- বাংলাদেশ
- বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি রাজশাহীর সচেতন নাগরিকদের
র্যাব হেফাজতে জেসমিনের মৃত্যু
বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি রাজশাহীর সচেতন নাগরিকদের

র্যাব হেফাজতে সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছেন রাজশাহীর সচেতন নাগরিকরা। শনিবার দুপুর ১২টার দিকে রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়। এর আগে শুক্রবার রাজশাহীর ‘বিশিষ্টজনরা’ নওগাঁয় সুলতানা জেসমিনের বাড়ি, তাকে র্যাব তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে দেখা করে ঘটনা সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে আজ তারা এই সংবাদ সম্মেলন করেন। এসময় তারা সুলতানা জেসমিনকে র্যাব তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনাকে অপহরণ উল্লেখ করেন।
নওগাঁ পরিদর্শনকারী দলের মধ্যে ছিলেন লেখক ও হেরিটেজ রাজশাহীর সভাপতি মাহবুব সিদ্দিকী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও রাষ্ট্রচিন্তার সদস্য অধ্যাপক ড. ইফতিখারুল আলম মাসউদ, রাষ্ট্রসংস্কার আন্দোলন রাজশাহীর আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট হাসনাত বেগ, যুব অধিকার পরিষদ রাজশাহীর নেতা ওমর ফারুক।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মাহবুব সিদ্দিকী বলেন, ‘সুলতানা জেসমিনের সাথে যে ঘটনা ঘটেছে তা সভ্য সমাজে কল্পনা করা যায় না। একজন নাগরিক যদি অপরাধের সাথেও সম্পৃক্ত হন তার বিচার পাবার পূর্ণ অধিকার রয়েছে। সেখানে কোনো রকম আইনগত প্রক্রিয়া ছাড়াই একজন নাগরিককে সরকারি একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার মৌখিক কথায় এবং তার উপস্থিতিতে উঠিয়ে নিয়ে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছিল যার পরিণতিতে তিনি মৃত্যু বরণ করেন, এটি নিঃসন্দেহে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ। জেসমিনের ঘটনায় আবারও প্রমাণিত হয়েছে এদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মানবাধিকার রক্ষায় দুঃখজনকভাবে উদাসীন। রাষ্ট্রযন্ত্র মানুষের মৌলিক অধিকার রক্ষায় অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েও তা রক্ষায় বারবার ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন,'নিহত জেসমিনের পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলেছি। আমাদের ধারনা জন্মেছে তারা ভীত সন্ত্রস্ত এবং নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছেন।’
মাহবুব সিদ্দিকী বলেন,‘জেসমিনের বিরুদ্ধে থানায় এজাহার না করে সরাসরি তুলে নিয়ে যাওয়া অপহরণের শামিল। পরে সরকারি বাহিনীর হেফাজতে তাঁর মৃত্যুর ঘটনা অত্যন্ত রহস্যময়। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমেই এর পেছনের মূল কারণ উদঘাটন করা সম্ভব হবে। যুগ্ম সচিব পদ মর্যাদার একজন ব্যক্তির এ ঘটনার সাথে সম্পৃক্ততার যে বর্ণনা ইতিমধ্যে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে তার যথাযথ তদন্ত হওয়া দরকার। কেননা নিহত জেসমিনও প্রজাতন্ত্রের একজন কর্মচারী ছিলেন। সুতরাং, জেসমিন অপরাধ করে থাকলে খুব সহজেই বিভাগীয় পদক্ষেপ নেয়া যেত। তা না করে র্যাবকে নিয়ম বহির্ভূতভাবে ব্যবহার করে একজন পদস্থ সরকারি কর্মকর্তা যে ভূমিকা নিয়েছেন তা আইনের ব্যত্যয় এবং অত্যন্ত দুঃখজনক।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, জেসমিনকে র্যাব জোর করে টেনেহিঁচড়ে গাড়িতে তোলে। তিনি গাড়িতে উঠতে না চাইলে র্যাব গাড়িতে তুলে ধাক্কা মারে। এসময় তিনি গাড়িতে পড়ে যান। পড়ে গিয়ে তিনি মাথায় আঘাত পেতে পারেন বলে ধারণা। এছাড়াও তাকে গাড়িতে তুলে র্যাব সদস্যরা গাড়ি নিয়ে জয়পুরহাটে র্যাবের কোয়ার্টারে নিয়ে যাওয়ার জন্য রওনা হয়। আমরা ধারণা করছি, জয়পুরহাটে ক্যাম্পে নিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে না হয় জয়পুরহাট যাওয়ার পথেই সুলতানা জেসমিন অসুস্থ হলে তাকে নওগাঁ হাসপাতালে আনা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও রাষ্ট্রচিন্তার সদস্য অধ্যাপক ড. ইফতিখারুল আলম মাসউদ, রাষ্ট্রসংস্কার আন্দোলন রাজশাহীর আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট হাসনাত বেগ, সিনিয়র সাংবাদিক জামাল কাদেরী, অ্যাডভোকেট হাবিবুর রহমান।
প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান ও প্রতিবেদক শামসুজ্জামানে বিরুদ্ধের মামলা প্রত্যাহার দাবি:
প্রথম আলো সম্পাদক ও প্রকাশক মতিউর রহমান এবং পত্রিকাটির নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামান শামসের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের হওয়া মামলা প্রত্যাহারের দাবিও জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে। একইসঙ্গে তারা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল দাবি করেন।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, প্রথম আলো সম্পাদকের মতো একজন বিশিষ্ট নাগরিককে এভাবে হয়রানি এবং রাতের অন্ধকারে নিজস্ব প্রতিবেদককে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিচয়ে বাসা থেকে তুলে নেওয়ার ঘটনায় আমরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। আমরা দেখতে পেয়েছি, সাংবাদিক নির্যাতনের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। ভিন্নমত ও সরকারের সমালোচনা দমনে এই আইনের লাগামহীন অপপ্রয়োগ চলছে। ফলে দেশে একটি ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে। এতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপক দুর্নীতি ও লুটপাট চললেও এসব সংবাদ প্রকাশ কঠিন হতে কঠিন হয়ে যাচ্ছে।
মন্তব্য করুন