ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল ও শামসুজ্জামানের মুক্তির দাবি ২৭ নাগরিকের

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার সাংবাদিক শামসুজ্জামান শামসের মুক্তি ও এ আইন বাতিলের দাবি জানিয়েছেন ২৭ নাগরিক। বুধবার সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ দাবি জানান তারা।

বিবৃতিতে বলা হয়,  প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামান শামসে সাভারের আমবাগান এলাকার নিজ বাসা থেকে মঙ্গলবার ভোররাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিচয়ে সাদা পোশাকের ব্যক্তিরা তুলে নেওয়ার ১০ ঘণ্টা পর্যন্ত তার কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। এ সময় তার পরিবারের সদস্যরা স্থানীয় আশুলিয়া থানায় যোগাযোগ করলেও তার সন্ধান পাননি। মূলত ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের জেরে শামসকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। 

তারা বলেন, ওই প্রতিবেদনে দেশের বাজার পরিস্থিতি ও নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে একজন দিনমজুরের বক্তব্য উপস্থাপন করা হয়। এ ঘটনায় শামসকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় বলে গণমাধ্যম সূত্রে আমরা জানতে পারি। আমরা এ ঘটনায় গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। রাতের বেলায় পরোয়ানা ব্যতীত কাউকে আটক করা সভ্য দেশে কল্পনাতীত। স্বাধীনতার মাসে নাগরিকদের এভাবে হয়রানি করায় আমরা ব্যথিত।

তারা আরও বলেন, বিনা পরোয়ানায় শামসকে আটক করে তার সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে বলে আমরা মনে করি। সংবিধানের তৃতীয় ভাগের মৌলিক অধিকার অধ্যায়ের ৩৩ (১) অনুচ্ছেদে কারণ উল্লেখ না করে কাউকে আটকে রাখা যাবে না বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ শামসকে আটকের বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুনির্দিষ্টভাবে কিছু বলতে পারেননি গণমাধ্যমকর্মীদের। দুপুরের পর গোলাম কিবরিয়া নামে যুবলীগের এক নেতার করা মামলায় শামসকে আটক দেখিয়ে আদালতে হাজির করা হয়।

তারা আরও বলেন, শামস ছাড়াও সম্প্রতি গণমাধ্যমকর্মীদের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আটক ও হয়রানিরর তথ্য আমাদের নজরে এসেছে। দিন দিন দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। মত প্রকাশের স্বাধীনতা মারাত্মকভাবে সংকুচিত হয়ে পড়ছে। এ অবস্থায় গণমাধ্যমকর্মীদের পেশাগত নিরাপত্তাও হুমকির মুখে। আমরা অবিলম্বে শামসুজ্জামান শামসকে মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়ে নিঃশর্ত মুক্তি এবং গণমানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি জানাই।

বিবৃতিতে সই করেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী, আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, লেখক ও অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ,  রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল।  

লেখক ও অধ্যাপক রেহনুমা আহমেদ, সাবেক কূটনীতিক ও পিপলস একটিভিস্ট কোয়ালিশনের সমন্বয়ক সাকিব আলি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, লেখক ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ এবং ইলিয়াস খান।

আরও সই করেন- রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মাহমুদুল সুমন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের অধ্যাপক ড. ইফতিখারুল আলম মাসউদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক  মাইদুল ইসলাম, মানবাধিকারকর্মী ও গবেষক রোজীনা বেগম, সাংবাদিক ও গবেষক  সায়দিয়া গুলরুখ, লেখক ও এক্টিভিস্ট দিলশানা পারুল, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সারা হোসেন, কবি ও লেখক শওকত হোসেন, লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. মারুফ মল্লিক, প্রকৌশলী ও টেকসই উন্নয়নবিষয়ক লেখক ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখক ও সহযোগী অধ্যাপক মোশাহিদা সুলতানা ঋতু, লেখক ও গবেষক  সালাহ উদ্দিন শুভ্র, জাকারিয়া পলাশ, নারী সংগঠক ও মানবাধিকারকর্মী ব্যারিস্টার নাসরীন সুলতানা মিলি ও কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক এহসান মাহমুদ।