- বাংলাদেশ
- তিন কর্মচারী নিয়োগে ঘুষ ৩০ লাখ টাকা!
তিন কর্মচারী নিয়োগে ঘুষ ৩০ লাখ টাকা!

খেজুরতলা পাটিকাবাড়ি মাধ্যমিক বিদ্যালয়
কুষ্টিয়ার একটি বিদ্যালয়ে তিনটি পদে কর্মচারী নিয়োগে সভাপতি-প্রধান শিক্ষকসহ পরিচালনা পর্ষদের সদস্যের বিরুদ্ধে প্রায় ৩০ লাখ টাকার বেশি ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
নিয়োগবঞ্চিত চাকরিপ্রত্যাশী, এলাকাবাসী ও স্কুলের কয়েকজন শিক্ষক বিষয়টি জানিয়েছেন। প্রতিষ্ঠানটির নাম খেজুরতলা পাটিকাবাড়ি মাধ্যমিক বিদ্যালয়। কুষ্টিয়া সদর উপজেলার পাটিকাবাড়ি ইউনিয়নে এর অবস্থান।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বিদ্যালয়টির তিনটি পদে নিয়োগ বাণিজ্যের পেছনে মূলত বিদ্যালয়ের সভাপতি সরফুদ্দিন মানিক, প্রধান শিক্ষক সালেহিন আহমেদ ও পরিচালনা পর্ষদের বিদ্যোৎসাহী সদস্য সফর উদ্দিনের হাত আছে। তাঁরা প্রতিটি পদের জন্য ৯ থেকে ১০ লাখ টাকা নিয়ে নিয়োগ দিয়েছেন।
এলাকা ঘুরে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিদ্যালয়টিতে আয়া, পরিচ্ছন্নতা কর্মী ও নৈশপ্রহরী পদে নিয়োগের জন্য কয়েক মাস আগে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। গত এপ্রিল মাসের শেষের দিকে নিয়োগ চূড়ান্ত করা হয়। তিনটি পদের বিপরীতে আবেদন করেন ১০ জনের বেশি। এর মধ্যে আয়া পদের জন্য আবেদন পড়ে পাঁচটি।
পাটিকাবাড়ি এলাকার দরিদ্র হোসেন আলী জানান, তাঁর পুত্রবধূ টিনা খাতুন আয়া পদের জন্য আবেদন করেন। কিন্তু নিয়োগ দেওয়ার জন্য স্থানীয় কয়েকজন নেতা কয়েক লাখ টাকা দাবি করেন। তিনি টাকা দিতে পারবেন না বলে জানান। বেশি টাকা দেওয়ায় পাটিকাবাড়ি এলাকার সাজেদা খাতুন নামের এক নারীকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
হোসেন আলীর অভিযোগ, এ বিদ্যালয়ে ২০১৩ সাল থেকে যতগুলো পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, সবগুলোতেই বাণিজ্য হয়েছে।
এলাকার এক ভূমিহীন ব্যক্তি সাইফুল ইসলামের ভাষ্য– চাকরি দেওয়ার কথা বলে সভাপতি মানিক, প্রধান শিক্ষক সালেহিন ও সাবেক চেয়ারম্যান সফর উদ্দিন তাঁকে দিয়ে স্কুলে পরিচ্ছন্নতা কর্মীর কাজ করাতেন। এর জন্য তাঁকে কোনো টাকা দেওয়া হতো না। কিন্তু চাকরিতে নিয়োগ দেওয়ার সময় তাঁরা ১০ লাখ টাকা দাবি করেন। তিনি ৩ লাখ টাকা দিতে চাইলে তাঁরা রাজি হন। কুষ্টিয়ায় পরীক্ষা দিতে নিয়ে যাওয়ার পর মানিক বলেন তাঁর (সাইফুল) চাকরি হবে না। এ পদে ১০ লাখ টাকায় আনিস উদ্দিন নামের একজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলেও তিনি জানান। আনিস উদ্দিনের বাড়ি মিরপুর উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের কুর্শা গ্রামে।
এ ছাড়া নৈশপ্রহরী পদে পাটিকাবাড়ি এলাকার রাজু আহমেদ নামে একজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়।
তিন পদে নিয়োগ পাওয়া সাজেদা খাতুন, আনিস উদ্দিন ও রাজু আহমেদের কাছে ঘুষ দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইতে তাঁরা কোনো বক্তব্য দিতে চাননি।
নিয়োগের ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক সালেহিন আহমেদ বলেন, সভাপতি ও কয়েকজন মিলে লোকজন চূড়ান্ত করেছেন। তাঁর কোনো ক্ষমতা নেই।
সভাপতি সরফুদ্দিন মানিক প্রধান শিক্ষকের ওপর দায় চাপান। তিনি বলেন, প্রধান শিক্ষক তাঁকে জানান, স্কুলে নিয়োগ আছে। প্রধান শিক্ষককে সব দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে বলেন তিনি। তিনিই (প্রধান শিক্ষক) সব করেছেন।
পরিচালনা পর্ষদের বিদ্যোৎসাহী সদস্য সফর উদ্দিন নিয়োগ বাণিজ্যের বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে দাবি করেন।
মন্তব্য করুন