জাহানারা ইমাম (৩ মে ১৯২৯ - ২৬ জুন ১৯৯৪) একাধারে কথাসাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ ও একাত্তরের ঘাতক দালাল বিরোধী আন্দোলনের নেত্রী এবং মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্তদের যথাযথ বিচারের দাবিতে ২০১৩ সালে গড়ে ওঠা আন্দোলন ‘গণজাগরণের’ অন্যতম প্রেরণা।
তাঁর ডাকনাম জুড়ু। জন্ম পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদে বড়ঞা থানার অন্তর্ভুক্ত সুন্দরপুর গ্রামে রক্ষণশীল বাঙালি মুসলমান পরিবারে। পিতা সৈয়দ আবদুল আলী। মাতা সৈয়দা হামিদা বেগম। পিতা সৈয়দ আবদুল আলী ছিলেন একজন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট।
জাহানারা ইমাম মাধ্যমিক পাস করেন ১৯৪২ সালে। ১৯৪৪ সালে রংপুর কারমাইকেল কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাসের পর ’৪৫ সালে ভর্তি হন কলকাতায়, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ লেডি ব্রেবোর্ন কলেজে। ১৯৪৭ সালে স্নাতক হন। তাঁর স্বামী বিখ্যাত স্থপতি শরিফুল আলম ইমাম।
একাত্তরে জাহানারা ইমামের জ্যেষ্ঠ পুত্র শাফী ইমাম রুমী দেশের মুক্তিসংগ্রামে অংশগ্রহণ করে একাধিক সফল গেরিলা অভিযান চালান, পরবর্তী সময়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার ও শহীদ হন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তাঁর স্বামী মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী শরীফ ইমামও মৃত্যুবরণ করেন। বাংলাদেশ জয়লাভের পর রুমীর বন্ধুরা মা জাহানারা ইমামকে সব মুক্তিযোদ্ধার মা হিসেবে বরণ করে নেন এবং জাহানারা ইমাম শহীদ জননীর মর্যাদায় ভূষিত হন।
তাঁর রচিত শিশুসাহিত্য– গজকচ্ছপ (১৯৬৭), সাতটি তারার ঝিকিমিকি (১৯৭৩), বিদায় দে মা ঘুরে আসি (১৯৮৯)। তাঁর ব্যক্তিগত দিনলিপি ‘একাত্তরের দিনগুলি’ যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে মহান মুক্তিযুদ্ধের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ দলিলগুলোর একটি বলে গণ্য।

একাত্তরের দিনগুলির অংশবিশেষ পত্রস্থ হলো–

৫ মে, বৃহস্পতিবার ১৯৭১
রুমী আগামীকাল রওনা হবে। ওর প্যান্টের কোমরের কাছে ভেতর দিকের মুড়ির সেলাই খুলে সেখানে কয়েকটা একশ টাকার নোট লম্বালম্বি ভাঁজ করে রেখে আবার মুড়ি সেলাই করে দিলাম। পকেট ওয়ালেটে শ দুয়েকের বেশি রাখবে না, কারণ পথে খানসেনারা হাতিয়ে নিতে পারে।
কাপড়-জামা রাখার জন্য রুমী সঙ্গে নিচ্ছে একটা ছোট আকারের এয়ারব্যাগ। তাতে দু’সেট কাটা কাপড়, তোয়ালে, সাবান, স্যান্ডেল আর দুটো বই– জীবনানন্দের শ্রেষ্ঠ কবিতা ও সুকান্ত সমগ্র।
যে বন্ধু দু’জনের সঙ্গে যাবে, তাদের নাম অবশেষে বলেছে রুমী; মধু আর শিরাত। সেই সঙ্গে এটাও বলেছে যে নাম দুটো কাল্পনিক।
রাতে শোবার সময় রুমী বলল, আম্মা আজকে একটু বেশি সময় মাথা বিলি করে দিতে হবে কিন্তু।
জামী বলল, মা, আজ আর আমার মাথা বিলি করার দরকার নেই। ওই সময়টাও তুমি ভাইয়াকেই দাও।
ছোট বয়স থেকে ঘুমোবার সময় দু’ভাইয়ের মাথার চুলে হাত বুলিয়ে দিতে হয়। মাঝে মাঝে এ নিয়ে দু’ভাইয়ে ঝগড়াঝাটিও বাধে। রুমী বলে, আম্মা তুমি জামীর কাছে বেশিক্ষণ থাকচ্ছ। জামী বলে, মা তুমি ভাইয়ার মাথা বেশি সময় বিলি দিচ্ছ।
আমি রুমীর মাথার চুলে বিলি কেটে দিতে লাগলাম। রুমী একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি গানটার সুরে আস্তে আস্তে শিস দিতে লাগল।

প্রশ্ন

১. জাহানারা ইমামের ডাকনাম কী?
২. তিনি কোন কলেজ থেকে স্নাতক হন?
৩. ‘সাতটি তারার ঝিকিমিকি’ কোন ধরনের বই?

কুইজ ৯৫–এর উত্তর

১. চিত্তপ্রিয় ঘোষ
২. রবীন্দ্রবিষয়ক গ্রন্থ
৩. সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার

গত সংখ্যার বিজয়ী

উম্মে হাবিবা
হাইমচর, চাঁদপুর

আবদুল্লাহ সরকার সিয়াম
বাঘিয়া, মানিকগঞ্জ

নিয়ম

পাঠক, কুইজে অংশ নিতে আপনার উত্তর পাঠিয়ে দিন সোমবারের মধ্যে কালের খেয়ার ঠিকানায়। পরবর্তী কুইজে প্রথম তিন বিজয়ীর নাম প্রকাশ করা হবে। বিজয়ীর ঠিকানায় পৌঁছে যাবে পুরস্কার।