কারণে তিনি নিজেকে মনোনয়ন পাওয়ার দাবিদার মনে করছেন। তবে নদীভাঙনসহ কিছু সমস্যা এলাকার মানুষের ভোগান্তির কারণ। বিভেদ মিটিয়ে সবাইকে এক মঞ্চে আনা তাঁর জন্য কঠিন হতে পারে। যদিও পাঁচ বলয়ের তিনটি এখন তাঁর পক্ষে।
গত বছর যুব জোট নেতা আব্দুস সালাম হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় রেজাউলের পরিবারের কয়েকজনকে আসামি করে মামলা হলে দ্বন্দ্ব প্রকট হয়। মামলার পেছনে এমপির হাত আছে বলে অভিযোগ পরিবারটির। রেজাউলের অনুসারীরা বলছেন, স্বতন্ত্র নির্বাচন করে জয়ী হয়ে তিনি দলকে ঐক্যবদ্ধ করে ইউপি নির্বাচনে সবগুলোতে নৌকার প্রার্থীকে জয়ী করেছেন। তবে বর্তমান এমপির সময়ে ইউপি নির্বাচনে নৌকার ভরাডুবি হয়েছে।
রেজাউল হক চৌধুরীও বিভাজনের বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘বর্তমান এমপি হুমকি দিয়ে কথা বলছেন। এলাকার নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ আমার সঙ্গে আছে।’
তবে বাদশার অনুগত নেতাদের অভিযোগ, পরিবারটি আওয়ামী লীগের রাজনীতি করলেও দলের গঠনতন্ত্র ও নিয়ম মানে না। উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে ছোট ভাই বুলবুল আহমেদ টোকেন চৌধুরীকে প্রার্থী করেছেন।
এরই মধ্যে সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বাদশা সাবেক এমপি রেজাউলকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ‘হকারি বাদ দেন, লাইনে এসে রাজনীতি করেন। অভিযোগ থাকলে দলীয় ফোরামে আলোচনা করেন।’
নেতাকর্মী জানিয়েছেন, এ দুই বলয়ের বাইরে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শরীফ উদ্দিন রিমনের শক্ত বলয় আছে। বাদশা এমপি হওয়ায় প্রথম দিকে তিনি সমালোচক হলেও এখন একসঙ্গে থাকছেন। সাবেক এমপি আফাজ উদ্দিনের ছেলে উপজেলা চেয়ারম্যান এজাজ আহমেদ মামুন আরেক পক্ষের নেতৃত্বে দেন।
জানা গেছে, মামুন বর্তমান এমপির সঙ্গে রাজনীতি করছেন। তবে তাঁর কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ হয়ে সামজিক যোগাযোগমাধ্যমে নেতিবাচক পোষ্ট দিয়েছেন ভাই। সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও আওয়ামী লীগের সদস্য মোফাজ্জেল হকও মাঠে সক্রিয়।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শরীফ উদ্দিন রিমন বলেন, ‘দলের মনোনয়ন চাইব, নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। তবে যাঁরা দলীয় মনোনয়ন না পেলে স্বতন্ত্র নির্বাচন করবেন বলে আওয়াজ তুলেছেন, তাঁদের সঙ্গে সম্পর্ক নেই।’
এমপি সরওয়ার জাহান বাদশা বলেন, ‘মনোনয়ন যে কেউ চাইতে পারেন। তবে শেখ হাসিনা ও দল যাঁকে মনোনয়ন দেবে, তাঁর পক্ষে কাজ করব। দলীয় ফোরামের বাইরে রেজাউল হক ও তাঁর ভাই রাজনীতি করছেন, উল্টা-পাল্টা কথা বলছেন। তাঁদের প্রতিহত করবেন নেতাকর্মীরা।’