- বাংলাদেশ
- মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীরের ফাঁসি কার্যকরে বাধা নেই
মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীরের ফাঁসি কার্যকরে বাধা নেই
অধ্যাপক তাহের হত্যা: রিভিউ খারিজের রায় প্রকাশ

অধ্যাপক ড. এস তাহের
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. এস তাহের হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও ড. তাহেরের বাসার কেয়ারটেকার মো. জাহাঙ্গীর আলমের রিভিউ আবেদন খারিজ করে আপিল বিভাগের রায় প্রকাশ হয়েছে। বুধবার প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন ৮ বিচারপতির বেঞ্চ ২১ পৃষ্ঠার এ রায় প্রকাশ করেন। এর ফলে দুই আসামি মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীরের ফাঁসি কার্যকরে আইনগত কোনো বাধা থাকল না। এখন আইন অনুযায়ী তারা শুধুমাত্র রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাওয়ার সুযোগ পাবেন।
রায় কার্যকরের বিষয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় অধ্যাপক তাহেরের মেয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শেগুফতা তাবাসসুম সাংবাদিকদের বলেন, ১৬ বছর ধরে আসামিদের সাজা কার্যকরের অপেক্ষা করছি। অনেক সংগ্রাম করেছি। অনেক দুঃখ-কষ্ট ভোগ করেছি। আশা করছি এই রায় দ্রুত কার্যকর হবে। এই রায় কার্যকর হলেই আমরা পরিপুর্ণভাবে সন্তুষ্ট হব।
আইন অনুযায়ী, সুপ্রিম কোর্ট থেকে এ রায় রাজশাহীর আদালতে পাঠানো হবে। রাজশাহীর আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করবেন।
গত ২ মার্চ অধ্যাপক ড. এস তাহের হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও কেয়ারটেকার জাহাঙ্গীর আলমের রিভিউ আবেদন খারিজ করেন আপিল বিভাগ। পদোন্নতির ক্ষেত্রে আপত্তি করায় রাবি শিক্ষক মো. মহিউদ্দিন সুপরিকল্পিতভাবে সহযোগীদের নিয়ে ১৬ বছর আগে অধ্যাপক তাহেরকে হত্যা করেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল অবন্তি নুরুল ও মোহাম্মদ সাইফুল আলম। অন্যদিকে আসামি পক্ষে ছিলেন আইনজীবী এসএম শাহজাহান, ইমরান এ সিদ্দিকী ও শামছুর রহমান।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক তাহের ২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি নিখোঁজ হন। তার ছেলেমেয়েরা তখন ঢাকার উত্তরায় একটি বাসায় থেকে লেখাপড়া করছিলেন। তার স্ত্রী ও ছেলেমেয়েদের সঙ্গে ছিলেন। ৩ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসার বাইরে ম্যানহোলে তাহেরের মরদেহ পাওয়া যায়।
পরদিন ড. তাহেরের ছেলে সানজিদ আলভী মতিহার থানায় মামলা করেন। তদন্ত কর্মকর্তা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের তৎকালীন উপপরিদর্শক আহসানুল কবির ২০০৭ সালের ১৮ মার্চ ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন।
এতে তাহেরের বিভাগীয় সহকর্মী মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, রাবি শাখা ছাত্রশিবিরের তৎকালীন সভাপতি মাহবুবুল আলম সালেহী, তাহেরের বাসভবনের তত্ত্বাবধায়ক জাহাঙ্গীর, জাহাঙ্গীরের ভাই ও ছাত্রশিবিরের কর্মী আবদুস সালাম, তাদের (জাহাঙ্গীর ও আবদুস সালাম) বাবা আজিমুদ্দীন ও সালামের আত্মীয় নাজমুলকে অভিযুক্ত করা হয়।
সাক্ষ্যপ্রমাণ ও বিচারের বিভিন্ন পর্যায়ে উঠে আসে বিভাগে পদোন্নতি নিয়ে অসন্তোষ থেকে মিয়া মহিউদ্দিন এই হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করেন। খুনিরা ড. তাহেরকে বাসায় হত্যা করে নর্দমায় মরদেহ ঢুকিয়ে রাখেন। গ্রেপ্তার হওয়ার পর জাহাঙ্গীর, নাজমুল ও সালাম আদালতে ১৬৪ ধারায় দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেছিলেন, মহিউদ্দিন ও সালেহী তাদের কম্পিউটার, টাকা-পয়সা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে তাহেরকে হত্যা করার কাজে লাগান। তবে মিয়া মহিউদ্দিন আদালতে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছিলেন। কিন্তু পরে পুলিশের তদন্তে উঠে আসে, তখনকার সহযোগী অধ্যাপক মিয়া মহিউদ্দিন পদোন্নতি পেতে বিভাগে আবেদন করেছিলেন। পদোন্নতির ওই কমিটিতে ড. তাহেরও ছিলেন।
তিনি মহিউদ্দিনের কয়েকটি প্রতারণা প্রাথমিকভাবে ধরে ফেলেন। তদন্ত কমিটির মাধ্যমে পরে এই সব প্রতারণা প্রমাণিত হয়। আর এসব ক্ষোভ থেকেই মহিউদ্দিন হত্যকাণ্ড ঘটান।
নৃশংস এই হত্যা মামলায় ৩৯ জনের সাক্ষ্য জেরা নিয়ে ২০০৮ সালের ২২ মে রায় দেন রাজশাহীর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল। রায়ে মিয়া মহিউদ্দিন, জাহাঙ্গীর, সালাম ও নাজমুলকে মৃত্যুদণ্ড এবং সালেহী ও আজিমুদ্দিন মুন্সীকে খালাস দেওয়া হয়। এরপর দণ্ডিতদের মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য রায়সহ মামলার যাবতীয় নথি পাঠানো হয় হাইকোর্টে, যা ডেথ রেফারেন্স নামে পরিচিত।
অন্যদিকে খালাস চেয়ে রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন আসামিরা। পরে ২০১৩ সালের ২১ এপ্রিল মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিলের শুনানি নিয়ে রায় দেন হাইকোর্ট।
রায়ে ড. তাহেরের সহকর্মী ড. মিয়া মো. মহিউদ্দিন এবং ড. তাহেরের বাসার তত্ত্বাবধায়ক মো. জাহাঙ্গীর আলমের মৃত্যুদণ্ড বহাল এবং আব্দুস সালাম ও নাজমুলের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন দেওয়া হয়।
পরে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল ও জেল আপিল করেন আসামিরা। অন্যদিকে হাইকোর্টের রায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের সাজা বাড়াতে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। এরই ধারাবাহিকতায় উভয়পক্ষের আবেদনের শুনানি নিয়ে গত বছরের ৫ এপ্রিল রায় দেন আপিল বিভাগ। পরে ওই রায় রিভিউ চেয়ে আবেদন করে আসামিপক্ষ, যা ২ মার্চ খারিজ করা হয়।
মন্তব্য করুন