- বাংলাদেশ
- আওয়ামী লীগের মাহমুদের চেয়ে বেশি সম্পদ স্ত্রীর
চট্টগ্রাম-৮ উপনির্বাচনে প্রার্থীদের হলফনামা
আওয়ামী লীগের মাহমুদের চেয়ে বেশি সম্পদ স্ত্রীর

চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নোমান আল মাহমুদ খুব একটা পরিচিত মুখ নন। তবে তাঁর রয়েছে পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি। ৫০ বছর ধরে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকলেও তাঁর নামে কোনো মামলা নেই। নেই কোনো দায়-দেনা। ব্যক্তিজীবনে সাপ্লাইয়ের ব্যবসায়ী মাহমুদের বছরে আয় মাত্র সাড়ে ৪ লাখ টাকা। তবে নিজের চেয়ে তাঁর স্ত্রী শামীমা আক্তারের সম্পদ অনেক বেশি। গত সোমবার চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে রিটার্নিং অফিসার মোহাম্মদ হাসানুজ্জামানের কাছে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দেওয়া হলফনামা সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
নির্বাচনে অংশ নিতে সোমবার পর্যন্ত ছয় প্রার্থী তাঁদের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নোমান আল মাহমুদ ছাড়াও অন্য পাঁচ প্রার্থী হলেন– ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের সৈয়দ মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দীন, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মো. কামাল পাশা, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের সেহাব উদ্দিন মুহাম্মদ আবদুস সামাদ, স্বতন্ত্র প্রার্থী খাদেমুল ইসলাম চৌধুরী ও মীর মো. রমজান আলী।
প্রার্থীদের মধ্যে হলফনামায় দেওয়া তথ্যমতে, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের সেহাব উদ্দিন মুহাম্মদ আবদুস সামাদের রয়েছে কোটি টাকার মূলধন এবং স্ত্রীর নামে রয়েছে ৪০ লাখ টাকা। এ ছাড়া ফরিদ উদ্দিনের রয়েছে মাত্র ২ লাখ টাকা এবং স্ত্রীর নামে রয়েছে ২০ হাজার টাকা। তাঁর রয়েছে টিনের বাড়ি।
মাহমুদের নগদ ১৯ লাখ, স্ত্রীর স্থায়ী বিনিয়োগই অর্ধকোটি : এইচএসসি পাস নোমান আল মাহমুদ কলেজ ছাত্রলীগ থেকে নগর ছাত্রলীগ, নগর যুবলীগ থেকে কেন্দ্রীয় যুবলীগ পর্যায়ে নেতৃত্বে ছিলেন। বর্তমানে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
হলফনামার তথ্যানুযায়ী, মাহমুদের নামে নগদ রয়েছে ১৭ লাখ ৯৬ হাজার ৬৯২ টাকা এবং ব্যাংকে রয়েছে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা। কিন্তু স্ত্রী শামীমা আক্তারের নামে রয়েছে নগদ ২০ লাখ ১৬ হাজার ৪১৪ টাকা এবং ব্যাংকে ৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা জমা আছে। নগদ অর্থ, ব্যাংক জমা, বন্ড, ঋণপত্র ও স্টক এক্সচেঞ্জ মিলিয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মাহমুদের রয়েছে ২০ লাখ ১৬ হাজার ৬৬২ টাকা। এ ছাড়া দেড় লাখ টাকার স্বর্ণালংকার, টিভি-ফ্রিজ আসবাবপত্র মিলে আরও লাখ টাকার অস্থাবর সম্পত্তি রয়েছে তাঁর। এর বাইরে ব্যবসায় মূলধন রয়েছে ৯ লাখ ৬০ হাজার টাকা।
স্থাবর সম্পত্তির মধ্যে এজমালি সূত্রে পাওয়া আবাসিক-বাণিজ্যিক দালান, অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে নোমান আল মাহমুদের। কৃষি-অকৃষি জমি নেই তাঁর। তবে স্ত্রী শামীমা আক্তারের নামে রয়েছে ৫০ লাখ টাকার স্থায়ী বিনিয়োগ ও ৩১৫ বর্গফুটের একটি এজমালি ভিটাভূমি। নগদ ও ব্যাংক জমা মিলিয়ে ২৩ লাখ ৫৬ হাজার টাকার বিপরীতে ব্যাংকে শামীমার দেনা রয়েছে অবশ্য ৪০ লাখ টাকা। অন্যদিকে, স্থাবর সম্পদ বলতে স্ত্রীর নামে ৩১৫ বর্গফুটের ভিটাভূমি, উত্তরাধিকার সূত্রে ৫ দশমিক ৪৪ শতাংশ জায়গা ও অন্যান্য সম্পদ বাবদ যৌথ মালিকানার ৩ লাখ ২০ হাজার ৪৯৭ টাকা মূল্যের ৩৮২ বর্গফুট ভূমি রয়েছে।
নগরীর কাপাসগোলার নেম এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে নোমান আল মাহমুদের। এখান থেকে তিনি আয় দেখিয়েছেন সাড়ে ৪ লাখ টাকা। বর্তমান বাজারে যেখানে এক ভরি স্বর্ণের দাম ৯২ হাজার টাকার বেশি, সেখানে তিনি স্ত্রীর ১০ ভরি গহনা বাবদ মূল্য দেখিয়েছেন দেড় লাখ টাকা।
কোটিপতি প্রার্থী আবদুস সামাদ, স্ত্রীর নামে ৪০ লাখ : প্রার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পয়সাওয়ালা হচ্ছেন বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের সেহাব উদ্দিন মুহাম্মদ আবদুস সামাদ। পেশায় ব্যবসায়ী কোটিপতি এই প্রার্থীর বার্ষিক আয় ৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। বছরে তিনি ব্যয় করেন ৪ লাখ ৭৫ হাজার ৪০৬ টাকা।
স্নাতকোত্তর পাস করা সামাদের স্থাবর সম্পত্তির মধ্যে নিজের নামে দুই কানি পৈতৃক জমি। যার মূল্য ৫ লাখ টাকা। ফ্ল্যাট ছাড়াও ১ কোটি টাকার মূলধন রয়েছে তাঁর। রয়েছে সেভিংস, সঞ্চয়পত্র; এফডিআর রয়েছে ২১ লাখ ৮ হাজার ৭৫০ টাকার। তাঁর নামেও কোনো মামলা-মোকদ্দমা নেই। সব মিলিয়ে স্ত্রীর নামে রয়েছে ৪০ লাখ টাকার মূলধন। কৃষি খাত থেকে তাঁর আয় ৫৮ হাজার টাকা। ব্যবসা থেকে আয় ৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা। সঞ্চয়পত্র বা ব্যাংক আমানত রয়েছে ৩ লাখ ৫৬ হাজার টাকার। এ ছাড়া নগদে নিজের নামে আছে ১০ লাখ ৬০ হাজার ৭৪২ টাকা।
হলফনামায় সম্পদের বর্ণনায় দেখা যায়, সামাদের স্ত্রীর নামে ১০ লাখ ৯ হাজার ৫৫৩ টাকা। ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নিজের নামে আছে ১৬ লাখ ৪৪ হাজার ৫০৮ টাকা। স্ত্রীর নামে আছে ৫ লাখ ৭০ হাজার ৭৮৭ টাকা। জমি বিক্রি করেছেন ৬৩ লাখ টাকার। নিজের নামে স্বর্ণালংকার আছে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকার। স্ত্রীর নামে আছে ২০ হাজার টাকার।
টিনশেড বাড়ি ফরিদ উদ্দিনের : হলফনামার তথ্যমতে, স্থাবর সম্পত্তির মধ্যে নিজের নামে একটি টিনশেড বাড়ি রয়েছে ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের প্রার্থী সৈয়দ ফরিদ উদ্দিনের। যার মূল্য ৩ লাখ টাকা। বার্ষিক আয় ৫০ হাজার টাকা। শিক্ষকতা ছাড়া তাঁর ও নির্ভরশীলদের আর কোনো আয় নেই। কামিল পাস করেছেন তিনি। বুড়িশ্চর জিয়াউল উলুম কামিল (এমএ) মাদ্রাসার অধ্যক্ষ তিনি। তাঁর কোনো ঋণ নেই। নেই মামলা-মোকদ্দমাও।
নিজের নামে রয়েছে মাত্র ২ লাখ টাকা এবং স্ত্রীর নামে রয়েছে ২০ হাজার টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ফরিদ উদ্দিনের জমা আছে ৬ লাখ টাকা। স্ত্রীর নামে আছে ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা। স্ত্রীর নামে ১ লাখ টাকার স্বর্ণালংকার রয়েছে।
মন্তব্য করুন