- বাংলাদেশ
- অধ্যাপককে পিটিয়ে নিয়োগে স্বাক্ষর নিলেন চেয়ারম্যান
অধ্যাপককে পিটিয়ে নিয়োগে স্বাক্ষর নিলেন চেয়ারম্যান

পছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগের সুপারিশ না করায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষককে পিটিয়ে আহত করেছেন খুলনার কয়রা উপজেলার এক ইউপি চেয়ারম্যান। এমনকি নির্যাতনের পর আটকে রেখে নিয়োগের সুপারিশে স্বাক্ষর করিয়ে নেওয়া হয়েছে। আহত জবির ইসলামিক স্টাডিজের অধ্যাপক নজরুল ইসলাম এখন খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
জানা যায়, শুক্রবার কয়রা উপজেলার উত্তরচক কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ পদে নিয়োগে শিক্ষক প্রতিনিধি ছিলেন এই অধ্যাপক। মহারাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ ওই অধ্যাপককে তাঁর বাড়িতে আটকে রেখে মারধরের পর এ কাজ করতে বাধ্য করেছেন বলে অভিযোগ ওই শিক্ষকের।
শুক্রবার রাতে চেয়ারম্যানের মারধরে অচেতন হয়ে পড়লে প্রথমে ওই অধ্যাপককে স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে পরে তাঁকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। মারধরের কারণে ওই শিক্ষকের ডান হাতের দুটি আঙুল বাঁকা হয়ে গেছে।
চিকিৎসাধীন অধ্যাপক নজরুল ইসলাম জানান, কয়রা উপজেলার উত্তরচক কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ নিয়োগ পরীক্ষার জন্য তিনি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। ওই পদের জন্য লিখিত পরীক্ষায় মোট ৬ জন প্রার্থী অংশ নেন। কিন্তু কেউই লিখিত পরীক্ষায় পাস করতে পারেননি। পরীক্ষা শেষে মাদ্রাসা ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদ তাঁর পছন্দের প্রার্থী ওই মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ মাসুদুর রহমানকে পাস করিয়ে নিয়োগ দেওয়ার জন্য প্রথমে অনুরোধ করেন। রাজি না হওয়ায় তিনি অনৈতিক সুবিধার প্রস্তাব দেন। এতেও রাজি না হয়ে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক জিয়াউল আহসানের গাড়িতে করে খুলনার উদ্দেশ রওনা দেন তিনি।
ওই গাড়িতে ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদও ছিলেন। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালকের গাড়ি চেয়ারম্যানের বাড়ির সামনে পৌঁছায়। সেখানে আগে থেকেই ২০-২৫ জন লোক অবস্থান করছিলেন। গাড়ি থামার পর চেয়ারম্যান প্রথমে তাঁকে মারধর করে মোবাইল ফোন কেড়ে নেন। পরে তাঁর লোকেরা গাড়ি থেকে নামিয়ে বাড়ির একটি কক্ষে আটকে রেখে বেধড়ক মারধর করেন। একপর্যায়ে তিনি অচেতন হয়ে পড়লে স্থানীয় একজন চিকিৎসককে দিয়ে চিকিৎসা করান। পরে তিনি জ্ঞান ফিরে পেলে জোর করে নিয়োগের সুপারিশে স্বাক্ষর নেওয়া হয়। এ সময় তাঁদের মারধরে আবারও জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন তিনি। জ্ঞান ফিরে পেয়ে নিজেকে কয়রা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিছানায় দেখতে পান তিনি।
জবির এই অধ্যাপক আরও বলেন, ‘আমাকে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে গাড়ি থেকে নামানোর সময় ডিজির প্রতিনিধি জিয়াউল আহসান গাড়িতেই ছিলেন। কিন্তু তিনি কোনো কথা বলেননি। পরে আমাকে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা আটকে রেখে অমানবিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। মারধরে আমার ডান হাতের আঙুল অবশ হয়ে যায়। এ সময় তাঁরা প্রায় এক ঘণ্টা বরফ ঘষে আঙুল সচল করে পাঁচটি স্থানে স্বাক্ষর করিয়ে নেন।’
জানতে চাইলে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক জিয়াউল আহসান বলেন, ‘আমি গাড়ির সামনের সিটে ছিলাম। এ জন্য পেছনে কি হয়েছে বুঝতে পারিনি। তবে সভাপতির সঙ্গে অধ্যাপক নজরুলের সামান্য কথাকাটাকাটি শুনতে পেয়েছিলাম। পরে তাঁরা দু’জনই গাড়ি থেকে নেমে যান। ঢাকায় ফিরে শুনতে পেয়েছি তাঁকে মারধর করা হয়েছে।’
কয়রা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক সুজিত বৈদ্য বলেন, ওই শিক্ষকের চিকিৎসার জন্য আমাকে প্রথমে চেয়ারম্যানের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাঁর অবস্থা দেখে দ্রুত হাসপাতালে আনার পরামর্শ দিলে তাঁরা একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে পাঠান। তাঁর শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এ অবস্থায় তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য খুমেক হাসপাতালে পাঠানো হয়।
জানতে চাইলে মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ ঘটনা অস্বীকার করেন এবং পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, অধ্যাপক নজরুল ইসলাম আমার কাছে অনৈতিক সুবিধা দাবি করেন। না পাওয়ায় তিনি এসব ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলেছেন। আমি অথবা আমার লোকজন কেউ তাঁকে মারধর করেননি।
কয়রা থানার ওসি এবিএম এস দোহা বলেন, খবর পেয়ে কয়রা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে আহত অবস্থায় ওই অধ্যাপককে দেখতে পাই। তিনি আমার কাছে সহযোগিতা চাইলে তাঁকে পুলিশ পাহারায় খুলনার হাসপাতালে পাঠানো হয়।
এর আগেও এই ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদ তাঁর ইউনিয়ন পরিষদে কর্মরত সচিব ইকবাল হোসেনকে বেধড়ক মারধর করেন। সে ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ইউপি সচিব সংগঠনের ব্যানারে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়। পরে ইউপি সচিব চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন। সে মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
মন্তব্য করুন