- বাংলাদেশ
- অজ্ঞান পার্টির কৌশল বদল, টার্গেট এখন অটোরিকশা
অজ্ঞান পার্টির কৌশল বদল, টার্গেট এখন অটোরিকশা
রমজানে বাড়ে তৎপরতা: ডিবি

ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা- ফাইল ছবি
কৌশল বদলে নতুন টার্গেট নিয়ে মাঠে নেমেছে অজ্ঞান পার্টি। কোনো ব্যক্তিকে অচেতন করে সর্বস্ব হাতিয়ে নেওয়ার বদলে তাদের নজর এখন সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার দিকে। যাত্রী সেজে বা চালকের সঙ্গে সখ্য গড়ে অটোরিকশায় ওঠে তারা। পরে চেতনানাশক ওষুধ মেশানো পানীয় খাইয়ে চালককে অচেতন করে। শেষে অটোরিকশা নিয়ে পালিয়ে যায়। গ্রেপ্তার এড়াতে অটোরিকশা ছিনতাই তুলনামূলক ‘নিরাপদ’ মনে করছে তারা। সম্প্রতি কয়েকটি অভিযানে গ্রেপ্তার অজ্ঞান পার্টির সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য মিলেছে।
এদিকে শুধু অটোরিকশা খোয়ানো নয়; অনেক সময় এ চক্রের হাতে প্রাণও যাচ্ছে চালকদের। চেতনানাশকের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে ঘটছে এমন প্রাণহানি। কিছু ক্ষেত্রে চালককে নৃশংসভাবে হত্যা করে ছিনিয়ে নেওয়া হচ্ছে অটোরিকশা।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার রাজীব আল মাসুদ সমকালকে বলেন, রমজান মাসে অজ্ঞান পার্টির তৎপরতা বেড়ে যায়। বিশেষ করে ইফতারের আগের সময়টা তারা টার্গেট করে। ওই সময় মানুষের তাড়াহুড়ো থাকে। এ সুযোগে তারা ইফতার নিয়ে অটোরিকশায় ওঠে। ইফতারের সময় হলে চালককেও খেতে অনুরোধ জানায়। কোনো সন্দেহ না করে চালক তা খেয়ে নেন এবং কিছু সময় পর অচেতন হয়ে পড়েন। চালকদের তাই এ ব্যাপারে সচতেন থাকতে হবে।
ডিবির এ কর্মকর্তা বলেন, সম্প্রতি অটোরিকশা চুরি-ছিনতাইয়ে জড়িত একটি চক্রকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া গেছে বেশ কিছু তথ্য। এমন বেশ কয়েকটি চক্র সক্রিয় রয়েছে। মাঝে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতার কারণে তারা ঢাকা ছেড়ে অন্যান্য জেলায় ছড়িয়ে পড়েছিল। তবে কিছুদিন হলো আবার তারা ঢাকায় এসেছে। তাদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রতি বছর ঈদের আগে অজ্ঞান পার্টির তৎপরতা বেড়ে যায়। গণপরিবহন ও জনসমাগমপূর্ণ স্থানে তারা ফেরিওয়ালা সেজে ঘুরে বেড়ায়। যার কাছে বেশি টাকা আছে বলে মনে হয়, তাকে টার্গেট করে। কৌশলে তাকে চেতনানাশক মেশানো পানীয় বা অন্য কিছু খাইয়ে অচেতন করে। এবারও এমন কিছু দল সক্রিয়। তবে তাদের বড় অংশ অটোরিকশা চুরি-ছিনতাইয়ে নেমে পড়েছে। কারণ, টার্গেট ব্যক্তির কাছে সবসময় বড় অঙ্কের টাকা পাওয়ার নিশ্চয়তা থাকে না। সেদিক থেকে একটি অটোরিকশার বিক্রয়মূল্য অনেক।
ডিবি সূত্র জানায়, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের উত্তর বেগুনবাড়ী থেকে গত ১২ মার্চ অটোরিকশা চুরি-ছিনতাই চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা হলো– সুজন মিয়া, জাহাঙ্গীর আলম ও শফিকুল ইসলাম। জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তারা যাত্রী সেজে অটোরিকশায় ওঠে। কিছুদূর যাওয়ার পর চালককে অচেতন করে বা জোর করে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেয়। এর পর অটোরিকশা নেওয়া হয় গোপন আস্তানায়। পরে অটোরিকশার মালিকের কাছে ফোন করে মোটা অঙ্কের অর্থ দাবি করে। টাকা পেলে নির্দিষ্ট কোনো স্থানে অটোরিকশা রেখে যায়।
এর আগে গত ৯ মার্চ অজ্ঞান পার্টির ১৫ সদস্যকে গ্রেপ্তারের কথা জানায় ঢাকা জেলা পুলিশ। গ্রেপ্তাররা জানায়, তারা সাধারণত বয়স্ক বা অসুস্থ গোছের চালকদের টার্গেট করে। প্রথমে তাঁর সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলে। আস্থা অর্জনের পর চালকের সঙ্গে অটোরিকশায় ঘুরে বেড়ায়। পরে চালককে চা বা জুসের সঙ্গে চেতনানাশক খাইয়ে অটোরিকশা নিয়ে পালায়। চক্রটির হাতে অন্তত তিন চালক খুন হয়েছেন। এর মধ্যে গত বছরের ৯ অক্টোবর কেরানীগঞ্জের জিঞ্জিরা এবং ২৮ অক্টোবর কেরানীগঞ্জের দুটি স্থানে তারা চালককে অচেতন করে অটোরিকশা নিয়ে যায়। পরে ওই চালকরা মারা যান।
অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়া শারীরিক প্রতিবন্ধী অটোরিকশা চালক মো. হাসান জানান, অচেতন অবস্থায় গত ২৬ জানুয়ারি বিকেলে যাত্রাবাড়ী থেকে তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করান লোকজন। এর কিছুদিন আগে রফিক নামে এক ব্যক্তি তাঁর সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলে। ঘটনার দিন তাঁকে বেশি ভাড়া দেওয়ার কথা বলে বছিলা ব্রিজ এলাকায় নিয়ে যায়। সেখানে তাকে এক কাপ কফি খেতে দেয় রফিক। তবে কফির স্বাদ অন্য রকম লাগায় তিনি একটু খেয়েই ফেলে দেন। কিছুক্ষণ পর তিনি অচেতন হয়ে যান।
ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান জানান, গ্রেপ্তারকৃতরা সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের সদস্য। তাদের নামে মোট ২১টি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে।
মন্তব্য করুন