দফায় দফায় সময় বাড়ানোর পরও বাংলাদেশের হজ কোটা পূরণ হচ্ছে না। খরচ অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় হজে যেতে মানুষ আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। এর পরও নির্ভার ধর্ম মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়-সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, তাঁদের প্রত্যাশিত সময়ের মধ্যেই  প্রয়োজনীয় সংখ্যক হজ নিবন্ধনকারী মিলবে।
হজের নিবন্ধন মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল গতকাল সোমবার। এদিন ষষ্ঠবারের মতো সময় বাড়িয়ে ৩০ মার্চ পর্যন্ত করা হয়েছে। ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, আগামী ৫ মে পর্যন্ত হজযাত্রী চূড়ান্ত করার সুযোগ আছে। এর অনেক আগেই কোটা পূরণ হয়ে যাবে।
সৌদি আরবের সঙ্গে হজ চুক্তি অনুযায়ী, এ বছর বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজ করতে পারবেন। গতকাল সোমবার রাত ৮টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বাংলাদেশের হজযাত্রী নিবন্ধন হয়েছেন ১ লাখ ১৭ হাজার ৩৭৪ জন। অর্থাৎ কোটা পূরণে এখনও প্রয়োজন ১০ হাজার জন। ষষ্ঠ দফায় সময় বাড়ালেও এই সময়ের মধ্যে কোটা পূরণ হবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। বেসরকারি হজ এজেন্সির এক মালিক বলেন, নিবন্ধনের সময় বাড়ানোয় এক সপ্তাহে (২২ থেকে ২৭ মার্চ) দুই হাজারের মতো নিবন্ধনকারী পাওয়া গেছে। তাই তিন দিনের মধ্যে বাকি প্রায় ১০ হাজার নিবন্ধনকারী পাওয়া কঠিন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দেশের হজ কোটা খালি থাকবে না। শেষ সময়ে যদি স্বাভাবিকভাবে যাত্রী না পাওয়া যায়; আমাদের ব্যবস্থাপনা আছে। আশা করি, সমস্যা হবে না। কী কৌশলে হজযাত্রী পাওয়া যাবে– বলতে রাজি হননি তিনি। অন্য একটি সূত্র জানিয়েছে, এবার হজ প্যাকেজে বেসরকারি হজ এজেন্সিগুলো বড় আকারের লাভের সুযোগ পেয়েছে। তাই বেসরকারিভাবে ঘোষিত মূল্যের চেয়েও অনেক কম টাকায় হজযাত্রী নিবন্ধন করছে এজেন্সিগুলো। শেষ সময়ে সরকারি হজযাত্রী নিবন্ধনকারী না পাওয়া গেলে বেসরকারি এজেন্সি দিয়ে কোটা পূরণ করা হবে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, নিবন্ধনের গতি পর্যবেক্ষণ করলেও এ বিষয়ে ধারণা পাওয়া যায়। এ পর্যন্ত সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৫ হাজার হজযাত্রীর মধ্যে ৯ হাজার ৮৯২ জনের নিবন্ধন হয়েছে, যা শতকরা হিসেবে ৬৬ শতাংশ। অন্যদিকে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ১ লাখ ১২ হাজার ১৯৮ জনের কোটার মধ্যে গতকাল পর্যন্ত নিবন্ধন হয়েছে ১ লাখ ১০৭ হাজার ৪৮২ জনের। অর্থাৎ প্রায় ৯৬ শতাংশ। সরকারি এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় খরচের পার্থক্য মাত্র ১০ হাজার টাকা। কিন্তু নিবন্ধনের পার্থক্য ৩০ শতাংশ।
এ বিষয়ে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান বলেন, দুশ্চিন্তার কিছুই নেই। সোমবার তিনি সমকালকে বলেন, হজ কোটার সামান্য কিছু বাকি আছে। আশা করি, নির্ধারিত সময়ের আগেই তা পূরণ হয়ে যাবে। নির্ধারিত সময় তো কয়েকবার শেষ হলো। আর কত সময় বাড়াবেন– এ প্রশ্নে প্রতিমন্ত্রী বলেন, হাতে সময় আছে। আশা করি, কোটা পূরণ হতে সমস্যা হবে না।
বাড়ি ভাড়া করতে প্রতিনিধি দল : সৌদি আরব এবং বাংলাদেশে হজ সংক্রান্ত কার্যক্রম গুছিয়ে আনার এখন চূড়ান্ত সময়। সৌদি আরবে বাড়ি ভাড়া করার বিষয়ে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। মক্কায় হজযাত্রীরা থাকতেন এমন বেশ কিছু বাড়ি এবার ভেঙে নতুন করে নির্মাণ করা হচ্ছে। পছন্দ অনুযায়ী পবিত্র কাবাঘরের কাছাকাছি জায়গায় বাড়ি পাওয়া অন্যবারের চেয়ে প্রতিযোগিতাপূর্ণ হবে। তাই দ্রুত বাড়ি ভাড়া নিশ্চিত করায় গুরুত্ব দিচ্ছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। সরকারি ব্যবস্থাপনায় যাওয়া হজযাত্রীদের কাবাঘরের কাছাকাছি রাখার ঘোষণা দিয়েছে মন্ত্রণালয়। সম্প্রতি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (হজ) মতিউল ইসলামের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল সৌদি আরব গেছে বাড়ি ভাড়া-সংক্রান্ত কাজে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মতিউল ইসলাম সোমবার টেলিফোনে সমকালকে জানান, সৌদি আরবে তাঁরা বাড়ি দেখা শুরু করেছেন। এখনও চূড়ান্ত কিছু বলার সময় হয়নি।
সমালোচনার পরও কমেনি হজ প্যাকেজ : চলতি বছর সরকারিভাবে প্রত্যেক হজযাত্রীর
ছয় লাখ ৮৩ হাজার ১৮ টাকা ব্যয় হবে। গত বছরের তুলনায় খরচ        সর্বোচ্চ এক লাখ ৬১ হাজার ৮৬৮ টাকা বেড়েছে। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ পালনে এ বছর সর্বনিম্ন খরচ হবে ৬ লাখ ৭২ হাজার ৬১৮ টাকা। সরকারি-বেসরকারি দুটি প্যাকেজের ক্ষেত্রেই উল্লিখিত খরচের বাইরে হজ পালনকারীদের কোরবানি বাবদ টাকা নিতে হবে। তবে সৌদি আরবে একটি খাতে সেবামূল্য কমানোয় বাংলাদেশের সরকারি ও বেসরকারিভাবে হজ পালনে প্রতিজনের        খরচ ১১ হাজার ৭২৫ টাকা কমেছে।