জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দুর্নীতিবিরোধী ভাষণ ও বক্তব্য সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠ্যবইয়ে কেন অন্তর্ভুক্তির নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর দুর্নীতিবিরোধী ভাষণগুলো (অডিও-ভিডিওসহ) ৩০ দিনের মধ্যে জমা দিতেও দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) আদালত নির্দেশ দিয়েছেন। আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, শিক্ষা সচিব, দুদক চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি মো. শওকত আলী চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ মঙ্গলবার স্বপ্রণোদিত হয়ে এ আদেশ দেন। আগামী ৪ জুন এ রুলের পরবর্তী শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।

দুর্নীতি বন্ধ করতে হলে হার্ডলাইনে যেতে হবে উল্লেখ করে দুদকের উদ্দেশে হাইকোর্ট বলেন, ‘নমনীয়তা দেখিয়ে দুর্নীতি বন্ধ করা যাবে না। এক নোবেল বিজয়ী বলেছেন, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে দুর্নীতির বিষয়ে নমনীয়তা আছে। যদি দুর্নীতি বন্ধ করতে চান, তাহলে তিনটি বিষয় অবশ্যই মানতে হবে। এক. দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর একটি ব্যবস্থা স্থাপন করতে হবে। দুই. আইন-বিধি মান্য করার পাশাপাশি আইন-বিধির প্রয়োগ করতে হবে। তিন. জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ হতে হবে।’

শুধু আইন-বিধি বা রায়-আদেশ দিয়ে দুর্নীতি বন্ধ করা যাবে না উল্লেখ করে হাইকোর্ট বলেন, ‘আগে নিজেদের আইন-বিধি মানতে হবে। যাঁরা সার্ভিসে ঢুকছেন, তাঁরা কী নিয়ে ঢুকছেন আর কী নিয়ে বের হচ্ছেন, তার স্বচ্ছতা থাকতে হবে। জবাবদিহিতা থাকতে হবে সবার। সবাই মিলে ধরতে না পারলে দুর্নীতি বন্ধ হবে না। সরকার, সংবাদমাধ্যম, বিচার বিভাগসহ সব অংশীজন নিয়ে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। একা বিচার বিভাগ বা সরকারের পক্ষে দুর্নীতি বন্ধ করা সম্ভব নয়। দেশকে ভালোবাসলে আইনের শাসন মানতে হবে। দুর্নীতির বিষয়ে থাকতে হবে জিরো টলারেন্স নীতিতে।’

বঙ্গবন্ধুর দুর্নীতি-অর্থ পাচারবিরোধী অবস্থান, ভাষণ-বক্তৃতা তুলে ধরে হাইকোর্ট বলেন, ‘দেশকে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা করতে হলে সোনার মানুষ চাই। তার জন্য সবার ভূমিকা রাখতে হবে। সাংবাদিকরা সমাজের চোখ, তাঁদের ভূমিকা রাখতে হবে। তবে বিচ্ছিন্ন হয়ে দুর্নীতি প্রতিরোধ করা যাবে না। কানাডার বেগমপাড়ায় কাদের বাড়ি, কারা টাকা পাচার করেছে, সুইস ব্যাংকে কারা টাকা রেখেছে, এসব নিয়ে আদেশ দিয়েছি। কিন্তু কোনো আদেশের বাস্তবায়ন নেই।’

এ সময় দুদক আইনজীবী খুরশিদ আলম খান আদেশ বাস্তবায়নের কথা বলেন। পরে আদালত বঙ্গবন্ধুর দুর্নীতি ও অর্থ পাচারবিরোধী বক্তব্য এবং ভাষণ পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্তির জন্য কেন নির্দেশনা দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক। দুদকের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোহাম্মদ খুরশিদ আলম খান।