ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ এবং সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক এ এস এম আমানুল্লাহর বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক সংগঠন।

এক বিবৃতিতে তারা বলেছেন, এটি বিদ্যায়তনিক স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ন করেছে। বুধবার গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে ভার্চুয়ালি দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫১ জন শিক্ষক স্বাক্ষর করেছেন।  

বিবৃতিতে তারা বলেন, অধ্যাপক ইমতিয়াজ বইয়ে ভুল তথ্য দিয়ে থাকলে সঠিক তথ্যসমৃদ্ধ ঐতিহাসিক রচনাই হতে পারে তার প্রতি জবাব। থিসিস ও পাল্টা থিসিসের মাধ্যমে ঐতিহাসিক সত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। এ ক্ষেত্রে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেওয়া একাডেমিক প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিষদের কাজ হতে পারে না। ঘটনাটির ক্ষেত্রে কেবল সহকর্মীকে শাস্তিই দেওয়া হয়নি। তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। আমাদের মনে প্রশ্ন জাগে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কি সরকারের পাহারাদার?

ফেসবুকে পাঠ্যপুস্তকের সমালোচনা করায় অধ্যাপক আমানুল্লাহর কাছ থেকে মুচলেকা নেওয়ার ঘটনা উল্লেখ করে বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ঘটনাটিতে যদি কিছু হয়ে থাকে, তবে সরকারের ’ভাবমূর্তি’ ক্ষুণ্ণ হয়ে থাকতে পারে। বিক্ষুব্ধ পক্ষের হয়ে উপযাচকের মতো সহকর্মীর কাছ থেকে মুচলেকা আদায় দেখে মনে হয়, বিশ্ববিদ্যালয় যেন পুলিশি প্রতিষ্ঠান হবার দিকে এগোচ্ছে।

তারা আরও বলেন, বিশেষত উভয় ক্ষেত্রে সরকারকে সাক্ষী মানা একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানকে মানায় না। কয়েকদিন আগেই একটি দৈনিকের একটি প্রতিবেদনকে ঘিরে পত্রিকাটির বিরুদ্ধে শাস্তির দাবি জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নেতারা বিবৃতি প্রদান করেছেন। উপাচার্য মহোদয়ও রাজপথে একই দাবি জানিয়েছেন। অথচ প্রতিবেদককে যে রাতের আঁধারে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, ২০ ঘণ্টা গুম করে রাখা হয়েছে, সে বিষয়ে তাদের কোনো বক্তব্য ছিল না।

তারা উল্লেখ করেন, এ ধরনের ঘটনায় সমাজে বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা জন্ম নিচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সবসময় ক্ষমতা কাঠামোকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে এসেছে। অথচ সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনাকারী শিক্ষক নেতৃবৃন্দ যেন সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য আগ বাড়িয়ে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। সর্বজনের করে পরিচালিত বিশ্ববিদ্যালয় দেশের সকল নাগরিকের কাছে দায়বদ্ধ। ক্ষমতাবানদের পক্ষে সহকর্মীদের শাস্তি দেওয়া নয়, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একাডেমিক স্বাধীনতা রক্ষা করাই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব।    

সম্প্রতি অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ রচিত 'হিস্টোরাইজিং ১৯৭১ জেনোসাইড: স্টেট ভার্সাস পারসন' শীর্ষক গ্রন্থে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অবমাননা এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির’ দায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই দায়িত্ব থেকে তাকে অব্যহতি দেওয়া হয়। এ ছাড়া তাকে ভবিষ্যতে অ্যাকাডেমিক কাজে নিষিদ্ধ করা হয়।

বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীরা হলেন, ঢাবি শিক্ষক অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন খান, মো. আবদুল মান্নান, মোহাম্মদ আজম, কাজী মারুফুল ইসলাম, গীতি আরা নাসরীন, রৌবায়েত ফেরদৌস, কামরুল হাসান মামুন, সামিনা লুৎফা, মোশাহিদা সুলতানা, তাসনীম সিরাজ মাহবুব, রুশাদ ফরিদী, খোরশেদ আলম, কাজলী সেহরীন ইসলাম ও মজিবুর রহমান।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নাসির উদ্দিন আহমদ, নূর ই মকবুল, সৌম্য সরকার; চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সায়মা আলম, আর রাজী, মাইদুল ইসলাম; রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আ-আল মামুন, সৌভিক রেজা, কাজী মামুন হায়দার, কাজী শুসমিন আফসানা, হাবিব জাকারিয়া, কনক আমিরুল ইসলাম, সুস্মিতা চক্রবর্তী; জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাঈদ ফেরদৌস, পারভীন জলী, মির্জা তাসলিমা সুলতানা, মাহমুদুল সুমন ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবুল ফজল।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় গোপালগঞ্জের শিক্ষক মো. মিজানুর রহমান, শামীমা আক্তার, আরাফাত রহমান, আরিফুজ্জামান রাজীব, সুকান্ত বিশ্বাস, জাকিয়া সুলতানা মুক্তা; বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ প্রফেশনালসের শিক্ষক তাসমিয়াহ তাবাসসুম সাদিয়া।

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের মিম আরাফাত মানব, মঈন জালাল চৌধুরী, নির্ণয় ইসলাম, মীর রিফাত উস সালেহীন; যুক্তরাষ্ট্রের বার্ড কলেজের ভিজিটিং অধ্যাপক ফাহমিদুল হক, নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের দীনা সিদ্দিকী, ইউনিভার্সিটি অফ অসলোর পোস্ট ডক্টরাল রিসার্চার মোবাশ্বার হাসান, ইউনিভার্সিটি অব নিউক্যাসল অস্ট্রেলিয়ার গবেষণা সহযোগী আশীক মোহাম্মদ শিমুল, লন্ডন স্কুল অব ইকনমিক্স এন্ড পলিটিক্সের ভিজিটিং অধ্যাপক স্বপন আদনান, গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের মনিরা শারমিন, বাংলাদেশ আর্মি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজির আলমগীর মোহাম্মদ।