- বাংলাদেশ
- দেশে অটিজম আক্রান্ত ৭৪ হাজার শিশু
বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস আজ
দেশে অটিজম আক্রান্ত ৭৪ হাজার শিশু

দেশে ৮০ থেকে ৯০ লাখ মানুষের মধ্যে কোনো না কোনো প্রতিবন্ধিতা আছে। এর মধ্যে অটিজম আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা প্রায় ৭৪ হাজার ২১২। এই শিশুরা মৌলিক অধিকারসহ নানা বঞ্চনার শিকার। তাদের সবচেয়ে বেশি প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হচ্ছে শিক্ষা ও কর্মসংস্থান পেতে। দেশের প্রায় অর্ধেক এলাকায় প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষায়িত স্কুল নেই। যারা নিজ উদ্যোগে লেখাপড়া শেষ করছে, তাদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না থাকাই এ সমস্যার মূল কারণ। গত ডিসেম্বরে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর জাতীয় প্রতিবন্ধী ব্যক্তি জরিপের (এনএসপিডি) ফলাফলে এসব তথ্য উঠে এসেছে। এমন পরিস্থিতিতে অন্যান্য দেশের মতো আজ ২ এপ্রিল বাংলাদেশেও পালিত হবে ১৬তম বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস। দিনটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দিয়েছেন। দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য– ‘রূপান্তরের অভিযাত্রায় সবার জন্য নিউরোবান্ধব অন্তর্ভুক্তিমূলক বিশ্ব গঠন’।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে প্রতিবন্ধীদের শিক্ষা ও কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা জরুরি। এজন্য সরকারি-বেসরকারি সম্মিলিত উদ্যোগ প্রয়োজন। শুধু যে শ্রমজীবী প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরাই কর্মসংস্থানের সংকটে পড়েন তা নয়, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষা নিয়েও বেকার থাকতে হয় অনেককে। তেমনই একজন সুদীপ্ত কুমার দাস (ছদ্মনাম)। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে পড়াশোনা শেষ করে প্রায় ডজনখানেক চাকরির পরীক্ষা দিয়েছেন। কয়েকটি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও তাঁর চাকরি মেলেনি। আবার সরকারি চাকরির বয়সসীমাও শেষ হয়ে যাচ্ছে। এমন অবস্থায় হতাশ হয়ে পড়েছেন সুদীপ্ত। তিনি জানান, কোথাও ইন্টারভিউ দিতে গেলে কর্তৃপক্ষ আশঙ্কা করে কাজটি তিনি ঠিকমতো করতে পারবেন কিনা।
দেশে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ২০৩০-এর অন্যতম এজেন্ডা হচ্ছে, সবার জন্য প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা নিশ্চিত করা। তবে গত ডিসেম্বরে পরিসংখ্যান ব্যুরোর এনএসপিডি জরিপের তথ্য বলছে, প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের সংখ্যা ৫৩ দশমিক ২ শতাংশ থাকলেও মাধ্যমিকে তা কমে ৩৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। প্রতিবন্ধীদের উচ্চশিক্ষা গ্রহণের হার আরও কম। মাত্র ৯ দশমিক ৫১ শতাংশের বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পড়ার সুযোগ মিলছে। এভাবে গড়ে ৬৬ শতাংশ প্রতিবন্ধী শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। জরিপে শিক্ষার সুযোগ না পাওয়ার কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, প্রতিবন্ধীর বাসার আশপাশের এলাকায় কোনো ধরনের বিশেষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না থাকা।
জরিপে আরও দেখা গেছে, শিক্ষিত ৬৬ শতাংশ প্রতিবন্ধী কর্মের সুযোগ থেকে বঞ্চিত। যাঁরা কাজ পেয়েছেন, তাঁদের মধ্যে সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন খুবই কম। মাত্র ২ দশমিক ৫০ শতাংশ প্রতিবন্ধী সরকারি কর্মক্ষেত্রে আছেন।
জরিপে আরও বলা হয়, প্রতিবন্ধীদের মধ্যে শূন্য থেকে চার বছর বয়সী শিশুদের ২৪ শতাংশ এবং পাঁচ থেকে ১৭ বছর বয়সীদের ৪৩ শতাংশ স্বাস্থ্যসেবা পায় না।
প্রতিবন্ধীদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থান নিয়ে গবেষণা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সাহাদাত হোসেন সিদ্দিকী। তিনি বলেন, জরিপে প্রতিবন্ধীদের শিক্ষা ও কর্মসংস্থান নিয়ে যে তথ্য উঠে এসেছে, বাস্তবে সংকট আরও প্রকট।
দেশের প্রতিবন্ধীদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের বিষয়ে গবেষণা ও সহযোগিতামূলক কাজ করছে সুইড বাংলাদেশ। সংস্থার বাংলাদেশের মেন্টর জওয়াহেরুল ইসলাম বলেন, প্রতিবন্ধীদের শিক্ষা ও কর্মসংস্থান তৈরিতে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের উদাসীনতা রয়েছে। প্রতিবন্ধীদের জন্য আইন, নীতিমালা ও প্রকল্প থাকলেও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বিস্তর ফারাক রয়েছে। তবে প্রতিবন্ধীদের জন্য আইন ও নীতির দিক দিয়ে উন্নত দেশগুলোর চেয়েও বাংলাদেশ এগিয়ে আছে। গলদটা শুধু বাস্তবায়নে।
সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু বলেন, সরকার প্রতিবন্ধীদের জন্য বিভিন্ন এলাকায় বিশেষায়িত স্কুল তৈরি করছে। সরকারি চাকরিতে আলাদা কোটা আছে। হয়তো প্রয়োজনের তুলনায় কম। শেখ হাসিনা সরকার প্রতিবন্ধীবান্ধব। এর আগে প্রতিবন্ধীদের জন্য কেউ বিশেষ পদক্ষেপ বা কার্যক্রম নেয়নি।
কর্মসূচি: বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস উপলক্ষে আজ রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন। এ ছাড়া প্রামাণ্যচিত্র, প্রদর্শনী ও অটিজম আক্রান্ত শিশুদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
মন্তব্য করুন