সারাদেশে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতার জন্য পরীক্ষা নিয়ে মেধাতালিকা প্রস্তুত ও নিয়োগ দিয়ে থাকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। তবে এ প্রতিষ্ঠানটি তাদের চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তির নিয়োগে তালগোল পাকিয়ে ফেলেছে। আগের ও বর্তমান একই রোল নম্বরের একাধিক প্রার্থী রাখা হয় চলমান নিয়োগে। এতে আগে চাকরি পাওয়া ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের রোল নম্বরগুলো সফটওয়্যারে ব্লক করে দেওয়া হয়। এ কারণে এই ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের পাশাপাশি একই রোলধারী নতুন প্রার্থীরাও ব্লক হয়ে যান। ফলে মেধাতালিকা ও প্রাপ্ত নম্বর– দুটিতেই এগিয়ে থাকা শীর্ষ শতাধিক প্রার্থী চাকরিবঞ্চিত হয়েছেন। তাঁদের চেয়ে নম্বর ও মেধাতালিকায় অনেক পেছনে থাকা প্রার্থীরা চাকরি পেয়ে গেছেন। এখন হতাশায় ভুগছেন বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীরা। তাঁরা বিষয়টির সমাধান করতে এনটিআরসিএর চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন জানিয়েছেন।
নিয়োগ প্রার্থীরা বলছেন, ভুল করেছে এনটিআরসিএ। আর চাকরিবঞ্চিত হলাম আমরা। এটা অন্যায়। আমরা শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির কাছে ন্যায়বিচার চাই।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নেওয়া নিয়োগ পরীক্ষার ফল ১২ মার্চ প্রকাশ করেছে এনটিআরসিএ। ফলে সারাদেশের ৩২ হাজার ৪৩৮ প্রার্থীকে নির্বাচিত করা হয়। প্রকাশিত ফলে একই রোলের একাধিক প্রার্থী থাকায় মাদ্রাসার ইসলাম শিক্ষা বিষয়ের সহকারী মৌলভী পদে মেধা তালিকায় ১০ হাজার ৩৪১ পদে থাকা মো. আনিছুর রহমানের পছন্দ করা ৪০টি মাদ্রাসার কোনোটাতেই সুপারিশ পাননি। আনিছুর সমকালকে জানান, অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের বিষয়, প্রকাশিত প্রাথমিক ফলে মেধায় এগিয়ে থাকলেও আমাকে কোনো প্রতিষ্ঠানে সুপারিশ করা হয়নি। এর কারণ অনুসন্ধান করে দেখা গেল, এনটিআরসিএর জাতীয় মেধাতালিকায় একই রোলের একাধিক প্রার্থী থাকায় এবং একই রোলের অপর প্রার্থী আমার আগেই ইনডেক্সধারী হওয়ার কারণে আমার রোলটি সিস্টেমে ব্লক করে রাখা হয়েছে। আমার আগে সুপারিশ করা বিদ্যালয় প্রার্থীর নাম মো. আব্দুল মালেক, তাঁর বিষয় ইসলাম শিক্ষা, পদ সহকারী মৌলভী, নিবন্ধন পরীক্ষার রোল- ৩১৪২০১৭১, ব্যাচ-০৮, মেধাতালিকা ক্রম ৩৯৩৯, সিরিয়াল ৪১১৩। এই প্রার্থী আরও জানান, তিনি এতিম ও বেকার। পঙ্গু মায়ের সেবা করতে চাকরিটি তাঁর খুব দরকার। অথচ মেধায় টিকেও এখন এনটিআরসিএ অফিসে ধরনা দিতে হচ্ছে প্রতিদিন চাকরির জন্য।
বেসরকারি বিদ্যালয়ে গণিতের সহকারী শিক্ষক পদে পরীক্ষা দেওয়া বাদল চন্দ্র রায় জানান, তাঁর ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে। রোল ব্লক করায় তাঁর পেছনের প্রার্থীরা চাকরির সুপারিশ পেয়েছেন। তাঁর মেধাক্রম ১৯২৭২। এমডি সালাহউদ্দিন নামে এক প্রার্থী জানান, ইংরেজি বিষয়ে তাঁর মেধাক্রম ৫৩২২। তাঁর অনেক পেছনের সবাই চাকরির সুপারিশ পেয়েছেন।
বঞ্চিত নিয়োগ প্রার্থীরা জানান, তাঁরা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে মেধায় টিকেছেন। এনটিআরসিএ ইনডেক্সধারীদের রোল নম্বরগুলো ব্লক করে দিয়েছে। কিন্তু একই রোল নম্বর থাকায় সফটওয়্যারে তাঁরাও ব্লক হয়ে গেছেন। এটা এনটিআরসিএর ভুল। তারা দ্রুত ভুল সংশোধন করে আমাদের চাকরির সুযোগ করে দিক। এটা আমাদের ন্যায্য অধিকার।
এনটিআরসিএর সচিব মো. ওবায়দুর রহমান বলেন, শিক্ষক নিয়োগে চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে নির্বাচিত ৩২ হাজার ৪৩৮ জন প্রার্থীর চূড়ান্ত নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছিল। এর পর ফল নিয়ে কিছু চাকরিপ্রার্থী আপত্তি জানিয়ে
আমাদের কাছে আবেদন করেছেন। আমরা তাঁদের আবেদন যাচাই-বাছাই শুরু করেছি। এ ফলে কোনো ব্যত্যয় ঘটেছে কিনা, তা তদন্ত করে দেখছি। কোনো ব্যত্যয় হলে আইন অনুসারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জানা গেছে, নির্বাচিত প্রার্থীদের পুলিশ ভেরিফিকেশন ফরম অনলাইনে পূরণের কাজ চলছে এখন। ২০২২ সালের ২১ ডিসেম্বর ৬৮ হাজার ৩৯০ জন শিক্ষক নিয়োগের জন্য এই চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিল এনটিআরসিএ।